প্রতীকী ছবি।
উত্তরপ্রদেশের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আসনগুলিতে মুসলিম ভোটের চার ভাগে বিভাজনে বিজেপি প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনা দেখছে দল। বিশেষ করে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ভোটে সংখ্যালঘু ভোটের আপাত বিভাজন, ফৌজদারি অপরাধ রয়েছে এমন মুসলিম প্রার্থীদের দাঁড় করানো হিন্দু ভোটের মেরুকরণেও সাহায্য করবে বলেই আশায় বুক বাঁধছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী উত্তরপ্রদেশের ভোটারদের মধ্যে প্রায় ১৯ শতাংশ হল মুসলিম। জনসংখ্যার বিচারে রাজ্যের অন্তত ৮৫টি আসনে মুসলিম জনসংখ্যা ৩০ থেকে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। মিরাট, বাগপত, রামপুর, সহারনপুর, মুজফ্ফরপুর, বিজনৌরের মতো প্রায় ১৪টি জেলায় মুসলিম ভোটের সংখ্যাধিক্য রয়েছে। ক্ষমতা ফিরে পেতে ওই আসনের বড় অংশে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ রয়েছে এমন বাহুবলী নেতাদের টিকিট দেওয়ার কৌশল নিয়েছে সমাজবাদী পার্টি-রাষ্ট্রীয় লোক দল জোট। যা আখেরে তাঁদের সুবিধে করে দেবে বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। কারণ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে সমাজবাদী পার্টি ইতিমধ্যেই জানিয়েছে দ্বিতীয় পর্বের দশটি আসনের মুসলিম প্রার্থী ও তৃতীয় পর্বে টিকিট দেওয়া হয়েছে এমন এক মুসলিম প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধ রয়েছে।
এর মধ্যে কৈরানা থেকে সমাজবাদী প্রার্থী করেছে নাহিদ হাসানকে। ওই ব্যক্তি বতর্মানে ফৌজদারি মামলায় জেলে বন্দি। এসপি জমানায় কৈরানা থেকে হিন্দুদের তাড়ানোর ঘটনায় নাহিদ জড়িত ছিলেন বলে প্রচারে নেমেছেন খোদ অমিত শাহ। অন্য দিকে এসপি-আরএলডি জোট বুলন্দশহর থেকে দাঁড় করিয়েছে আর এক বাহুবলী প্রার্থী মহম্মদ ইউনুসকে। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে। ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে ওই জোটের আমরোহার প্রার্থী মেহবুব আলির নামেও। বিজেপি শিবিরের বক্তব্য, বিরোধী দল যত এই ধরনের বাহুবলী ও অপরাধে অভিযুক্ত সংখ্যালঘু প্রার্থীদের ভোটে দাঁড় করাবে তত হিন্দু ভোটের মেরুকরণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘২০১৭ সালের আগে এ সব অপরাধীরা ক্ষমতায় থেকে যে মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল তা উত্তরপ্রদেশের মানুষ ভোলেননি।’’ দলের বক্তব্য, সেই স্মৃতিকে উস্কে দিয়ে হিন্দু ভোটের মেরুকরণের কৌশল নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের ওই নেতার কথায়, ‘‘সংখ্যালঘু সমাজের অপরাধীদের যত টিকিট দেবে বিরোধীরা তত হিন্দু ভোট এক ছাতার তলায় আসবে বলেই বিশ্বাস আমাদের।’’
বিজেপি নেতৃত্বের মতে, এ যাত্রায় ক্ষমতা ধরে রাখার প্রশ্নে সবচেয়ে বড় গলার কাঁটা হল পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া কৃষক ভোট। তাই ওই আসনগুলি দখলে রাখতে হিন্দু ভোটের মেরুকরণের সঙ্গেই মুসলিম ভোটের বিভাজনেই ভরসা রেখেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। উত্তরপ্রদেশে প্রথম দফায় ৫৮টি ও দ্বিতীয় দফায় ৫৩টি আসনে ভোট হতে চলেছে। রাজ্যের ওই দুই পর্বের ভোট হতে চলেছে মূলত পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ ও ব্রজভূমিতে। উত্তরপ্রদেশের কৃষিপ্রধান ও মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় জয় নিশ্চিত করতে জাঠপ্রধান রাষ্ট্রীয় লোক দলের সঙ্গে জোট করেছে সমাজবাদী পার্টি। ওই এলাকার ৫৮টি আসনের মধ্যে মোট ১৩টি আসনে মুসলিম প্রার্থী দিয়েছে এসপি। দলের লক্ষ্যই হল আরএলডি-র জাঠ ও এসপির মুসলিম ভোটকে নিশ্চিত করে জয় ছিনিয়ে নেওয়া। অন্য দিকে মায়াবতীর দল বিএসপি ওই ৫৮টি আসনের মধ্যে ১৭টি আসনে মুসলিম প্রার্থী দিয়েছেন। যার ফলে অন্তত ৮টি আসনে বিএসপি ও এসপি সংখ্যালঘু ভোট দখলের লক্ষ্যে মুসলিম প্রার্থীকে লড়াইয়ে নামিয়েছে। মুসলিম ভোট দখলের লড়াইয়ে রয়েছে কংগ্রেসও। প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনের জন্য ৪১টি আসনে এখনও পর্যন্ত প্রার্থী ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। সেই তালিকায় রয়েছেন ৭ জন মুসলিম। এখনও পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের মুসলিম অধ্যুষিত আসনে প্রার্থী ঘোষণা বাকি রয়েছে। এআইসিসি সূত্রের মতে, সে আসনগুলিতে মুসলিম প্রার্থীকেই দাঁড় করাতে চলেছে কংগ্রেস।
প্রথম পর্বের ধাঁচেই দ্বিতীয় পর্বের ভোটেও ২৩ জন মুসলিম প্রার্থীকে টিকিট দিয়েছে মায়াবতীর দল। সব মিলিয়ে প্রথম দুই পর্বের ১১৩টি আসনের মধ্যে ৪০ জন মুসলিমকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। সব মিলিয়ে প্রথম দফায় মোট টিকিটের ৩৫ শতাংশ আসন সংখ্যালঘু প্রার্থীদের দিয়েছেন মায়াবতী। দৌড়ে পিছিয়ে নেই সমাজবাদী পার্টিও। দ্বিতীয় দফার ভোটে ১০ জন মুসলিম প্রার্থীকে প্রার্থী করেছেন অখিলেশ। মুসলিম ভোট টানার ত্রিমুখী ওই লড়াইতে বিহারের মতোই নতুন দাবিদার হিসেবে মাঠে নেমেছে হায়দরাবাদের আসাদুদ্দিন ওয়েইসির দল এমআইএম। মুসলিম ভোটের বিভাজনে আদতে ফায়দা দেখছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপি শিবিরের ব্যাখ্যা, মুসলিম ভোট যত ভাঙবে, তত হিন্দু ভোটের মেরুকরণে দলীয় প্রার্থীর জেতার সম্ভাবনা বাড়বে।