Narendra Modi

১৯৮৮ সালে ডিজিটাল ক্যামেরা-ইমেল ব্যবহার করতাম, দাবি মোদীর! হাসির বন্যা সোশ্যাল মিডিয়ায়

অকাট্য যুক্তির ক্ষেত্রে যদিও বা ‘ডিজিটাল ক্যামেরা’র অংশ মেনে নেওয়া যায়, মোদীর ই-মেল দাবিকে কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ জাপানি ক্যামেরা প্রস্তুতকারী সংস্থা নিকন প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে বিক্রির জন্য ডিজিটাল ক্যামেরা বাজারে আনে ১৯৮৬ সালে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ১৫:৩৬
Share:

১৯৮৭-’৮৮ সালে ডিজিটাল ক্যামেরা এবং ইমেল ব্যবহার করেছিলেন বলে দাবি করলেন মোদী। —ফাইল চিত্র

‘মেঘ’ এবং ‘রেডার’ মন্তব্যে বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এ বার ওই সাক্ষাৎকারের আরও একটি অংশ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে তোলপাড়। এবং এ বার আরও বেশি।সাক্ষাৎকারে মোদী এমন দাবি করেছেন, যা সময় এবং ইতিহাসের বাস্তবতার সঙ্গে কোনও ভাবেই মেলানো সম্ভব নয়। ১৯৮৮ সালে ডিজিটাল ক্যামেরা এবং ই-মেল ব্যবহার করেছিলেন বলে দাবি করে কার্যত হাসির খোরাক হয়ে উঠেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। মোদী এও দাবি করেছেন, তিনিই সম্ভবত দেশের প্রথম ব্যক্তি, যিনি ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার করেছেন।

Advertisement

সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, ২৬ ফেব্রুয়ারি বালাকোটে অভিযানে যখন বিশেষজ্ঞরা খারাপ আবহাওয়া নিয়ে চিন্তিত ছিলেন, তখন তিনিই বলেছিলেন, মেঘের আড়ালে ভারতীয় বায়ুসেনার বিমানকে ধরতে পারবে না পাক রেডার। তা নিয়ে রবিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় কার্যত ট্রোলড হন মোদী। মোদীর ওই মন্তব্য ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আক্রমণ, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ চলে দিনভর। রাত পোহাতেই সাক্ষাৎকারের আরও একটি অংশ ভাইরাল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই বলেছেন, এই অংশে মেঘলা আবহাওয়া এবং রেডার মন্তব্যকেও ছাপিয়ে গিয়েছেন মোদী।

ঠিক কী বলেছেন প্রধানমন্ত্রী? প্রশ্ন ছিল এই রকম— প্রযুক্তি এবং গ্যাজেটে তিনি এত স্বচ্ছন্দ কী ভাবে। বরাবরই নতুন নতুন প্রযুক্তির প্রতি তাঁর আকর্ষণ বেশি, গ্যাজেট নিয়ে আগ্রহী। কিন্তু তার পরই একটি উদাহরণ দিতে গিয়েই বিপত্তি বাধান। তিনি বলেন, ‘‘সম্ভবত আমিই দেশে প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার করেছিলাম। ১৯৮৭-’৮৮ সাল হবে। তখন খুব কম মানুষের ই-মেল ছিল। আমার এখানে বীরমগামে আডবাণীর সভা ছিল। আমি ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তুলি। তখন ডিজিটাল ক্যামেরা অনেক বড় হত। আমার কাছে তখন ছিল। আমি ছবি তুলে দিল্লিতে পাঠিয়ে দিই। পরের দিন রঙিন ফোটো ছাপা হয়। আডবাণীজি আশ্চর্য হয়েছিলেন যে, এক দিনের মধ্যে দিল্লিতে কী ভাবে রঙিন ছবি ছাপা হল?’’ সাক্ষাৎকারের এই অংশ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে নেটিজেনরা।

Advertisement

আরও পড়ুন: এত হিংসা কেন? ‘শান্তিপূর্ণ’ ভোটে কাঠগড়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনী

আরও পড়ুন: ভারতীর হুমকি শেষ হল কান্নায়

কেন প্রশ্ন? অকাট্য যুক্তির ক্ষেত্রে যদিও বা ‘ডিজিটাল ক্যামেরা’র অংশ মেনে নেওয়া যায়, মোদীর ই-মেল দাবিকে কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ জাপানি ক্যামেরা প্রস্তুতকারী সংস্থা নিকন প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে বিক্রির জন্য ডিজিটাল ক্যামেরা বাজারে আনে ১৯৮৬ সালে। যুক্তির ক্ষেত্রে যদিও বা মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু বাস্তবে মাত্র এক-দু’বছরের মধ্যেই ডিজিটাল ক্যামেরা ভারতে এসেছিল এবং তা মোদীর হাতে ছিল, এটা মেনে নেওয়া কার্যত অসম্ভব। আর ই-মেল প্রথম চালু হয় ১৯৯৫ সালে। আটের দশকে এই দেশে ই-মেল দূরে থাক, ইন্টারনেটের ধারনাও খুব কম মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কারণ বিএসএনএল প্রথম দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা শুরু করে ১৯৯৫ সালে। ফলে মোদীর ‘ই-মেল’ সংক্রান্ত দাবি পুরোপুরি অসম্ভব।

স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপের ঝড় বইতে শুরু করেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। টুইটার-ফেসবুকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সাক্ষাৎকারের ওই অংশ পোস্ট করে কেউ সুক্ষ খোঁচা দিচ্ছেন মোদীকে। কেউ আবার সরাসরিই আক্রমণ করে লিখেছেন ‘জুমলাবাজ’ মোদী।

আক্রমণ শুরু করেছেন কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরাও। দিব্যা স্পন্দন নামে এক কংগ্রেস নেতার সরস প্রশ্ন, ‘‘যদি ধরেও নেওয়া যায় যে ১৯৮৮ সালে মোদীর ই-মেল ছিল, কিন্তু সেই সময় তো অন্য কারও ই-মেল ছিল না, তাহলে তিনি কাকে ই-মেল পাঠাতেন?’’

অর্থনীতিবিদ রূপা সুব্রহ্মণ্যমের টুইট, ‘‘মোদী কোনও ভাবে ১৯৮৮ সালে ই-মেল ব্যবহার করেছেন, যেটা আমাদের কাছে্ সরকারি ভাবে এসেছে ১৯৯৫ সালে।’’

ক্ষমতায় এসে বার বার ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র কথা বলেছেন নরেন্দ্র মোদী। নোটবন্দির পর ক্যাশলেস ভারতের জিগির তুলেছেন। কিন্তু এ বার এমন এক ‘ডিজিটাল’ বোমা ছুড়লেন, যার জেরে অস্বস্তি চরমে উঠেছে। মোদীর নিজের এবং তাঁর দল বিজেপির।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement