জিএসটি আদায় কম, ভাঁড়ার খালি, বিপন্ন উন্নয়ন

নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘এত দিন জিএসটি আদায় কম হওয়ায় সবার নজর ছিল সার্বিক অর্থনীতির শ্লথ গতির উপর। কিন্তু এর পরিণামে চলতি বছরেই সামাজিক উন্নয়নের প্রকল্পগুলি মার খেতে শুরু করেছে। এর জেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন গ্রামের গরিব মানুষ।’’

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় 

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪২
Share:

প্রতীকী ছবি।

জিএসটির কাঁটা এ বার উন্নয়নেও।

Advertisement

চালু হওয়ার পর থেকে প্রতি মাসেই কমছে জিএসটি আদায়। ভাঁড়ার খালি থাকায় কেন্দ্রীয় সরকারও রাজ্যের জন্য বরাদ্দ অনুদানের টাকায় কোপ মারতে বাধ্য হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরের ন’মাস কেটে গেলেও অধিকাংশ রাজ্যই প্রাপ্য অনুদানের অর্ধেকও পায়নি। কেন্দ্রের ঘরে যাওয়া করের থেকে প্রাপ্য টাকাও এই ক’মাসে এসেছে অনেক কম। কেন্দ্রীয় করের প্রাপ্য অংশ ও অনুদানের টাকা না মেলায় রাজ্যগুলিতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ধাক্কা খাচ্ছে।

নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘এত দিন জিএসটি আদায় কম হওয়ায় সবার নজর ছিল সার্বিক অর্থনীতির শ্লথ গতির উপর। কিন্তু এর পরিণামে চলতি বছরেই সামাজিক উন্নয়নের প্রকল্পগুলি মার খেতে শুরু করেছে। এর জেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন গ্রামের গরিব মানুষ।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: পাক সীমান্তে ক্ষতবিক্ষত গ্রাম, নিন্দায় দিল্লি

নোটবন্দির পরেই তাড়াহুড়ো করে জিএসটি চালু হয়েছে। নানা জটিলতায় আদায়ও প্রতি মাসেই কমছে। জুলাই মাসে যেখানে দেশে ৯৫ হাজার কোটি টাকা আয় হয়েছিল, নভেম্বরে তা নেমে এসেছে ৮০ হাজার ৮০৮ কোটিতে। জিএসটি কম আদায় হলেও তা নিয়ে রাজ্যের অবশ্য এখনই কোনও চিন্তা নেই। কারণ, আইন অনুযায়ী আগামী পাঁচ বছর কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে ১৪% বৃদ্ধি ধরে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য।

কোপে অনুদান

রাজ্য প্রাপ্য অনুদান মিলেছে শতাংশে

• পশ্চিমবঙ্গ ৩৫১২৬.০০ ১০২২৫.০০ ২৯.১১

• গুজরাত ১৫৬৭১.০০ ৯২৭৮.০০ ৫৯.২০

• উত্তরপ্রদেশ ৬৮০৫২.০০ ২১১৯০.০০ ৩১.১৪

• অন্ধ্রপ্রদেশ ৩৭৫৪৮.০০ ৯৪৯১.০০ ২৫.২৮

• মহারাষ্ট্র ৩২৭৩৯.০০ ১৩৭১৬.০০ ৪১.৯০

# ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষের নভেম্বর পর্যন্ত কোটি টাকায়

জিএসটি বাবদ টাকা পেয়ে গেলেও রাজ্যগুলির নাভিশ্বাস উঠছে অনুদান (গ্র্যান্ট-ইন-এড) এবং কেন্দ্রীয় করের প্রাপ্য টাকা সময়ে না পেয়ে। চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আয়কর, কর্পোরেট কর, জিএসটি এবং অন্যান্য কর বাবদ কেন্দ্রীয় সরকারের মোট যা আয় হয়, তার ৪২% রাজ্যগুলির কাছে ফেরত আসার কথা। জিএসটি কম আদায় হওয়ায় কেন্দ্রের আয় কমে গিয়েছে। ফলে দিল্লিও করের টাকা নিক্তি মেপে পাঠাচ্ছে। কম আসছে অনুদানের টাকাও। রাজ্যগুলির উন্নয়নে খরচও কমে গিয়েছে অস্বাভাবিক ভাবে।

যদিও এক কেন্দ্রীয় কর্তা জানান, অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসে কর আদায় হয় সবচেয়ে বেশি। ফলে অনুদান ও করের টাকাও এই সময়েই বেশি পেয়ে থাকে রাজ্য। তা ছাড়া, প্রাপ্ত টাকার খরচের হিসেব পেশ না করলে পরের দফার টাকা দেওয়া হয় না।

যা শুনে নবান্নের কর্তারা বলছেন, বছরের প্রথম ৯ মাস কেটে গিয়েছে, কিন্তু অনুদানের টাকা এক তৃতীয়াংশও খরচ হয়নি। কারণ টাকা আসেনি। এই সময়ে অন্তত অর্ধেক টাকা রাজ্যগুলি পেয়ে যায়। কেন্দ্রীয় করের টাকার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।

পঞ্চায়েত ও জনস্বাস্থ্য মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার হাতেই ২৫টির বেশি কেন্দ্রীয় অনুদান ভিত্তিক জনমুখী প্রকল্প রয়েছে। কয়েকটি ছাড়া বাকিগুলির টাকা কম এসেছে। ফলে বহু প্রকল্পই কোনও রকমে চলছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement