ছবি: সংগৃহীত
ছত্তীসগঢ়ের আদি জনজাতি গোন্ড। তাদেরই এক অংশের নাম ‘বাইসন-হর্ন মারিয়া’। অনেকেই বলেন, এই নাম দেওয়া ইংরেজদের। নামের কারণ, এরা বাইসনের শিং ব্যবহার করতেন প্রচলিত সাজে। যদিও এখন তার বদলে হরিণের শিংও ব্যবহার করা হয়, কিন্তু সেই নাম রয়ে গিয়েছে।
এই জনজাতির মধ্যে তৈরি হওয়া যৌন সম্পর্কের নিয়মগুলিও আজও অনেককে অবাক করে। এই জনজাতির মানুষেরা বিশ্বাস করেন, বিয়ের আগে যৌনতা আবশ্যিক, কারণ এতে যুগলের সম্পর্কের জোর কতটা তা প্রতিষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি, এদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে কোনও সামাজিক বাধা পার করতে হয় না। সঙ্গী, সে নারী হোক বা পুরুষ, যখন খুশি যে কেউ কোনও সম্পর্কে যেতে পারেন বা বেরিয়ে আসতে পারেন, সেই কারণে তাঁকে কেউ বাঁকা চোখে দেখে না।
১৯৩৮ সালে প্রকাশিত ব্রিটিশ আমলা ডাব্লিউভি গ্রিগসনের একটি বইয়ের সূত্র ধরে গোন্ডদের এই অংশের জনজাতিকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। গ্রিগসনের লেখা ‘দ্য মারিয়া গোন্ডস অফ বস্তার’ দীর্ঘ দিন ধরে বিশ্বের নামী বিশ্ববিদ্যালগুলির পাঠ্যক্রমে রয়েছে।। সেই বইকে ধরেই যাচাই করে দেখা গিয়েছে, এখনও সেই সব নিয়ম মেনে চলে এই জনজাতি।
বইয়ে লেখক লিখেছিলেন, এই জনজাতির একটি বিয়ের কথা। যে বিয়ের অনুষ্ঠান চলেছিল দীর্ঘ কয়েক দিন ধরে। বর ও কনের প্রথমে প্রেমের সম্পর্ক আর সেখান থেকেই বিয়ে। কিন্তু এই বিয়ের অনুষ্ঠান চলাকালীন তাঁরা দু’জনেই পৃথক নারী ও পৃথক পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হন। সেই আকর্ষণের অংশ হিসাবে বাইরের দুই সঙ্গীর সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হন তাঁরা। তার পর ফের বিয়ের পিঁড়িতে আসেন। জনজাতির বিশ্বাস, এতে দু’জনেই বুঝতে পারেন, কোথায় তাঁদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সুখ!
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, মুম্বই প্রবাসী এক চিত্রশিল্পীর বাবার কথাও। ওই শিল্পী জানিয়েছেন, তাঁর বাবা এক সময় ওই জনজাতির বসবাসের এলাকায় আমলা হিসাবে কাজ করতেন। সেখানে তিনি দেখেছেন, এঁদের একটি বিশেষ ধরনের উৎসব আছে। যেখানে ঊর্ধ্বাঙ্গ নগ্ন করে পুরুষ ও মহিলারা উল্লাসে মাতেন। সেখানে তাঁরা একে অপরকে নানা শারীরিক বিদ্রুপও করে। কিন্তু তা মাত্রা ছাড়া নয় বা অন্য কারও খারাপ লাগে, এমনও নয়। এখানে সভ্যতার মাপকাঠি একেবারে অন্য। যৌনতার এক স্বাধীনতা এখনও আছে এই জনজাতির মধ্যে।
তবে গবেষকদের ভয়ও আছে। ক্রমে শহুরে সভ্যতা ও বিদেশি পর্যটকদের ভিড় এই জনজাতির মানুষের মনে অন্য রকম প্রভাব ফেলছে। তাঁরা ভয় পাচ্ছেন, যে সামাজিক ন্যায়ের কাঠামোয় তাঁরা চলেন, তা নিয়ে অকারণ বিতর্ক তৈরি হতে পারে। তাই বাইরে থেকে কেউ গেলে সহজে কথা বলতে চান না তাঁরা। গুটিয়ে রাখেন নিজেদের।