প্রতীকী ছবি।
এখন রাজ্যে যোগী, কেন্দ্রে মোদী। সময়ও সর্বাধিক অনুকূল। ২০১৯-এর পর এমন পরিস্থিতি নাও থাকতে পারে বলে মনে করছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। অন্তত গুজরাত নির্বাচন তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাই রাম মন্দির নির্মাণের ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ ঘোষণা করতে আর দেরি করতে চায় না পরিষদ। আগামী ২৫-২৬ ডিসেম্বর ভুবনেশ্বরে কোর কমিটির বৈঠকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে পরিষদ। তার পরেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দেশ-বিদেশের সমস্ত শাখা থেকে আসা প্রায় ৫০০ প্রতিনিধিকে ২৯ ডিসেম্বর তা জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।
কী সেই অ্যাকশন প্ল্যান?
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুরেন্দ্র জৈন বলেন,‘‘উদুপি ধর্ম সংসদেই ঘোষিত হয়েছে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাস থেকে মন্দির নির্মাণ শুরু হবে। কৌশলগত কারণেই কী ভাবে হবে, তা এখনই জানাচ্ছি না। ভুবনেশ্বর বৈঠকে কৌশল ঠিক হওয়ার পর ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়িত হবে। প্রথমেই শুরু হবে গ্রামে গ্রামে জনজাগরণের কাজ। পরে প্রয়োজন মতো সিদ্ধান্ত ঘোষণা হবে।’’
আরও পড়ুন: ৩৪! শুনে হতবাক মোদীর ভক্তকুল
পরিষদের এক শীর্ষ কর্তা জানাচ্ছেন, মন্দির নির্মাণ সংক্রান্ত মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। আদালত মন্দির নির্মাণের পক্ষে রায় দিলেও অন্য কোনও পক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে তাতে আবার স্থগিতাদেশ চলে আসতে পারে। ফলে আদালতের মাধ্যমে মন্দির সমস্যা মিটবে না। পরিষদ মনে করে, আদালতের বাইরে দুটি রাস্তা-এক, সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলা। দুই, কেন্দ্রীয় আইন তৈরি করে মন্দির নির্মাণের পথ প্রশস্ত করা। যেহেতু আদালতের বাইরে আলোচনায় মুসলিম সংগঠনগুলি কখনও মন্দির নির্মাণে সহমত হবে না, তাই আইন তৈরিই একমাত্র পথ বলে দাবি পরিষদের। আর সেই পথে কেন্দ্রকে বাধ্য করতে প্রয়োজনে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যেতেও পিছপা হবে না ভিএইচপি।
কিন্তু তাও কি আদৌ সম্ভব? বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পূর্বাঞ্চলের সংগঠন সম্পাদক শচীন্দ্রনাথ সিংহের বক্তব্য,‘‘জওহরলাল নেহেরুর আপত্তি সত্ত্বেও সর্দার বল্লভভাই পটেল সোমনাথ মন্দির পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। নতুন আইন করেই করেছিলেন। এখনও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নরেন্দ্র মোদীও সর্দার পটেল হতে পারেন। তবেই দেশ তাঁকে মনে রাখবে। সংসদের যৌথ কক্ষের অধিবেশন ডেকে কেন্দ্রকে রাম মন্দির আইন করতে হবে। এটাই এখন একমাত্র দাবি।’’
যদিও রাজনৈতিক মহলের মত, কেন্দ্র আইন করলেও সুপ্রিম কোর্ট তা বেআইনি বলে খারিজ করেত পারে। ফলে সমস্যা মেটার আশা কম। আসলে রাজ্যসভার নতুন সদস্যরা এলে ২০১৮-এ বিজেপি সংসদের উচ্চকক্ষে শক্তিশালী হবে। তাই এখন থেকেই আইন তৈরির দাবি তুলছে পরিষদ। পাশাপাশি কেউ কেউ মনে করছেন, সামনের বছর অক্টোবরে মন্দির নির্মাণ শুরু করতে চায় পরিষদ। তার ঠিক দু’মাস পরেই মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থানে বিধানসভা ভোট। ফলে তা জেতার অঙ্কে মেরুকরণের জন্যই এই পরিকল্পনা।
তবে শুধু মেরুকরণ দিয়ে যে ভোট জেতা যাবে না,তা বুঝেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। সম্প্রতি ভোপালে আরএসএসের নীতি নির্ধারণের বৈঠকে সুরেশ ভাইয়াজি যোশী স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, চাষিদের স্বার্থরক্ষা এবং গ্রামের দিকে তাকানোয় এখন সরকারের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। গুজরাত দেখিয়েছে সঙ্ঘের পরামর্শ ভুল ছিল না। গ্রামেই বেগ পেয়েছে বিজেপি, বেগ দিয়েছেন চাষিরা। এ বার কি তা হলে রামের মন্দির আর চাষের মাঠ নিয়েই কৌশল রচনা করছে সঙ্ঘ পরিবার?