উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকেরা। ছবি: এক্স।
দিন গুনতে গুনতে কেটে যাচ্ছে সময়। রাত পেরিয়ে ভোর হচ্ছে। আবার রাত নামছে। উত্তরকাশীর বদ্ধ সুড়ঙ্গে তার কোনও প্রভাব পড়ছে না। আটকে থাকা ৪১ জন শ্রমিকের কাছে দিন, রাত সমান হয়ে গিয়েছে। গুলিয়ে যাচ্ছে সময়ের হিসাবও।
রবিবার সকালে সুড়ঙ্গ আবার খোঁড়া শুরু হয়েছে। উপর দিক থেকে বিকল্প রাস্তা খুঁড়ছেন উদ্ধারকারীরা। যন্ত্রের মাধ্যমেই সেই খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছে।
সুড়ঙ্গ থেকে বাইরে বেরিয়ে আসার স্বপ্ন নিয়ে রোজ ঘুমোতে যাচ্ছেন শ্রমিকেরা। কিন্তু স্বপ্নের সেই দিন বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে। একেবারে দোরগোড়ায় এসেও থামতে হয়েছে উদ্ধারকারীদের। সুড়ঙ্গ থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে ভেঙে গিয়েছে খননযন্ত্র। ফলে আরও মাসখানেক সুড়ঙ্গেই থাকতে হতে পারে ওই শ্রমিকদের। এই পরিস্থিতিতে রোজকার চিন্তা কাটিয়ে উঠতে, চাপমুক্ত হতে সুড়ঙ্গে বিভিন্ন খেলা খেলছেন শ্রমিকেরা।
তাঁদের কাছে মোবাইল ফোন পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সুড়ঙ্গের গভীরে সিগ্ন্যাল না মিললেও মোবাইলে ‘গেম’ খেলাই যায়। বিভিন্ন ‘গেম’ খেলে আপাতত সময় কাটাচ্ছেন ৪১ শ্রমিক। এ ছাড়া, তাঁদের জন্য সুড়ঙ্গে পাঠানো হয়েছে লুডোর বোর্ড। তাতে সাধারণ লুডো, সাপলুডো খেলছেন শ্রমিকেরা। এমনকি, তাস খেলার আসরও বসছে প্রায় প্রতি দিনই। খেলার মধ্যে ডুবে থেকে বাস্তবের জীবন-মরণ চিন্তা কিছুটা কমছে।
খননযন্ত্র খারাপ হয়ে যাওয়ায় শাবল-গাঁইতি নিয়ে খোঁড়া হবে সুড়ঙ্গের বাকি অংশ। সেই কারণেই সময় আগের চেয়ে অনেক বেশি লাগবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। বড়দিনের মধ্যে ৪১ জনকে বাড়ি ফেরানো হবে, আশাবাদী কর্তৃপক্ষ। তবে যদি হাত দিয়ে খোঁড়ার কাজেও আবার বাধা আসে, সে ক্ষেত্রে শ্রমিকদের উদ্ধারের জন্য উপরের রাস্তা ব্যবহার করা হবে।
পাইপের মাধ্যমে প্রতি দিন খাবার, জল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে শ্রমিকদের কাছে। পরিজনদের সঙ্গে কথাও বলছেন তাঁরা। কোনও কোনও শ্রমিদের উদ্বিগ্ন পরিজনেরা সুড়ঙ্গের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে থেকে গিয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে সরতে চাইছেন না তাঁরা। যত দিন যাচ্ছে, উদ্বেগের পরিমাণ বাড়ছে। উদ্ধারকাজে দেরি হওয়া নিয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করছেন কেউ কেউ।
তবে শ্রমিকদের উদ্ধারে কোনও ভাবেই তাড়াহুড়ো করা যাবে না বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান আর্নল্ড ডিক্স। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের অগ্রাধিকার হল শ্রমিকদের সকলকে অক্ষত অবস্থায় বাড়িতে ফেরানো। তাতে সময় লাগবে।