শরদ পওয়ার এবং অজিত পওয়ার
মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন নিয়ে টানাপড়েন চলাকালীন মোদী তাঁকে ‘এক সঙ্গে কাজ করার’ প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলে প্রথম বোমাটা ফাটিয়েছিলেন শরদ পওয়ার। তার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের বোমা ফাটালেন মরাঠা স্ট্রংম্যান। স্বীকার করে নিলেন, ভাইপো অজিত পওয়ারের গতিবিধির উপর নজর রেখেছিলেন তিনি। অজিত যে দেবেন্দ্র ফডণবীসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন, তা তিনি জানতেন বলেও মন্তব্য করেছেন শরদ।
মহারাষ্ট্রে একের পর এক রাজনৈতিক ঘটনাক্রমের ইতি ঘটে বিজেপি বিরোধী জোট সরকার গড়ার পর। কিন্তু এই পর্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঘটনাটি ঘটে অজিত পওয়ারকে নিয়ে বিজেপির দেবেন্দ্র ফডণবীসের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার সময়। এ বার সেই ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার। মঙ্গলবার একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমি জানতাম দেবেন্দ্র ফডণবীস এবং অজিত পওয়ার কথাবার্তা চালাচ্ছে। আমার আশঙ্কা ছিল যে অজিতের এই রাজনৈতিক পদক্ষেপ ভুল হবে।’’ বাস্তবেও অবশ্য তাই হয়েছে। ২৩ নভেম্বর মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে দ্বিতীয় বারের জন্য শপথ গ্রহণ করেছিলেন দেবেন্দ্র ফডণবীস। উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন অজিত পওয়ার। কিন্তু, আশি ঘণ্টার বেশি টেকেনি সেই সরকার। আস্থা ভোটে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের আগেই ২৬ নভেম্বর মুখ থুবড়ে পড়ে ফডণবীস সরকার।
‘বিদ্রোহী’ অজিতকে অবশ্য ঘরে ফিরিয়ে নিয়েছেন এনসিপি প্রধান। কেন অজিতের এমন পদক্ষেপ তার সমর্থনে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে জোট নিয়ে ধীর লয়ে আলোচনা এবং ক্ষমতার বিভাজন নিয়ে ‘দ্বন্দ্ব’ দেখে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন অজিত। তবে দেবেন্দ্রর সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি যে একাবের সরকার গড়ে ফেলবেন, তা নাকি আন্দাজ করতে পারেননি তিনি।
আরও পড়ুন: জামিন মঞ্জুর করল সুপ্রিম কোর্ট, ১০৫ দিন পর মুক্ত পি চিদম্বরম
শুধু অজিতই নয়, মহারাষ্ট্রে বিজেপি এবং শিবসেনার রসায়ন কতটা ফলপ্রসূ হয়ে ওঠে সে দিকেও নজর ছিল শরদের। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা জানতাম, দুই জোট শরিকের (বিজেপি এবং শিবসেনা) মধ্যে প্রচণ্ড মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। ভোটের আগের বোঝাপড়াকে সম্মান জানানো হচ্ছে না, সেটাও জানতাম আমরা। বিষয়টা নিয়ে শিবসেনা খুশি ছিল না। আমরা সে দিকে নজর রাখছিলাম।’’ এর পর অবশ্য মহারাষ্ট্রে যত সময় গড়িয়েছে ততই বিজেপি এবং শিবসেনার মধ্যে ফাটল চওড়া হয়েছে। এক সময় জোটের ছত্রছায়া থেকে বেরিয়েও এসেছে শিবসেনা।
শিবসেনার মতো ভিন্নমেরুর দলের সঙ্গে জোট গড়া নিয়ে শরদের দাবি, ‘‘নির্বাচনের আগে শিবসেনার সঙ্গে কোনও কথাই হয়নি। আমরা সেনা এবং বিজেপি দু’জনের বিরুদ্ধেই লড়াই করেছিলাম। তাদের সঙ্গে হাত মেলানোর কোনও প্রশ্নই ওঠেনি।’’ কিন্তু, মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার দিন থেকেই সে রাজ্যে ভিন্ন জোটের ইঙ্গিত মিলতে থাকে। কার্যক্ষেত্রে সেই জোটই এখন মরাঠা-ভূমের ক্ষমতায় রয়েছে। কী ভাবে সেই জোটের বল গড়াতে শুরু করল সেই প্রসঙ্গে শরদ বলেন, ‘‘এর একটা পটভূমি রয়েছে। নেহরু সেন্টারে দিল্লির কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে আমার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। ক্ষণিকের জন্য আমার মনে হয়েছিল, আমি এই আলোচনা চালিয়ে যেতে পারব না এবং আমার এই জোটে অংশগ্রহণ করাও উচিত নয়। অজিতও অখুশি ছিল এবং কী ভাবে আমরা কাজ করছি তা আমার সঙ্গীদের বলেছিল। ক্ষমতার বণ্টন নিয়েও একটা দ্বন্দ্ব চলছিল।”
আরও পড়ুন: বিল ‘আটকে’ রাজভবনে, বিধানসভা বন্ধ ২ দিন, শুরু তরজা
‘বিদ্রোহী’ ঘরে ফিরলেও, মহারাষ্ট্র বিকাশ আঘাডি জোটে অজিতের ভূমিকা কী হবে, তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট করেননি শরদ পওয়ার। তবে তা বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনের পর অনেক স্পষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর দাবি, ‘‘মহারাষ্ট্র বিকাশ আঘাডি জোট আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত চলবে। এখানে পদমর্যাদা নিয়ে কোনও দ্বন্দ্ব নেই।’’
মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন নিয়ে একের পর এক নাটকীয় মুহূর্তের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন শরদ পওয়ার। আর তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তুমুল জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে। এনসিপি প্রধান বিজেপির দিকেই ঝুঁকছেন কিনা সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করে। সোমবার তার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন শরদ পওয়ার। ২০ নভেম্বরের ওই বৈঠক সম্পর্কে এনসিপি প্রধান বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে এক সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমি ওঁকে বলেছিলাম, আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুব ভাল এবং সেটা থাকবেও। কিন্তু, আমার পক্ষে এক সঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়।’’ সেই বৈঠকের কথা টেনে এনেই শরদ বলেন, ‘‘সুপ্রিয়াকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন মোদী।’’ তবে সেই প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন পওয়ার।