যোগী আদিত্যনাথ। —ফাইল ছবি।
উত্তরপ্রদেশের রাজ্য পুলিশের ডিজি বাছাইয়ের জন্য যোগী আদিত্যনাথের সরকার আর ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি)-কে নামের তালিকা পাঠাবে না। এই বিষয়ে আজ যোগী সরকার নতুন বাছাই ও নিয়োগ বিধি তৈরি করেছে। যোগী সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের কমিটি এই কাজ করবে। যোগী আদিত্যনাথের বিজেপি সরকারের এই পদক্ষেপ নিয়ে কটাক্ষ করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব প্রশ্ন তুলেছেন, মোদী সরকারের হাত থেকে যোগী কি নিজের হাতে ক্ষমতা তুলে নিতে চাইছেন! তাঁর মতে, এখন ‘দিল্লি বনাম লখনউ’-এর দ্বিতীয় পর্ব চলছে। বিরোধীদের মতে, দিল্লি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উত্তরপ্রদেশের ডিজি-র পদে তাঁর পছন্দের অফিসারকে বসাতে চেয়েছিলেন। অন্য দিকে তা একেবারেই চাননি যোগী। তার ফলেই এই বিধি তৈরি করা হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন ডিজিপি প্রকাশ সিংহ বনাম কেন্দ্রীয় সরকারের মামলায় ২০০৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলিকে পুলিশি ব্যবস্থায় সংস্কার করতে বলেছিল। সেই সংক্রান্ত নির্দেশগুলির অন্যতম ছিল, ডিজিপি নিয়োগ যাবতীয় প্রভাবমুক্ত রাখা এবং ডিজিপি পদে দু’বছরের মেয়াদ নির্দিষ্ট করা। রাজ্য সরকারকে আইন তৈরি করতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে রাজ্য সরকার যোগ্য অফিসারদের তালিকা ইউপিএসসি-কে পাঠিয়ে দিত। ইউপিএসসি-র সভাপতির নেতৃত্বে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্যের মুখ্যসচিব, ডিজি, কেন্দ্রীয় বাহিনীর রাজ্য ক্যাডারের অফিসারকে নিয়ে তৈরি কমিটি ওই তালিকা থেকে তিন জন আইপিএসের প্যানেল তৈরি করে দিত।
যোগী সরকারের করা নতুন বিধিতে ডিজিপি বাছার জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বাধীন কমিটিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনুপস্থিত। সেখানে রাজ্যের মুখ্যসচিব, উত্তরপ্রদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারপার্সন বা তাঁর প্রতিনিধি, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের সচিব ও এক জন অবসরপ্রাপ্ত ডিজিপি ছাড়া কেন্দ্রের দিক থেকে শুধু ইউপিএসসির এক জন প্রতিনিধি থাকবেন। প্রশ্ন উঠেছে, যোগী সরকারের এই পদক্ষেপ সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে হয়েছে? প্রকাশ সিংহের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যকে আইন করতে বলেছিল। উত্তরপ্রদেশ সরকার আইন না করে বিধি তৈরি করেছে। তবে বাছাই কমিটিতে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রসচিব অনুপস্থিত। সুপ্রিম কোর্ট বিচার করবে এতে আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন হয়েছে কি না।
উত্তরপ্রদেশে গত প্রায় তিন বছর ধরে স্থায়ী ডিজিপি নিয়োগ হয়নি। দু’দিন আগে আচমকাই দিল্লি এসে যোগী আদিত্যনাথ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। প্রশ্ন উঠেছে, যোগী কি মোদী, অমিত শাহকে জানিয়েই এই পদক্ষেপ করেছেন? অখিলেশের কটাক্ষ, ‘‘শুনলাম ডিজি-র চাকরির মেয়াদ দু’বছর বলে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্নটা হল, যিনি এই আইন করেছেন, তিনি (যোগী) নিজে আদৌ দু’বছর থাকবেন কি না!’’