লড়াইটা গতির এবং অবশ্যই যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যের। ফাইল ছবি
লড়াইটা গতির এবং অবশ্যই যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যের। মূলত এই জোড়া নিরিখে উন্নত দেশগুলির যাত্রিবাহী ট্রেনের সমকক্ষ হয়ে উঠতে পরের প্রজন্মের বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সর্বাধিক গতি ঘণ্টায় ১৬০ থেকে বাড়িয়ে ২০০ কিলোমিটারে নিয়ে যেতে চায় রেল।
এই লক্ষ্যে আগামী ছ’-সাত বছরের মধ্যে তৈরি হতে চলা ৪০০ বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে অ্যালুমিনিয়ামের কোচ ব্যবহারের কথা ভাবা হচ্ছে। সরকারের এই পরিকল্পনায় প্রমাদ গুনছে লিঙ্ক হফম্যান বুশ (এলএইচবি) কোচের জন্য ইস্পাতের বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহকারী সংস্থাগুলি। রেল সূত্রের খবর, ইস্পাতের তৈরি এলএইচবি কোচের স্থায়িত্ব যে অনেক বেশি, তা জানিয়ে ইতিমধ্যেই বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হয়েছে।
রেল জানিয়েছে, কামরার ওজন কম হলে ছুটন্ত ট্রেনের পক্ষে দ্রুত সর্বাধিক গতি অর্জন করা সম্ভব হবে ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাস্তবে এলএইচবি প্রযুক্তির কোচ নির্মাণের ক্ষেত্রে যে-ইস্পাত ব্যবহার করাহয়, তার তুলনায় অ্যালুমিনিয়ামের কোচ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ওজনের হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। ওজন ও শক্তির অনুপাতে ইস্পাতের তুলনায় অ্যালুমিনিয়াম এগিয়ে বলেই বিমান ও হাইস্পিড ট্রেনে তা ব্যবহার করা হয় বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের অভিমত, ট্রেনের কোচ হালকা হলে বিদ্যুতের খরচও কম হবে। কিন্তু এই অভিযোগও আছে যে, আর্দ্র ও লবণাক্ত আবহাওয়ায় তাড়াতাড়ি ক্ষয় হয় অ্যালুমিনিয়ামের। এবং তা তাড়াতাড়ি ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।
দেশে প্রধান কোচ নির্মাতা সংস্থাগুলি মূলত ইস্পাত ব্যবহার করে। এখন মেট্রোর কোচ নির্মাণের ক্ষেত্রে ইস্পাতই অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এ দিকে, অ্যালুমিনিয়ামের কোচের আয়ু ন্যূনতম ৩৫ বছর থেকে কমিয়ে ১৫ বছর করার দাবিও তুলেছে আগ্রহী বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা। ইস্পাতের তৈরি এলএইচবি কোচের গড় আয়ু ৩৫ থেকে ৫০ বছর বলে দাবি ওই সব সংস্থার। অ্যালুমিনিয়ামের কামরা ব্যবহার করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যে-সব ট্রেন চলে, তার কামরার সংখ্যা ভারতের ট্রেনের তুলনায় অনেক কম। ন্যূনতম ১৬ কোচের বন্দে ভারত এক্সপ্রেস নির্মাণের ক্ষেত্রে অ্যালুমিনিয়ামের চেয়ে ইস্পাতের কোচের নিরাপত্তা ও আয়ু বেশি বলে ইস্পাত নির্মাতা সংগঠনগুলির দাবি।
রেল সূত্রের খবর, তাদের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে এখনও কোনও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। প্রাথমিক প্রস্তাবেঅ্যালুমিনিয়ামের কোচ নির্মাণকে অগ্রাধিকার দিলেও ইস্পাতের কোচ তৈরির সুযোগও খোলা রাখা হয়েছে। পরের প্রজন্মের ট্রেন নির্মাণের বরাত দেওয়ার পরে আগ্রহী সংস্থাগুলির প্রযুক্তিগত দক্ষতা যাচাই করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রেলকর্তারা।