কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
প্রকল্পটির নাম উদয়। পুরো কথাটা উজ্জ্বল ডিসকম অ্যাসিওরেন্স যোজনা। কেন্দ্রীয় বিদ্যুত্ মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছেন এই প্রকল্প মেনে নেওয়ার জন্য। পীযূষ গোয়েল এক সাক্ষাত্কারে এই প্রতিবেদককে বলেন, “অধিকাংশ রাজ্য এই প্রকল্প মেনে নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখনও মউ স্বাক্ষর করেনি। এই প্রকল্প মেনে নিলে বিদ্যুতের দাম রাজ্যে কম করা সম্ভব হবে। আর বিদ্যুতের দাম কমলে সাধারণ মানুষেরও সুবিধা হবে”। গোয়েল আরও জানান, এই প্রকল্প মেনে নিলে রাজ্য বিদ্যুত্ পর্ষদ এবং সিইএসসি কেন্দ্রের কাছ থেকে একটা মোটা অঙ্কের অর্থ সাহায্য পাবে। সরকারি এবং বেসরকারি যে কোনও বিদ্যুত্ সংস্থা বাজারে বন্ড ছেড়ে টাকা তুলতে পারবে।
তা কেন্দ্র যখন আর্থিক সাহায্য করতেই চাইছে, তা হলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তি করার কারণটা কী? আপত্তি নয়, আসলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রকল্পটি আগে ভাল করে বোঝার জন্য সময় চেয়েছেন। কারণ, এক দিকে যেমন কেন্দ্রের অর্থ সাহায্য পাওয়া যাবে, অন্য দিকে বিদ্যুত্ সংস্থাগুলি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোরও আরও বেশি সুযোগ পেতে পারে। এই ভাল-মন্দ সব দিক বোঝার দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন তাঁর বিদ্যুত্ মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে। ২০০৩ সালে অটল বিহারি বাজপেয়ীর বিদ্যুত্ মন্ত্রী সুরেশ প্রভুও এই ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন।
মঙ্গলবার প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যসচিব ও বিদ্যুত্সচিবদের নিয়ে কেন্দ্রীয় বিদ্যুত্সচিবদের দু’দিন ব্যাপী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে দিল্লিতে। এই সম্মেলন উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব এবং বিদ্যুত্সচিব দিল্লি আসছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সোমবার রাতে দিল্লি আসছেন। আবার সোমবার সকালে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র দিল্লি আসছেন শিল্প সম্মেলন উপলক্ষে। পীষূষ গোয়েল বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর এ বারের দিল্লি সফরে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব। আলোচনা হবে মুখ্যসচিব ও বিদ্যুত্সচিবের সঙ্গেও। আশা করছি পশ্চিমবঙ্গে সরকার বুঝতে পারবে এ প্রকল্পে রাজ্যেরই লাভ।” বিদ্যুত্ এবং সুদের খরচ যদি কেন্দ্র অনেকটা দিয়ে দেয় তা হলে উল্টে বিদ্যুতের দাম রাজ্যস্তরে কমিয়ে ফেলা সম্ভব হবে।
উদয় প্রকল্পটা আসলে কী এবং কেনই বা নরেন্দ্র মোদী সরকার এ ব্যাপারে এত জোর দিচ্ছে? কারণ হল, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুত্ পর্ষদের বকেয়া ঋণ এখন অনেক। কোল ইন্ডিয়া যেমন জানিয়ে দিয়েছে, তারা রাজ্য বিদ্যুত্ পর্ষদের কাছে থেকে এখনই বকেয়া ১ হাজার কোটি টাকা চায়। অন্য দিকে, ডিভিসি-ও ঝাড়খন্ড সরকারের কাছ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা চেয়ে বসেছে। অথচ রাজ্য বিদ্যুত পর্ষদগুলোর এত টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আসলে রাজ্য বিদ্যুত্ পর্ষদগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে যাতে তারা আরও বেশি সক্রিয় হয় উত্পাদনের প্রশ্নে। কেন্দ্র জানাচ্ছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুত্ সংস্থাগুলোর বকেয়া ঋণের ৭৫ শতাংশের মধ্যে ৫০ শতাংশ তারা কিস্তির ভিত্তিতে চুকিয়ে দেবে। বাকি ২৫ শতাংশ ঋণ বাজারে বন্ড ছেড়ে তুলে নিতে পারবে বিদ্যুত্ সংস্থাগুলো। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুত্ পর্ষদ কেন্দ্রে কাছ থেকে বছরে কার্যত ৩০০ কোটি টাকা পাবে এবং আর সিইএসসি পাবে ৩০-৪০ কোটি টাকা। কেন্দ্রের মতে এই অর্থসাহায্য পেলে রাজ্য বিদ্যুত্ পর্ষদ আরও শক্তিশালী হবে। তখন তারা বিদ্যুতের দাম বাড়ালেও মানুষের উপর চাপ সৃষ্টি হবে না। শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েনকা বলেন, “আমরা কেন্দ্রের এই প্রস্তাবকে সমর্থন করছি। রাজ্য বিদ্যুত্ পর্ষদ কেন্দ্রের কাছ যে পরিমাণ আর্থিক সাহায্য পাবে, তার তুলনায় আমরা অনেক কম পাব। তবু মনে হয় রাজ্য বিদ্যুত্ পরিকাঠামো পুনর্গঠন করার সময় এসেছে।” তবে ওড়িশা সরকারের মত বেশ কিছু সরকার বলেছে, তারা তাদের বিদ্যুত্ বন্টন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ বেসরকারি হাতে তুলে দিয়েছে, তার ফলে তাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ বেসরকারি সংস্থাগুলোর উপর নেই। সুতরাং এই প্রকল্প কার্যকর করতে গেলে পুরোটা রাজ্য সরকার করতে পারবে না। এই কারণে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই উদয় প্রকল্প সংসদে সংশোধন করা হবে। আগামী কিছু দিনের মধ্যেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রকল্পটি নিয়ে আসা হবে এবং মঞ্জুর করা হবে। যাতে বেসরকারি সংস্থাগুলোও এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে আসছেন। আপাতত তাঁর সরকারের অবস্থান হল আরও ভাল করে প্রকল্পটা বোঝা।
আরও খবর...