দুর্ঘটনা ও এনকাউন্টারের আগে কানপুর যাওয়ার পথে ঝাঁসিতে গাড়ির মধ্যে বিকাশ দুবে। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
সম্পূর্ণ হল একটা বৃত্ত। বিকাশ দুবেকে ধরতে গিয়ে গুলিবৃষ্টির মুখে পড়ে নিহত আট পুলিশ কর্মী-অফিসারের মৃত্যুর ঘটনার সাত দিনের মাথায় এনকাউন্টারে নিহত মূল অভিযুক্ত কানপুরের গ্যাংস্টার বিকাশ দুবেও। ইতিমধ্যেই বিকাশের পাঁচ সঙ্গী-সহযোগীর মৃত্যু হয়েছে এনকাউন্টারে। তার সঙ্গীদের মতোই পরিণতি হতে পারে, এমন আশঙ্কা ছিলই। শুক্রবার বিকাশের এনকাউন্টারের সঙ্গেই শেষ হল ‘কানপুরের ডন’-এর অধ্যায়।
কিন্তু সেই অধ্যায় যে এত তাড়াতাড়ি শেষ হবে না, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, তৃণমূল-সহ অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দলই যোগী সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে। প্রায় সব দলের নেতারাই ‘ভুয়ো সংঘর্ষ’-এর দিকে ইঙ্গিত করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে সিবিআই তদন্তের দাবি করছে কোনও দল। কারও খোঁচা, বিকাশ দুবে না হয় মারা গেল, যে সব পুলিশকর্মী-অফিসারের বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করার অভিযোগ উঠেছিল, তাদের শাস্তি হবে তো?
যদিও পুলিশের বয়ান অনুযায়ী, উজ্জয়িনী থেকে এসটিএফ-এর একটি গাড়িতে করে কানপুরে আনা হচ্ছিল বিকাশ দুবেকে। ঝাঁসি-কানপুর হাইওয়ে ধরে যখন গাড়ি আসছিল, তখন বৃষ্টিভেজা রাস্তায় ওই গাড়িটি প্রথমে প্রায় ১০০ মিটার ঘষটে গিয়ে রাস্তার ডিভাইডার টপকে উল্টে যায়। সেই সুযোগ নিয়ে দুর্ঘটনায় আহত এক পুলিশকর্মীর আগ্নেয়াস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে পালাতে যায় বিকাশ। সেই সময় পুলিশ তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলে। কিন্তু সে কথায় কর্ণপাত না করে গুলি চালাতে শুরু করে বিকাশ। পাল্টা গুলি চালায় পুলিশ। তাতে গুরুতর জখম হয় বিকাশ। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: চেনা ছকেই বিকাশ দুবে পর্ব ‘শেষ’ করল যোগীর পুলিশ
বৃহস্পতিবার সকালে উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির থেকে গ্রেফতার হওয়ার পর ঘটনাক্রম ঠিক কেমন ছিল? শুক্রবার সারা দিন মূলত আইনি প্রক্রিয়ার কাজকর্ম সারা হয়। গ্রেফতারের পর আদালতের ট্রানজিট রিমান্ড পাওয়ার পর শুরু হয় বিকাশকে কানপুর নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে উজ্জয়িনী থেকে রওনা দেয় তিনটি এসইউভি গাড়ি। তার মধ্যে একটি গাড়িতে ছিল গ্যাংস্টার বিকাশ। ঝাঁসিতে আসার পর সেখান থেকে ওই কনভয়ের পিছু নেয় বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের গাড়ি। কিন্তু দুর্ঘটনার দু'কিলোমিটার আগেই থামিয়ে দেওয়া হয় সেই গাড়িগুলি।
বিকাশ যে গাড়িতে ছিল, সেই গাড়িই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কানপুর থেকে ৩০ কিলোমিটার আগে সাচেন্ডির কাছে। ভোর দুর্ঘটনা এবং তার পরবর্তী এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ ঝাঁসি-কানপুর হাইওয়ের উপর। গাড়িটি যেখানে উল্টেছে, ঠিক সেখান থেকেই মূল রাস্তা থেকে একটি রাস্তা গ্রামের দিকে ঢুকে গিয়েছে। পুলিশের দাবি, সেই রাস্তা ধরেই পালাতে যায় বিকাশ। এনকাউন্টারও ওই রাস্তার উপরেই হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পরের পর্বে অবশ্য তেমন রহস্য নেই। গুলিবিদ্ধ বিকাশ এবং আহত পুলিশকর্মীদের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মারা যায় বিকাশ।
আরও পড়ুন: ‘গাড়ি না ওল্টালে গদি উল্টে যেত’, দুবে কাণ্ডেও নিশানা ‘এনকাউন্টার রাজ’
কিন্তু এই এনকাউন্টার নিয়ে ধোঁয়াশা বিস্তর। বিকাশকে কেন হাতকড়া পরানো ছিল না, সংবাদ মাধ্যমের গাড়িগুলিকে কেন দু’কিলোমিটার আগে থামিয়ে দেওয়া হল, কিছুক্ষণ আগেও বিকাশকে কনভয়ের অন্য একটি গাড়িতে দেখা গিয়েছিল, বিকাশ যে গাড়িতে ছিল, সেটিই দুর্ঘটনায় পড়া কাকতালীয় কি না, দুর্ঘটনার পর বিকাশ গাড়ি থেকে কী ভাবে বার হল, কী ভাবে পিস্তল ছিনিয়ে নিল—এমন বহু প্রশ্ন ঘিরে তোলপাড় দেশ। কিন্তু এই সব প্রশ্ন নিয়ে এখনও পর্যন্ত মুখে কুলুপ উত্তরপ্রদেশ পুলিশের।
গত শুক্রবার ভোরে কানপুরের বিকরুতে বিকাশের গ্রামে তাকে ধরতে গিয়ে গুলির মুখে পড়ে পুলিশ। ছাদের উপর থেকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় আট পুলিশকর্মী-অফিসারকে। সেই ঘটনার পর বিকাশকে ধরতে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছিল। সেই টাস্ক ফোর্সের হাতে এখনও পর্যন্ত বিকাশের পাঁচ সহযোগী এনকাউন্টারে নিহত হয়েছে সেই এসটিএফ-এর হাতে। বিকাশের ক্ষেত্রেও যে তেমনটা হতে পারে, তা আগাম আঁচ করেই সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা দায়ের হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট তার নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করার নির্দেশও দিয়েছিল। কিন্তু কানপুর পর্যন্ত পৌঁছতে পারল না বিকাশ। তার আগেই ‘এনকাউন্টার’।