ভোট-হিংসা: ত্রিপুরার পশ্চিম চন্দ্রপুরে বিজেপি সমর্থকদের পুড়ে যাওয়া মোটরবাইক ও গাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
ত্রিপুরায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আজ। উত্তর জেলায় বিজেপির বেশ কয়েক জন সমর্থক আহত হয়েছেন এবং বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার বিশ্ববন্ধু সেন আজ এ কথা জানান। সিপিমের জেলা সম্পাদক অমিতাভ দত্ত জানাচ্ছেন, বিজেপির সমর্থকেরাও সিপিএমের জেলা অফিস ভাঙচুর করেছে। আক্রমণ করেছে দলের নেতাদের।
জেলার অতিরিক্ত এসপি, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক ও পুলিশের ডিআইজিকে ফোন করা হলে, তাঁরা কথা বলতে রাজি হননি। তবে পুলিশের অতিরিক্ত ডিজি এবং ডিজির দায়িত্বে থাকা রাজীব সিংহ বলেছেন, বিজেপির সমর্থকদের মোটরসাইকেল এবং গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। সিপিএমের অফিসে হামলা হয়েছে। পরে ধর্মনগর মহকুমায় অতিরিক্ত বাহিনী কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশের জওয়ান এবং ত্রিপুরা স্টেট পুলিশের জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের ডিআইজি-সহ পদস্থ কর্তারা ঘটনাস্থলে রয়েছেন।
আজ বেলা বারোটা নাগাদ পশ্চিম চন্দ্রপুরে ভাগ্যপুর ও ইয়াকুব নগরে বিজেপির সমর্থকরা মোটরসাইকেল এবং গাড়ি নিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্যে প্রচারে বেরিয়েছিল। সেখানে রাস্তা আটকায় দেয় দুলু মিয়াঁ-সহ কিছু লোক। সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্য দুলু নেশাসামগ্রীর কারবারি বলে অভিযোগ। তিনি ও তাঁর পরিবারের লোকজনই প্রথম রাস্তা অবরোধ করে আক্রমণ শুরু করে। দা-লাঠি নিয়ে মারধর করে বিজেপির সমর্থকদের। গুলিও ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। যদিও পুলিশ তা মানেনি। প্রায় ২০টির মতো মোটরবাইক এবং দু’টি গাড়ি ছাই হয়ে গিয়েছে। গুরুতর জখম হয়েছেন রাবেল মিয়াঁ, জগৎজ্যোতি দেব, রাহুলকিশোর রায় ও মিঠু নাম এক বিজেপি সমর্থক। চিকিৎসার জন্যে তাঁদের শিলচরে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের মধ্যে এক জনকে আগরতলায় পাঠানো হয়েছে।
হামলার খবর পেয়ে বিজেপির সমর্থকেরা এর পর ধর্মনগর মহকুমার সিপিএম জেলা অফিস ভেঙে তছনছ করে দেয়। আগামিকাল মনোয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ওই দফতরে বসে জেলা সম্পাদক অমিতাভ দত্ত এবং পৌরসভার চেয়ারম্যান শক্তি ভট্টাচার্য মহকুমা সম্পাদক রতন দে-রা বৈঠক করছিলেন। সেই সময় বিজেপির সমর্থকেরা এসে তাঁদের আক্রমণ করে। তাতে কমবেশি সকলেই আহত হন। বিজেপির লোকজন খুন করারও হুমকি দিয়েছে বলে সিপিএমের নেতাদের অভিযোগ। বলে গিয়েছে, পুলিশে জানানো বা মামলা করা যাবে না। সাংবাদিক সন্মেলন করে বা সামাজিক মাধ্যমে কিছু দেওয়া যাবে না। আতঙ্কে সিপিএমের নেতারা হাসপাতালে যেতে পারছেন না বলেও জানান। হামলার পরে অবশ্য পুলিশ এসেছিল।
কয়েক দিন ধরেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিরোধী দলের প্রার্থীদের উপর আক্রমণ চলছে। গত কালও উনকোটি জেলার গৌরনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মনোহর আলির অটোরিকশা পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দিয়েছে বিজেপির সমর্থকেরা। তিনি পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থীর জন্যে মনোনয়ন
জমা দিয়েছিলেন বিজেপির হুমকি অগ্রাহ্য করেই।