বন্দে ভারতের সাব আর্বান পরিষেবায় ট্রেনের দু’প্রান্তে দু’টি এসি ভেন্ডর কামরা থাকবে। ফাইল চিত্র
বন্দে ভারত এ বার চলবে লোকাল রুটেও। প্রতি স্টেশনে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলবে। তার পর তাঁদের দ্রুত পৌঁছে দেবে গন্তব্যে। শহরতলি আর শহরকে এক সুতোয় জোড়া সাবার্বান রুটে নিয়মিত চলবে এই পরিষেবা। যার শুরু হতে চলেছে মহারাষ্ট্রের মুম্বই থেকে।
দূরপাল্লার সবচেয়ে গতিময় এবং আধুনিক এই ট্রেনের ছোট সংস্করণ তৈরি করার কথা মাস কয়েক আগেই ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। তবে তখন বলা হয়েছিল, বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের ওই ছোট সংস্করণ চালানো হবে দেশের বিভিন্ন মেট্রো রেলপথে। ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা দু’টি শহরকে জুড়বে বন্দে ভারত মেট্রো। তবে ভারতীয় রেলই নির্দেশ দিয়েছে ওই বন্দে মেট্রোর রেক লোকাল ট্রেন হিসাবেও চালাতে। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই মুম্বই রেলওয়ে বিকাশ কর্পোরেশন (এমআরভিসি)-এর সঙ্গে কথা হয়েছে ভারতীয় রেল মন্ত্রকের। তারা এমআরভিসি ২৩৮টি বন্দে ভারত অধিগ্রহণের অনুমতি দিয়েছে। রেলের তরফে বলা হয়েছে মুম্বইয়ের সাব আর্বান রেল পরিষেবাকে আরও কয়েক ধাপ উন্নত করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত।
দেশের ব্যস্ততম সাব আর্বান রেলপথ মহরাষ্ট্রের মুম্বইয়ে। ৩১৯ কিলোমিটার বিস্তৃত রেলপথে প্রতিদিন ৩১২৯টি ট্রেন যাত্রী পরিবহণ করে। এর মধ্যে বেশ কিছু বাতানুকূল লোকাল ট্রেনও রয়েছে। যার ব্যবস্থা অনেকটা এসি মেট্রো রেলের মতোই। রেল সূত্রে খবর, বন্দে ভারত মেট্রো সাব আর্বান পরিষেবা (এই নামই হতে চলেছে বন্দে ভারত লোকাল ট্রেনের) এসি লোকালেরই আধুনিকতম সংস্করণ। যাতে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের মতোই অধিকাংশ সুযোগ সুবিধা থাকবে। যাত্রী ধারণ ক্ষমতাও হবে এসি লোকালের থেকে বেশি।
রেলের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, এই ট্রেন রেলের নিজস্ব কারখানায় তৈরি হবে না। বদলে এই বন্দে ভারত মেট্রো রেকগুলি তৈরি হবে মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পে। রেলের ‘টেকনোলজি পার্টনার’ নিজস্ব কারখানায় তৈরি করবে এই রেকগুলি। এ ব্যাপারে রেলমন্ত্রক ইতিমধ্যেই মুম্বই রেল বিকাশ কর্পোরেশনকে টেন্ডার ডাকার নির্দেশ দিয়েছে। যে বা যারা এই ট্রেন তৈরির বরাত পাবে, তাদের ৩৫ বছর ট্রেনগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও নিতে হবে।
মুম্বইয়ে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ নিত্যযাত্রী লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করেন। ২০১৭ সাল থেকে যাত্রীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে এসি লোকাল ট্রেন চালানোর কথা ভাবা হয় মুম্বইয়ে। কিন্তু এই সমস্ত এসি ট্রেনে ডাব্বাওয়ালা-সহ মাছ ব্যবসায়ী, মালবাহকদের যাতায়াতের ব্যবস্থা ছিল না। এসি লোকাল ট্রেনগুলির আধুনিকীকরণের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই করছিলেন নিত্যযাত্রীরা। বন্দে ভারতের মেট্রো রেক সেই খামতি খানিকটা পূরণ করতে পারবে বলে মনে করছে রেল।
বন্দে ভারতের সাব আর্বান পরিষেবায় ট্রেনের দু’প্রান্তে দু’টি এসি ভেন্ডর কামরা থাকবে। তার জন্য এসির ব্যবস্থাও থাকবে আলাদা। যাতে মাছ বা অন্যান্য গন্ধ অন্য যাত্রিবাহী কোচে অস্বস্তি তৈরি না করে। এ ছাড়া, সিসিটিভি নজরদারী, ১২টি কোচের ভিতর দিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা, লোকাল ট্রেনের থেকে বেশি যাত্রীর বসার আসন, বড় ডিসপ্লে মনিটরে স্টেশনের নাম দেখার ব্যবস্থা থাকবে যাত্রীদের জন্য।
সৌর বিদ্যুতেই চলবে ট্রেনের পাখা এবং আলো। ট্রেনের মাথায় লাগানো সৌরপ্যানেলে ৩.৬ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি হবে। পাশাপাশি এই ট্রেনের আধুনিক প্রযুক্তির ফলে রেল ট্র্যাকে জল জমলেও ধীর গতিতে ট্রেন চালানো যাবে। এই ট্রেনের কোচ সংখ্যা ইচ্ছে মতো বাড়ানো যাবে বলেও রেল সূত্রে খবর। তবে এ সমস্ত সুবিধার মধ্যেও যেটা ভাবার তা হল বন্দে ভারত লোকাল ট্রেনের ভাড়া।
মুম্বইয়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা জেনেছে, তাদের অধিকাংশ অতিরিক্ত ভাড়ার জন্য মুম্বইয়ের এসি লোকাল ট্রেন গুলিতে চড়তে পারেন না। মুম্বইয়ের মোট যাতায়াতকারীর ৩০ শতাংশ যাতায়াত করেন এসি লোকাল ট্রেনে। বন্দে ভারতের দূরপাল্লার ট্রেনের ভাড়া যেমন অন্য ট্রেনের থেকে বেশি, অনুমান করা যেতে পারে বন্দে ভারত সাব আর্বান পরিষেবার ভাড়া অনেকটাই বেশি হবে। সে ক্ষেত্রে ভাড়ার জন্য যাত্রী না হলে কি ২৩৮টি বন্দে ভারত একই ভাবে চালানো হবে? না কি মহারাষ্ট্রের নাগপুর-বিলাসপুর রুটে যে ভাবে বন্দে ভারত পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, এ ক্ষেত্রেও তা-ই হবে!
আপাতত অবশ্য মহারাষ্ট্রের বিজেপি শিন্ডেসেনার সরকার চাইছে যে কোনও ভাবে বন্দে ভারত লোকাল পরিষেবা দ্রুত কার্যকর করতে। নিন্দকেরা যদিও বলছেন, কর্নাটকের বিধানসভা ভোটে বিজেপির ভরা়ডুবির পর মহারাষ্ট্রের বাণিজ্যনগরীতে বন্দে ভারত লোকাল চালু করার ঘোষণার অন্য তাৎপর্যও থাকতে পারে। ২০২৪ সালের অক্টোবরে বিধানসভা ভোট মহারাষ্ট্রে। তার আগে কি ডাবল ইঞ্জিন সরকারের প্রভাব দেখাতেই তড়িঘড়ি মহারাষ্ট্রে বন্দে ভারত লোকাল চালু করার অনুমতি দিল রেল মন্ত্রক!