প্রতীকী ছবি।
একশো দিনের কাজ-সহ গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে সব শর্তই মেনে চলা হবে বলে কেন্দ্রকে প্রতিশ্রুতি দিল রাজ্য সরকার। রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার একশো দিনের কাজ-সহ গ্রামোন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্পের বকেয়া টাকা দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আজ কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। বৈঠক শেষে প্রদীপ বলেন, ‘‘কেন্দ্র বিভিন্ন কারণে প্রথাগত ত্রুটি-বিচ্যুতির কথা বলে রাজ্যকে চিঠি দিয়েছিল। আজ বৈঠকের পরে সব সংশয়ের নিরসন হয়েছে। রাজ্য আগামী দিনে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সব শর্ত মেনে চলার আশ্বাস দিয়েছে। যে ধারায় রাজ্যের বরাদ্দ টাকা আটকে রাখা হয়েছিল, আশা করছি তা-ও এ বার প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।’’
একশো দিনের কাজের ক্ষেত্রে কোথাও-কোথাও যে অনিয়ম হয়েছে, তা প্রকারান্তরে এ দিন স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রীও। তিনি বলেন, ‘‘গত অর্থ বর্ষে রাজ্যে ৩৬ কোটি কর্মদিবস তৈরি হয়েছে। এত বড় প্রকল্পে কিছু ভুল হতেই পারে। যদি ওই ক্ষেত্রে ১ শতাংশ গন্ডগোল হয়, তা হলেই সংখ্যাটি গিয়ে দাঁড়ায় ৩৬ লক্ষে। যা সংখ্যাগত দিক থেকে দেখলে বড় মনে হবে। এ ধরনের ক্ষেত্রে বিরোধী দল বা কেন্দ্রের পাঠানো দল যখনই কোনও ত্রুটি তুলে ধরেছে, তা রাজ্য সরকার দ্রুত শুধরে নিয়েছে।’’
গত ডিসেম্বর মাস থেকে একশো দিনের কাজের ক্ষেত্রে রাজ্যের পাওনা টাকা কেন্দ্র আটকে রেখেছে—অভিযোগ ছিল রাজ্য সরকারের। রাজ্য সরকারের হিসাবে প্রায় ৬,৭৬৪ কোটি পাওনা রয়েছে। অন্য দিকে কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, রোজগার নিশ্চয়তা আইনের ২৭ নম্বর ধারা না মানায় ওই টাকা আটকে দেওয়া হয়েছিল। আজ বৈঠকের পরে প্রদীপ বলেন, ‘‘উভয় পক্ষের সুষ্ঠু আলোচনা হয়েছে। আমাদের মূল অনুরোধ ছিল, ২৭ নম্বর ধারা প্রত্যাহার করে নেওয়া। রাজ্য আগামী দিনে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সব শর্ত মেনে চলার আশ্বাস দিয়েছে।’’ প্রদীপ জানান, টাকা আটকে যাওয়ায় চলতি আর্থিক বছরের (২০২২-২৩) সালে রাজ্যে একশো দিনের কর্মদিবস সৃষ্টির অনুমোদন পাননি তাঁরা। আটকে গিয়েছে গ্রামীণ আবাস যোজনার অনুমোদনের বিষয়টিও। গ্রামীণ সড়ক যোজনার ২২৬ কিলোমিটার কাজও থমকে রয়েছে। ফলে সার্বিক ভাবে গ্রামীণ উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ঘটনাচক্রে, আজ দুই মন্ত্রীর সাক্ষাতের দিনেই একশো দিনের কাজের প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গিরিরাজকে চিঠি দিয়েছেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার গোসাবা ব্লক ও মালদহের চাঁচল (১) ব্লকের উদাহরণ তুলে ধরে শুভেন্দু অভিযোগ করেছেন, ওই দু’টি ব্লকে যত জনসংখ্যা তার চেয়েও অনেক বেশি জব কার্ড বিলি করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, এতে এক দিকে ভুয়ো কর্মসংস্থানের ছবি তুলে ধরার কৌশল যেমন নিয়েছে শাসক দল, তেমনই অধিক সংখ্যায় জব কার্ড বিলি করে আর্থিক দুর্নীতি করার পরিকল্পনা রয়েছে তৃণমূলের। শুভেন্দুর দাবি, বাংলার পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পগুলিতে যে ‘দুর্নীতি হয়েছে’ তার তদন্ত সিবিআই বা অন্য কোনও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে করানো হোক। এক বছর ধরে অর্থ বকেয়া থাকলেও পঞ্চায়েত ভোটের মুখে রাজ্য বিপাকে পড়ে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছে বলে যে বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন তা মানতে চাননি প্রদীপ। তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। আমরা আগেও জট ছাড়ানোর জন্য চিঠি দিয়েছিলাম। আজ বৈঠকের পরে মনে হচ্ছে মেঘ কেটে গিয়েছে।’’