বারাণসীর কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের বদলে যাওয়া রূপ। ফাইল চিত্র।
জ্ঞানবাপী মসজিদের অধিকার ঘিরে আইনি লড়াইয়ের আবহেই, লাগোয়া কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের পর্যটনে আকর্ষণ বাড়ানোর কাজে সক্রিয় হল যোগী আদিত্যনাথের সরকার। উত্তরপ্রদেশ পর্যটন দফতর মন্দিরে আগত পুণ্যার্থী এবং পর্যটকদের জন্য শুরু করতে চলছে প্রায় ৪৫ মিনিটের একটি ‘অডিয়ো ট্যুর’।
যোগী সরকারের এক পর্যটন আধিকারিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শব্দের মায়ায় কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের ঐতিহ্য ও ইতিহাস তুলে ধরাই তাঁদের উদ্দেশ্য। তাই ওই ‘অডিয়ো ট্যুর’-এর পরিকল্পনা। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে এবং মন্দির চত্বরে বানানো স্মার্ট কিয়স্কে অডিয়ো গাইডের গলায় শোনা যাবে সেই ইতিহাস। দৈনিক তিন লক্ষেরও বেশি পর্যটক ও পুণ্যার্থী ওই অডিয়ো ট্যুরের সাহায্য পাবেন বলে দাবি করেছেন তিনি।
বর্তমান কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরটি ১৭৮১ সালে ইনদওরের মরাঠা রাজা মাধবরাও হোলকারের বিধবা পুত্রবধূ অহল্যাবাই এখানেই তৈরি করেছিলেন। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, তারও অনেক আগে থেকে আরও বেশি এলাকা জুডে় বিস্তৃত ছিল এমন মন্দির। মুঘল সম্রাট অওরঙ্গজেব কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের একাংশ ধ্বংস করেই জ্ঞানবাপী মসজিদ তৈরি করেছিলেন বলে অভিযোগ। যোগী সরকারের অডিয়ো গাইড সেই ‘বিতর্কিত পর্ব’ ছুঁয়ে যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ইতিমধ্যেই।
‘মন্দির ধ্বংসের’ অভিযোগ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বিশ্বনাথ মন্দিরের প্রাচীনত্ব নিয়ে অবশ্য সংশয়ের তেমন অবকাশ নেই, মুঘল সম্রাট আকবরের সভাসদ আবুল ফজল তাঁর আইন-ই-আকবরিতে লিখেছিলেন, কাশীতে প্রধান দর্শনীয় একটি শিবলিঙ্গ। মুসলমানেরা যেমন কাবার চার দিকে পরিভ্রমণ করে, হিন্দুরাও এখানে সে রকম করে। আবুল ফজল এটিকে ‘বারাণসী পুজো পদ্ধতি’ বলছেন। যদিও নিরাপত্তার কারণে বেশ কয়েক বছর ধরেই সেই রীতি বন্ধ রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা কেন্দ্রের সবচেয়ে বিখ্যাত মন্দিরে। বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশের পুলিশের বিধি মেনে এখন লাইনে দাঁড়িয়ে মন্দিরের এক দরজা দিয়ে ঢুকে, বিশ্বনাথকে ফুল, বেলপাতা চড়িয়ে উলটো দিক দিয়ে বেরিয়ে যেতে হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগেই কাশী বিশ্বনাথ মন্দির সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই প্রকল্পের অন্যতম অংশ কাশী বিশ্বনাথ করিডর। কাশী বিশ্বনাথ মন্দির থেকে গঙ্গার পাড় অবধি পাঁচ লক্ষ বর্গফুট এলাকা জুড়ে সাজিয়ে গড়ে তোলা হয় এই করিডর। ৩৩৯ কোটি টাকা খরচে তৈরি এই করিডরটি গত ডিসেম্বরে উদ্বোধন করেন মোদী।