বিয়ের মণ্ডপে বিনোদ কুমার। ছবি: ইউটিউব থেকে নেওয়া।
জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বন্দুকের নলের মুখে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। এমনই অভিযোগ নিয়ে আদালতে যান এক ব্যক্তি। প্রমাণ হিসেবে জমা করা হয় বিয়ের ভিডিয়ো। সেই ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে বিয়ের সময় কাঁদছেন বর। আর এই ভিডিয়ো দেখার পর বিয়ে খারিজের রায় দিল পটনার একটি আদালত।
বহু বছর আগে বিহারে পুরুষদের তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠত। তবে ২০১৭ সালে এই ধরনের ঘটনা সামনে আসায় অবাকই হয়েছিলেন সবাই। এবার সেই বিয়েকেই খারিজ হয়ে গেল আইনের লড়াইয়ে।
বোকারো স্টিল প্লান্টে জুনিয়র ম্যানেজার পদে কাজ করতেন বিনোদ কুমার। আদালতে তিনি অভিযোগ করেন জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে তাঁর বিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর সেই বিয়ের ভিডিয়ো ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ভাইরাল হয়েছিল ইন্টারনেটে। সেখানে দেখা যায় বিনোদ কুমার কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি নন। কিন্তু জোর করে তাঁর বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর তাঁকে ঘিরে রেখেছে পাত্রীর পরিবার পরিজনের লোকেরা। এমনকি বিয়ের অনুষ্ঠানের সময় সারাক্ষণ তিনি কেঁদে চলেছেন। চাপের মুখে বিয়ে করে নিলেও বিনোদ কুমার দু’টি মামলা দায়ের করেন। জোর করে বিয়ে দেওয়া ও ফৌজদারি মামলা করেন পাত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে।
যেখানে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল, সেই এলাকার পুলিশ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ ওঠে। কিন্তু সিনিয়র অফিসাররা যখনবিয়ের ভিডিয়ো দেখেন, তাঁরা বুঝতে পারেন বিনোদ কুমারের অভিযোগে সত্যতা রয়েছে। সেই মতো তদন্ত রিপোর্ট জমাও পড়ে।
আরও পড়ুন : মলদ্বীপে বিকিনিতে মন্দিরা বেদীর ছবি ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়
আরও পড়ুন : দিশা পাটানির জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে ৬টা মাস!
বিনোদ কুমার জানিয়েছেন, যে মহিলার সঙ্গে তাঁর জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাঁর দাদা সুরেন্দ্র যাদব মারধর করেন। এমনকি মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে মণ্ডপে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেন। হুমকি দেওয়া হয় তাঁর বোনকে বিয়ে না করলে খুন করা হবে। সেই সময়কাঁদা ছাড়া তাঁর কিছু করার ছিল না বলে ২০১৮ সালেই এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে জানান বিনোদ।
বিনোদের দাবি ছিল, গোটা বিষয়টাই পরিকল্পনা মাফিক হয়। পটনাতে এক বন্ধুর বিয়েতে গিয়েছিলেন। রাতে এক পরিচিত বিনোদকে বলেন, গাড়িতে করে বাড়িতে ছেড়ে দেবেন। কিন্তু অন্য রাস্তায় নিয়ে যায়। বলেন তাঁর বাড়ি থেকে কিছু নেওয়ার আছে। কোনও সন্দেহ হয়নি বিনোদের। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন বিয়ের সব প্রস্তুতি সারা। তাঁকে বন্দুকের বাঁট দিয়ে মারা হয়, একটি ঘরে বন্দি রাখা হয়। তারপর তুলে নিয়ে গিয়ে মণ্ডপে বসানো হয় বিয়ের জন্য। তখন কিছু করার না থাকলেও তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন এই বিয়ে খারিজের আবেদন নিয়ে আদালতে যাবেন।
প্রায় দু’বছর আদালতের লড়াইয়ে জয় হল বিনোদ কুমারের। মে মাসেই পাটনা আদালত বিয়ে খারিজের রায় দেয়। সেই রায়ের কপি সম্প্রতি বিনোদের হাতে পৌঁছেছে। তারপরই আবার ভাইরাল হয়েছে সেই পুরনো ভিডিয়ো।
বেশ কয়েক বছর আগে এমন তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেওয়ার খবর পাওয়া যেত বিহারে। তবে আইনের চাপে তা প্রায় বন্ধই হয়ে যায়। তারপরেও বিনোদ কুমারের এই ঘটনা সামনে আসে।