Uttarakhand

ফের বিধ্বস্ত দেবভূমি, জোশীমঠের বিপর্যয়ের জন্য দায়ী কি সেই বাঁধ, নগরায়ণই?

এ দিনের বিপর্যয়ের যে ছবি দেখা গিয়েছে, তাতে শুধু বরফগলা জল নয়, কাদা, পাথর, নুড়ির স্রোত প্রবল বেগে বয়ে আসতে দেখা গিয়েছে।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:১৪
Share:

তুষারধসের জেরে বন্যার কবলে জোশীমঠ । নিজস্ব চিত্র

সাত বছরের মাথায় ফিরে এল উত্তরাখণ্ডের ভয়ঙ্কর স্মৃতি। কিন্তু এ বার আর মেঘভাঙা বৃষ্টি নয়, একেবারে হিমবাহ ফেটে পড়ে বিপর্যয় ঘটল ‘দেবভূমি’-তে। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ভূগোল ও ভূতত্ত্ববিদেরা বিশ্ব উষ্ণায়নের পাশাপাশি আঙুল তুলছেন অপরিকল্পিত জনপদ গঠন, যত্রতত্র বাঁধ নির্মাণ এবং নদীগর্ভ দখলের দিকে। তাঁরা বলছেন, ২০১৩ সালের বিপর্যয়ের সময়েও বাঁধ নির্মাণ এবং নদীগর্ভ দখল করে নগরায়ণের দিকে আঙুল উঠেছিল। রবিবারের ঘটনা বুঝিয়ে দিল, অতীত থেকে শিক্ষা নেয়নি প্রশাসন।

Advertisement

নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র বলছেন, উত্তরাখণ্ডের ওই এলাকা এমনিতেই ভূতাত্ত্বিক ভাবে খুব সংবেদনশীল। শীতের শেষে এমন তুষারধস একেবারে অস্বাভাবিকও বলা চলে না। কিন্তু কয়েক দশক আগেও এমন ঘটনা ঘটত না। যে দিন থেকে মানুষ নদীর ঢাল নিজের খুশি মতো বদলে দিতে এবং নদীগর্ভ দখল করতে শুরু করল, সে দিন থেকেই এই বিপদের শুরু। তাঁর কথায়, ‘‘শুখা মরসুমে নদী যতটুকু জায়গা দিয়ে বয়ে যায় সেটুকুই শুধু নদী নয়। নদীর দুপাশে প্লাবনভূমি থাকে। সেটাও তার জল বয়ে যাওয়ার জায়গা। সেখানে দখল করে নির্মাণ করলে এমন বিপর্যয় ঘটবেই।’’ এর পাশাপাশি বাঁধের কারণও তুলে ধরছেন তিনি।

এ দিনের বিপর্যয়ের যে ছবি দেখা গিয়েছে, তাতে শুধু বরফগলা জল নয়, কাদা, পাথর, নুড়ির স্রোত প্রবল বেগে বয়ে আসতে দেখা গিয়েছে। চলার পথে সামনে যা পেয়েছে তাই গুঁড়িয়ে দিয়েছে ওই ভয়ঙ্কর স্রোত। এই ভয়ঙ্কর স্রোতের পিছনে নদীর উপরে ইচ্ছেমতো বাঁধ নির্মাণকেও দায়ী করছেন পরিবেশবিদ ও ভূগোলবিদেরা। তাঁরা বলছেন, হিমবাহ ফেটে জল বেরোলে তা বাধাহীন ভাবে বয়ে গেলে এত ক্ষতি হত না। কিন্তু তা এসে ধাক্কা খেয়েছে বাঁধে। বাঁধের পিছনে জলের সঙ্গে প্রচুর কাদা, পাথর জমে থাকে। বাঁধ ভাঙার সময় সেগুলিও জলের সঙ্গে মিশেছে। এ বার বাঁধ ভাঙার সময় জলের চাপও বদলে গিয়েছে এবং প্রবল তোড় নিয়ে সে এগিয়ে চলেছে। কল্যাণবাবুর আশঙ্কা, ‘‘এই বিপর্যয়ের ধাক্কা চামোলির নীচের দিকেও পড়বে। উত্তরাখণ্ডের শ্রীনগর বাঁধের বড় মাপের ক্ষতি হতে পারে।’’ ভূতত্ত্ববিদদের অনেকে বলছেন, পাহাড়ে ভারী বাঁধ এবং কংক্রিটের নির্মাণ করে এলাকার ভূস্তরীয় ভারসাম্যকেও নষ্ট করেছে।

Advertisement

কাদায় ঢেকেছে তপোবন পৌছনোর সেতু। পিটিআই

২০১৩ সালের বিপর্যয়ের পিছনে বড় কারণ ছিল তড়িঘড়ি হাজির হওয়া বর্ষা। সে সময় পাথরের খাঁজে খাঁজে বরফগলা জলের জন্য এমনিতেই ওই এলাকার পাথর, মাটি দুর্বল হয়ে ছিল। প্রবল বৃষ্টি সেটিকে ত্বরান্বিত করেছিল।

ধুয়ে মুছে সাফ ঋষিগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের এই বাঁধ। পিটিআই

এখন এই হিমবাহ ফেটে পড়ল কেন? এর পিছনে অনেকেই দায়ী করছেন বিশ্ব উষ্ণায়নকে। ভূগোলবিদদের অনেকেই বলছেন, উষ্ণায়নের ফলে হিমবাহের তলদেশ গলতে থাকে এবং তার ফলেই প্রবল বরফ হড়পা বানের মতো নেমে আসে। রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনস্থ সংস্থা ‘ইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (আইপিসিসি)-এর ষষ্ঠ রিপোর্টের অন্যতম মূল লেখক অঞ্জল প্রকাশ বলছেন, ‘‘হিমবাহের উপরে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করা গিয়েছে। চামোলিতে ঠিক কী কারণে হয়েছে তা নিশ্চিত না-হওয়া গেলেও উষ্ণায়নকে অস্বীকার করা যায় না।’’ কেন্দ্রীয় বন, পরিবেশ ও জলবায়ু বদল মন্ত্রকের সিনিয়র কনসালট্যান্ট সোমনাথ ভট্টাচার্যও বলছেন, ‘‘জলবায়ু বদলের প্রভাব হিমবাহের উপরে পড়ছে। তাই হিমবাহগুলির উপরে নিখুঁত নজরদারি প্রয়োজন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement