এনপিআর, এনআরসি ও সিএএ-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বেঙ্গালুরুতে।—ছবি পিটিআই।
এপ্রিলের প্রথম দিন থেকে দেশ জুড়ে শুরু হয়ে যাবে জনগণনা ও জাতীয় জনগণনা পঞ্জি (এনপিআর)-এর তথ্য সংগ্রহের কাজ। সেই কাজে রাজ্যগুলির প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে আগামিকাল দিল্লিতে বৈঠক ডেকেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বৈঠকে কেন্দ্রের প্রতিনিধিত্ব করবেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই ও স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভল্লা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্য রাজ্যের প্রতিনিধিরা ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছেন। তবে নবান্নের একটি সূত্রের খবর, বৈঠকে শুধু জনগণনা নিয়ে আলোচনায় যোগ দিতে পারেন ডাইরেক্টর (সেন্সাস অপারেশন) বিশ্বনাথ।
জনগণনার প্রথম ধাপে দেশের প্রতিটি বাড়ির চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি এনপিআর সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেজিস্ট্রার জেনারেল অ্যান্ড সেন্সাস কমিশনার অব ইন্ডিয়া (আরজিসিসিআই)। প্রতিটি রাজ্যে জনগণনা ও এনপিআর তথ্য সংগ্রহ করবেন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁদের প্রশিক্ষণের কাজের অগ্রগতি, তথ্য সংগ্রহের প্রশ্নে কর্মীদের সচেতনতা কতটা বেড়েছে— সেই প্রস্তুতি বুঝতেই কালকের বৈঠকটি ডাকা হয়েছে। আরজিসিসিআই সূত্রে জানানো হয়েছে, কী ভাবে মানুষকে বুঝিয়ে তাদের ভরসা অর্জন করে কর্মীরা তথ্য সংগ্রহ করবেন, তা যেমন প্রশিক্ষণের একটি অঙ্গ তেমনি এ বারে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমেও তথ্য সংগ্রহ করতে হবে কর্মীদের। মূলত সময় ও অর্থ বাঁচানোর জন্য প্রযুক্তি নির্ভরতা বাড়ানো হয়েছে। মোবাইলের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের প্রশিক্ষণের কাজে রাজ্যগুলির অগ্রগতি কেমন, তার একটি চিত্র কালকের বৈঠকে কেন্দ্রের পাওয়ার কথা।
এক দিকে ১৩০ কোটি দেশবাসীর তথ্য সংগ্রহের প্রস্তুতি, অন্য দিকে কোন কোন রাজ্যের প্রতিনিধি বিরোধিতা সত্ত্বেও কাল শেষ পর্যন্ত এনপিআর সংক্রান্ত বৈঠকে যোগ দিল— সেই চিত্রটি স্পষ্ট হয়ে যেতে চলেছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের কাছে। সেই বুঝে নিজেদের পরবর্তী রণকৌশল তৈরি করবে বলে ঠিক করে রেখেছে শাসক শিবির। কেন না, এনপিআর হল জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-র প্রথম ধাপ— এই যুক্তিতে নিজেদের রাজ্যে এনপিআর হতে দিতে নারাজ পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ কংগ্রেস শাসিত অধিকাংশ রাজ্য। প্রায় ১৩টি বিরোধী রাজ্য এ নিয়ে মৌখিক ভাবে আপত্তি তুললেও, আরজিসিসিআই সূত্রে জানানো হয়েছে, এখনও কোনও রাজ্যের পক্ষ থেকে লিখিত ভাবে আপত্তির কথা তাদের জানানো হয়নি। স্বরাষ্ট্র সূত্রও জানিয়েছে, আগামিকালের বৈঠকেও অধিকাংশ রাজ্য তাদের মুখ্যসচিবদের পাঠানোর পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়ে বৈঠকে যোগ দেবেন বলে নিশ্চিত করেছেন। ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ।
আরও পড়ুন: সন্ত্রাস দমনে কঠোর হতে হবে, বললেন রাওয়ত
গত কালই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন এনপিআর নিয়ে বৈঠকে তিনি প্রতিনিধি পাঠাবেন না। ‘পারলে ওরা সরকার ভেঙে দেখাক’ বলে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। আজও সেই অবস্থানে অনড় রয়েছে নবান্ন। রাজ্য সরকার জানিয়েছে, দিল্লিতে আদমশুমারি এবং এনপিআর বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন না কোনও অফিসার। তবে আজ রাতে দিল্লি আসার কথা রয়েছে মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ-সহ কয়েক জন অফিসারের। তবে তাঁরা ভিন্ন বৈঠকে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছে নবান্ন। স্বরাষ্ট্র দফতরের কোনও অফিসারকে জনগণনা ও এনপিআর সংক্রান্ত বৈঠকে পাঠানো হচ্ছে না। তবে জনগণনার দায়িত্বে থাকা আইএএস অফিসার বিশ্বনাথ কেন্দ্রের ডাকা বৈঠকে যোগ দিতে পারেন। প্রশাসনের একটি অংশ জানাচ্ছে, যে হেতু বিশ্বনাথ এখন আরজিসিসিআই-এর অধীনে রয়েছেন, তাই তাঁকে বৈঠকে যোগ দিতেই হবে। অন্যথায় তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: সেনাকে নিয়ে সরকার গড়ার স্বপ্নে বিজেপি