ভরা সাংবাদিক বৈঠকেই কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন ও আবাসন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু জানালেন, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে তিনি দেখা করেছেন। আর্জি জানিয়েছেন, প্রাক্তন মন্ত্রী-আমলাদের সরকারি বাংলো থেকে উৎখাত করার নির্দেশ যেন স্থগিত না রাখে আদালত।
আর বেঙ্কাইয়ার এই মন্তব্যের পরেই শুরু হল বিতর্ক। প্রশ্ন উঠল, সরকার কি এ ভাবে বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করতে পারে?
নগরোন্নয়ন ও আবাসন মন্ত্রকের গত তিন বছরের সাফল্য মেলে ধরতে সাংবাদিক বৈঠক করছিলেন বেঙ্কাইয়া। প্রাক্তন মন্ত্রী-সাংসদ-আমলাদের মধ্যে যাঁরা মেয়াদ ফুরোনোর পরেও দিল্লিতে বাংলো বা সরকারি আবাসন কব্জা করে বসে থাকেন, তাঁদের উচ্ছেদ করার খতিয়ান দিচ্ছিলেন। গত তিন বছরে ২৮৪৩টি সরকারি আবাসন এ ভাবে খালি করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪১১ জন প্রাক্তন সাংসদ ও মন্ত্রীও রয়েছেন। এ নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভা সম্প্রতি একটি আইনও মঞ্জুর করেছে। সেটি সংসদের সামনের অধিবেশনে পাশ করার চেষ্টা করবে সরকার। কিন্তু এরই মধ্যে অনেকে মামলা করে বসে আছেন। আর আদালত তা গ্রহণ করে অনেক ক্ষেত্রে ছ’মাস পরে শুনানির দিন ধার্য করেছে।
বেঙ্কাইয়ার মতে, ‘‘এ ভাবে ছ’মাস পরে শুনানির দিন দিলে তো মুশকিল! দ্রুত নিষ্পত্তির বদলে অপেক্ষা করতে হবে আরও ছ’মাস। অথচ মেয়াদ শেষের পরে ঘর খালি করতে হবে, এ নিয়ে কোনও বিবাদই নেই। আমি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেছি। নিজের মনের ভাবনা ব্যক্ত করেছি।’’
কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, কোনও মন্ত্রী কি এ ভাবে প্রধান বিচারপতির কাছে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দরবার করতে পারেন?
সংবিধান বিশেষজ্ঞ সুভাষ কাশ্যপ বলেন, ‘‘সরকার কোনও মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য আদালতের কাছে কোনও আবেদন করতেই পারে। তবে তার পদ্ধতি হল, আদালতে গিয়ে আবেদন করা। মন্ত্রী হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির কাছে আবেদন করা যায় না। তবে এক জন নাগরিক হিসেবে অবশ্য সেটি যে কেউ করতে পারেন।’’ কিন্তু প্রশ্ন হল, বেঙ্কাইয়া নাগরিক হিসেবে এ কাজ করেছেন না কি এক জন মন্ত্রী হিসেবে তাঁর মন্ত্রকের সমস্যা নিয়ে দরবার করেছেন?
সরকারি সূত্রের দাবি, মামলার উপরে কোনও প্রভাব খাটানো হচ্ছে না। তবে দ্রুত নিষ্পত্তির পথ খুঁজতে আলোচনা হতেই পারে। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ অবশ্য বলেন, ‘‘আইনমন্ত্রী হিসেবে আমি আদালতকে তো কোনও নির্দেশ দিতে পারি না। অনুরোধ করতে পারি।’’
রবিশঙ্কর জানান, দশ বছরের পুরনো মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তিনিও সব হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখছেন। যাতে তাঁরা নিম্ন আদালতের বিচারকদের সঙ্গেও এ নিয়ে বলতে পারেন। এমনকী কত মামলা বকেয়া আছে, সেটি খতিয়ে দেখার অনুরোধও তিনি করছেন।