এস জয়শঙ্কর। —ফাইল চিত্র।
ইজ়রায়েল-হামাসের মধ্যে চলতি সংঘাতে যুদ্ধবিরতি চেয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে জর্ডনের আনা প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটিতে গরহাজির থেকেছিল ভারত। ভারতের সেই অবস্থান নিয়ে চর্চা শুরু হয় দেশে-বিদেশে। কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির সমালোচনায় সরব হয় কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী দলগুলি। এ বার ভারতের এই ‘অভূতপূর্ব’ অবস্থানের ব্যাখ্যা দিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
রবিবার মধ্যপ্রদেশের ভোপালে একটি অনুষ্ঠানে জয়শঙ্কর জানান, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অবস্থান নেওয়া উচিত। ভারত ‘সন্ত্রাসবাদের বড় ভুক্তভোগী’ বলেও জানান তিনি। জয়শঙ্কর বলেন, “আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিই। কারণ আমরা সন্ত্রাসবাদের বড় ভুক্তভোগী।” সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষায় জোর দিয়ে বিদেশমন্ত্রী বলেন, “যখন সন্ত্রাসবাদ আমাদের ক্ষতি করে, তখন সেটিকে গুরুত্ব দেব, আর অন্যরা সন্ত্রাসবাদের শিকার হলে, সেটাকে গুরুত্ব দেব না— এমন অবস্থান নিলে আমাদের কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবে না।” ভোটদানে বিরত থাকার ব্যাখ্যা হিসাবে নিজের এই মন্তব্যকে তুলে না ধরলেও মনে করা হচ্ছে, প্রকারান্তরে ভারতের ওই অবস্থানের কারণই ব্যাখ্যা করলেন জয়শঙ্কর।
গত শুক্রবার রাষ্ট্রপুঞ্জে মানবিক সহায়তার কারণে গাজ়া ভূখণ্ডে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এনেছিল জর্ডন। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১২০টি সদস্য দেশ। বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ১৪টি দেশের প্রতিনিধিরা। ভারত-সহ ৪৫ সদস্যরাষ্ট্র ভোটদানে বিরত ছিল। বিদেশমন্ত্রক সূত্রে জানা যায়, প্রস্তাবে গত ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েলের উপর প্যালেস্তিনীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলার উল্লেখ না থাকার কারণেই ভারত ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। জর্ডনের ওই প্রস্তাবের সঙ্গে ‘হামাসের আক্রমণের’ প্রসঙ্গ সংযোজনের জন্য একটি সংশোধনী প্রস্তাব এনেছিল কানাডা। ভারতের তরফে সমর্থন করা হলেও সংশোধনী প্রস্তাবটি ভোটাভুটিতে খারিজ হয়ে যায়।
ভারত চিরকালই প্যালেস্টাইন প্রশ্নে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য দেশগুলির তুলনায় বেশি ‘নরম’। ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্তাইন— এই দুই রাষ্ট্রের স্বীকৃতি এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষেই অতীতে সওয়াল করেছে ভারত। সোমবার ‘দ্য হিন্দু’তে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী ভারতের সেই ধারাবাহিক কূটনৈতিক অবস্থানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করেন। বিজেপি শিবিরের অবশ্য দাবি, কূটনৈতিক ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই পদক্ষেপ করছে সরকার।
যদিও অতীতে গাজ়া এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে সেনা অভিযানের সময় অনেক বারই রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের গৃহীত প্রস্তাব উপেক্ষা করেছে ইজ়রায়েল। প্রসঙ্গত, সাধারণ পরিষদে গৃহীত কোনও প্রস্তাব মেনে চলার আইনি বাধ্যবাধকতা নেই রাষ্ট্রপুঞ্জের সদস্য দেশগুলির। তবে বিশ্বের অধিকাংশ দেশই সাধারণ পরিষদের সদস্য হওয়ায় গৃহীত হওয়া প্রস্তাবগুলির কূটনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। সাম্প্রতিক কালে একাধিক বার রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদ এবং নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ভোটভুটিতে অংশ নেয়নি ভারত।