পদত্যাগ করলেন মেঘালয়ের রাজ্যপাল ভি সম্মুগনাথন। বৃহস্পতিবার রাতে ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। আগামিকাল রাষ্ট্রপতির কাছে তা পাঠানো হবে।
রাজভবনের ভিতরেই খোদ রাজ্যপালের নারীসঙ্গ নিয়ে সোচ্চার হলেন রাজভবনের কর্মীরাই! মেঘালয়ের রাজ্যপাল ভি সম্মুগনাথনের বিরুদ্ধে এ বার সরব হয়েছেন রাজভবনের কর্মীরা। খোদ রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পাঠিয়ে রাজভবনের কর্মীরা বিশদে জানিয়েছেন, কী ভাবে রাজ্যপাল রাজভবনে নারীসঙ্গ করেন। নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না। রাজ্যপালের চরিত্র নিয়ে রাজভবনের কর্মীদের এ ভাবে সরব হওয়া রাজ্য তথা দেশের ইতিহাসে বিরল ঘটনা!
সম্প্রতি রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনেন এক মহিলা। তাঁর অভিযোগ ছিল, গত বছর ৭ ডিসেম্বর, রাজ্যপালের জনসংযোগ আধিকারিক পদে (পিআরও) সাক্ষাৎকারের জন্য তিনি রাজভবনে গিয়েছিলেন। আরও কয়েক জন মহিলা প্রার্থীও সেখানে ছিলেন। অভিযোগকারিণীর দাবি, রাজ্যপাল তাঁকে নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে জড়িয়ে ধরেন, অশ্লীল প্রস্তাব দেন। অভিযোগ উড়িয়ে মেঘালয়ের স্থায়ী ও অরুণাচলের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্যপাল ভি সম্মুগনাথন জানান, চাকরিপ্রার্থীরা তাঁর নাতনির মতো। তাঁদের নিছক উৎসাহ দিতেই পিঠ চাপড়েছিলেন মাত্র।
ঘটনার পরে দাবি ওঠে সাক্ষাৎকারের ঘরের সিসিটিভি ফুটেজ দেখা হোক। কিন্তু জানা গিয়েছে, নিরাপত্তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাজভবনের সিংহভাগ অংশে সিসি ক্যামেরাই নেই। রাজ্যপালের নির্দেশে রাজভবনেও ছিল বহিরাগত মহিলাদের অবারিত দ্বার।
রাজ ভবনের কর্মীদের পাঠানো সেই চিঠি
এর পরেই গতকাল রাজভবনের কর্মীরা একজোট হয়ে সম্মুগনাথনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। একশো জন কর্মীর স্বাক্ষর-সহ স্মারকপত্র পাঠানো হয় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে।
স্মারকলিপিতে লেখা হয়েছে, তামিলনাড়ুর প্রবীণ আরএসএস নেতা সম্মুগনাথন ২০১৫ সালে মেঘালয়ের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই রাজভবনের ঐতিহ্য এবং নিয়মকানুন ভাঙা শুরু করেন। এখনকার রাজভবন লীলাক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। রাজ্যপালের কড়া নির্দেশে একেবারে অন্দরমহল পর্যন্ত রয়েছে মহিলাদের অবাধ গতিবিধি। নেই সিসি ক্যামেরা। সব মিলিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভাঙা হচ্ছে।
রাজ্যপালের বর্তমান এক মহিলা ব্যক্তিগত সচিব তথা পিআরও-র নামোল্লেখ করে স্মারকপত্রে দাবি করা হয়েছে, ওই মহিলা রাজ্যপালের মণিপুর সফরেও সঙ্গিনী ছিলেন (মণিপুরেও ভারপ্রাপ্ত রাজ্যপাল ছিলেন সম্মুগনাথন)। ইম্ফল রাজভবনে একই ঘরে ছিলেন তাঁরা। স্মারকলিপি অনুযায়ী, রাজ্যপালের ওই পিআরও-র নিজের কোনও দফতর নেই। রাজ্যপালের শয়নকক্ষের লাগোয়া পিআরও-র শয়নকক্ষ। সেখান থেকেই কাজ করেন তিনি। তাঁর আত্মীয়া ও বান্ধবীরাও ইচ্ছেমতো রাজভবনে এসে থাকেন। রাজভবনে বেতনপ্রাপ্ত অনেক রাঁধুনী আছেন। আছে মেডিক্যাল ইউনিট। তা সত্ত্বেও রাজ্যপাল দক্ষিণের এক মহিলাকে ব্যক্তিগত রাঁধুনি ও এক মহিলাকে ব্যক্তিগত নার্স হিসেবে নিয়োগ করেন। ওই নার্স নাইট ডিউটিতেও থাকতেন। শেষ পর্যন্ত এক রাতে রাজ্যপালের সঙ্গে ঝগড়ার পরে ওই সেবিকা চলে যান। ওই নার্স, পিআরও-দের গাড়ি-সহ বিভিন্ন বেআইনি সরকারি সুবিধা দিয়েছেন রাজ্যপাল।
আরও পড়ুন: কী এমন সুন্দরী প্রিয়ঙ্কা! বিনয়ের কটাক্ষে বিতর্ক
যে শ্লীলতাহানির ঘটনা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত সেই ঘটনা অস্বীকার করে রাজ্যপাল দাবি করেন, তিনি নিজে ওই প্রার্থীকে ডাকেননি, সন্ধ্যা ৭টার পরে দেখাও করেননি। কিন্তু ওই মহিলা প্রার্থীর মোবাইলে রাজ্যপালের নম্বর থেকে পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা আছে। রাজভবনের রেজিস্ট্রারেও দেখা যাচ্ছে ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে রাজ্যপালের বাড়িতে ঢোকেন ওই মহিলা। বের হন রাত ৮টা ৫ মিনিটে। ওই দিন ১০ জন মহিলা প্রার্থীকে ডেকেছিলেন রাজ্যপাল।
রাজভবনের কর্মীদের অভিযোগ, রাজ্যপাল ও তাঁর এডিসি-দের দুর্ব্যবহারেও তাঁরা অতিষ্ঠ। রাজভবনের কিচেন গার্ডেনের তদারকিতে সরকারি একাধিক মালি থাকলেও রাজ্যপাল নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অসম রাইফেলসের জওয়ানদের বাগান পরিচর্যার কাজে লাগিয়েছেন।
আরও অভিযোগ, রাতারাতি রাজভবনের প্রধান সচিবকে অপসারিত করেন রাজ্যপাল। রাজভবনের ঐতিহ্যপূর্ণ ডাইনিং হলকে বদলে দিয়ে দফতরে পরিণত করেছেন তিনি। রাজ্যপালের দাবি ছিল, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম মারা যাওয়ার সময় তিনি সঙ্গে ছিলেন। রাজভবন কর্মীদের দাবি, ওই ঘটনার সময় রাজ্যপাল ঘুমোচ্ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে ফোন আসার পরে তিনি হাসপাতালে যান। এমন অনেক মিথ্যা বলেন সম্মুগনাথন।
শ্লীলতাহানির ঘটনার প্রতিবাদে এবং রাজ্যপাল এ ভাবে রাজভবনের মর্যাদাহানি করায় মেঘালয়ের নারী সংগঠনগুলি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে। এ দিন বিকেলে রাজভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়। অবিলম্বে রাজ্যপাল বদলেরও দাবি ওঠে।