কেন ভিপিএন নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে ভারত? প্রতীকী ছবি
চিনের সঙ্গে সীমান্ত বিবাদের জেরে ভারতে পাবজি নিষিদ্ধ হওয়ার পর রাতারাতি জনপ্রিয় হয়েছিল একটি শব্দবন্ধ, 'ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক', সংক্ষেপে 'ভিপিএন'। গত বছর বিশেষ এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাবজি খেলার ধুম পড়ে গিয়েছিল দেশে। এর সুবিধা, নিষিদ্ধ সাইটে যাতায়াত করলেও আপনার নাম-ধাম থাকবে গোপন। এবার সেই ভিপিএন-কেই নিষিদ্ধ করতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আর্জি জানাল সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। নেটাগরিকরা অনেকেই ভালবেসে ভিপিএন-কে 'গুমনামী বাবা' বলেও ডাকেন।
ভিপিএন কী?
ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন হল এমন এক ধরনের ইন্টারনেট পরিষেবা, যেখানে ব্যবহারকারী কোন সাইটে যাচ্ছেন, তাঁর কার্যকলাপ কী, তা গোপন থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চিনের সঙ্গে বিরোধের পর পাবজি গেম নিষিদ্ধ করে ভারত। কিন্তু তাতে খেলার জনপ্রিয়তা কমেনি। উল্টে ভিপিএন ব্যবহার করে ‘নিষিদ্ধ’ পাবজি খেলাই নিয়মে পরিণত হয়েছিল। শুধু পাবজি-ই নয়, ভারতে নিষিদ্ধ এমন সমস্ত সাইটে বিনা বাধায় নিয়ে যেতে সক্ষম ভিপিএন। এহ বাহ্য, নিষিদ্ধ সাইটে আপনি কী করছেন, তাও কেউ জানতে পারবে না।
ভিপিএন-র ব্যবহার
বিনা বাধায় সমস্ত ইন্টারনেট সাইটে যাওয়াই শুধু নয়, বিভিন্ন সংস্থা ভিপিএন পরিষেবা ব্যবহার করে নিজস্ব সার্ভারের সঙ্গে কর্মীদের যোগাযোগ স্থাপন করে। এর ফলে অফিসের বাইরে কোথাও (রিমোট লোকেশন) কাজ করলেও বিনা বাধায় কর্মী অফিসের সার্ভারের নাগাল পান। বহুজাতিক বা বড় বড় সংস্থার ক্ষেত্রে কাজের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখায় ভিপিএন-এর প্রভাব যথেষ্ট।
ভিপিএন-র ‘অপব্যবহার’
ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আপনি যে কোনও ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারবেন। ভারতে নিষিদ্ধ শিশু পর্নোগ্রাফি থেকে শুরু করে কোনও নিষিদ্ধ সংগঠনের ওয়েবসাইট, বিনা আয়াসে ঢুকে পড়া যায় ভিপিএন-র মাধ্যমে। অর্থাৎ আপনি গুমনামী বা নাম-পরিচয়হীন হিসেবেই ভিপিএন পরিষেবা ব্যবহার করতে পারেন।
বিশ্বে ভিপিএন ব্যবহারকারীদের তালিকা তৈরি করে অ্যাটলাস ভিপিএন। তাদের হিসেব বলছে, ভিপিএন ব্যবহারকারীর সংখ্যার নিরিখে ভারত বিশ্বে সর্বোচ্চ।
এখন প্রশ্ন হল, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কেন এমন সুপারিশ করল? রাজ্যসভায় জমা দেওয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট বলছে, ভিপিএন ব্যবহার করে দেশের সাইবার নিরাপত্তার সমস্ত বিধিনিষেধ হেলায় এড়িয়ে চলে যাচ্ছে অপরাধীরা। আশঙ্কা, ভবিষ্যতে এর মাধ্যমে বড় অপরাধ সংগঠিত করতে পারে অপরাধীরা। ভারতে জনপ্রিয় ভিপিএন পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম নর্ড ভিপিএন, এক্সপ্রেস ভিপিএন, আইপি ভ্যানিশ।
কিন্তু সত্যিই কি ভিপিএন পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা সম্ভব? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু প্রশ্ন অন্যত্র। সাধারণের ব্যবহারের জন্য ভিপিএন নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ কিংবা হ্যাকারদের কাছ থেকে কি তা নিরাপদ হবে? সেটাই এখন ভাবনার বিষয়।