ছবি: পিটিআই।
উত্তরপ্রদেশ পুলিশের অন্তত ৪০টি দল তখন ৮ সহকর্মীর মৃত্যুর বদলা নিতে তাকে খুঁজছে বিভিন্ন জায়গায়। তার মধ্যেই অতি ঘনিষ্ঠ জনা ২-৩ সঙ্গীকে নিয়ে এ রাজ্য থেকে ও রাজ্য পালিয়ে বেড়িয়েছে কানপুরের গ্যাংস্টার বিকাশ দুবে। পুলিশের একটি সূত্রে বলা হচ্ছে, উত্তরপ্রদেশ থেকে পালিয়ে প্রথমে হরিয়ানা যায় বিকাশ। সেখানে তার দুই সঙ্গী ধরা পড়লেও সে নিজে পালায়। হরিয়ানা থেকে রাজস্থানের আলওয়ারে ঢুকে পড়ে সীমানা পেরিয়ে। সেখান থেকে বাসে চড়ে চলে আসে মধ্যপ্রদেশে। সেখানেই উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির চত্বর থেকে শেষ পর্যন্ত ধরা হয় তাকে। মধ্যপ্রদেশ থেকে কানপুর আনার পথে পুলিশের গাড়ি থেকে পালাতে গিয়ে ‘এনকাউন্টারে’ মারা যায় বিকাশ।
উজ্জয়িনীর পুলিশ সুপার মনোজ সিংহ জানিয়েছেন, বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে এবং একাধিক হোটেল-লজমালিক ও অটো-ট্যাক্সি চালকের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক ভাবে বিকাশের গতিবিধি সম্পর্কে জানা গিয়েছে। তিনি জানান, রাজস্থানের আলওয়ার থেকে রাজ্য পরিবহণ নিগমের বাসে ঝালওয়ার পৌঁছয় বিকাশ। সেখান থেকে একটি বেসরকারি বাসে উজ্জয়িনীর দেওয়াস গেটে পৌঁছয়। দেওয়াস গেটে যখন বাসটি পৌঁছয়, তখন ভোর ৩.৫৮। সেখান থেকে একটি অটো নিয়ে মহাকালেশ্বর মন্দিরে পৌঁছয় সে। জানতে পারে, সকাল সাড়ে সাতটায় খুলবে মন্দির। পুলিশ সুপারের দাবি, শিপ্রা নদীতে স্নান করে মহাকাল মন্দিরে পুজো দেয়। তার পরে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। উজ্জয়িনীতে বিকাশের সঙ্গে এক প্রভাবশালীর যোগের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে এড়িয়ে যান পুলিশ সুপার।
বিকাশ খতম হলেও তাকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠা থামছে না। আর সেই প্রশ্নমালার মূল অভিমুখই হল, তার সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসন-নেতাদের একটা অংশের ঘনিষ্ঠতা। যার জেরে গত শুক্রবার মধ্যরাতে তার বাড়িতে পুলিশি অভিযানের খবর আগেভাগে পেয়েছিল সে। তার পরে প্রস্তুতি নিয়ে পাল্টা হামলা চালিয়ে ৮ পুলিশকে খুন করে উধাও হয়ে যায়। বিকাশের প্রভাবশালী যোগ খতিয়ে দেখতে গঠিত স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট)-এর সদস্যরা রবিবার বিকরু গ্রামে যান। উত্তরপ্রদেশের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব সঞ্জয় ভোসরেড্ডির নেতৃত্বে দলটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পাশাপাশি এর আগে একাধিক মামলায় বিকাশের জামিন বাতিলের জন্য প্রশাসন সক্রিয় হয়নি কেন বা বিকাশ ও তার সঙ্গীরা কী করে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছিল, সে নিয়েও জেলাশাসক এবং এসএসপি-কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তাঁরা। কথা বলেন গ্রামবাসীদের সঙ্গেও।
আরও পড়ুন: সপ্তাহান্তে বন্ধ থাকবে বাজার-অফিস, সংক্রমণ ঠেকাতে ঘোষণা যোগীর
এরই মধ্যে বিকাশ দুবের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া পুলিশ কৃষ্ণকুমার শর্মার স্ত্রী স্বামীর নিরাপত্তার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। এ দিকে মহারাষ্ট্রের ঠাণে থেকে গ্রেফতার হওয়া বিকাশের সঙ্গী অরবিন্দ ওরফে গুড্ডন তিওয়ারি এবং তার চালক সুশীলকুমার ওরফে সোনু তিওয়ারিকে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ঠাণের একটি আদালতের বিচারক।
বিকাশ দুবের মৃত্যুর পরে তার উত্থান খতিয়ে দেখতে স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) গঠন করে সমালোচনার মুখে পড়েছিল যোগী আদিত্যনাথের সরকার। সমালোচনা বন্ধ করতে এ বার বিকাশ ও তার সঙ্গীদের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে একজন প্রাক্তন বিচারপতির নেতৃত্বে এক সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করল যোগী সরকার। রবিবার বিকেলে এই ঘোষণা করে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, দু’মাসের মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে এই কমিশনকে।