প্রতীকী ছবি।
ভারত-প্রশান্ত মহাসগরীয় অঞ্চলে আগামী দিনে রণকৌশলগত সহযোগিতা বাড়ানোর পক্ষে আজ সওয়াল করল নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন। আজ দিল্লিতে আমেরিকার নব নির্বাচিত বাইডেন প্রশাসনের প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। বৈঠকে দু’দেশের সম্পর্ককে আমেরিকার ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর নীতির অন্যতম মূল স্তম্ভ হিসেবে বর্ণনা করেছেন প্রতিরক্ষা সচিব। একই সঙ্গে নাম না করে আজ চিনের উদ্দেশেও বার্তা দিয়েছে দুই দেশ।
রাজনাথের সঙ্গে বৈঠকের পরে আজ বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন লয়েড। সূত্রের মতে, বৈঠকে আফগানিস্তানে আমেরিকার সেনা সরানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে দু’দেশের মধ্যে। সেখানে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়া নিয়ে দু’দেশ নিজেদের মধ্যে তথ্য বিনিময় করে। একই সঙ্গে আফগানিস্তানে আমেরিকার সেনা সরে গেলে ভারসাম্যের পরিস্থিতি কী ভাবে বজায় থাকা সম্ভব, তা নিয়েও মত বিনিময় হয়। আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়ায় ভারতকে সঙ্গী করা নিয়ে আমেরিকার উদ্যোগকে স্বাগত জানান জয়শঙ্কর। একই সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলির প্রশ্নে ভারতের নিরাপত্তাজনিত চ্যালেঞ্জ ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় নয়াদিল্লির দীর্ঘমেয়াদি রণকৌশলগত পরিকল্পনা নিয়েও দুই শীর্ষ কর্তার আলোচনা হয়।
সম্প্রতি রাশিয়া থেকে এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম কেনা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সে দেশের এক সেনেট সদস্য রাশিয়া থেকে ওই মিসাইল সিস্টেম কিনলে ভারতের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করার পক্ষে সওয়াল করেন। বিষয়টি নিয়ে ওই সেনেট সদস্য ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন প্রতিরক্ষা সচিবকে। ফলে সেই দিক থেকে লয়েড অস্টিনের এই সফর ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে দু’দেশের কর্তাদের মধ্যে কোনও আলোচনা হয়েছে কি না, তা নিয়ে মুখে কুলুপ এটেছে দুই শিবিরই।
আজ সকালে রাজনাথের সঙ্গে আলোচনায় ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও সুস্থিতি বজায় প্রশ্নে ভারতের গুরুত্ব নিয়ে সওয়াল করেন লয়েড। তিনি নয়াদিল্লিকে বুঝিয়ে দেন, ওই এলাকায় শান্তি ও আমেরিকার স্বার্থ বজায় রাখার প্রশ্নে অনেকাংশেই ভারতের উপর নির্ভরশীল ওয়াশিংটন। চিনের নাম না করে লয়েড বলেন, বর্তমানে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় উভয় দেশই চ্যালেঞ্জের সামনে রয়েছে। সমান মানসিকতার দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই একমাত্র সেই চ্যালেঞ্জকে রোখা সম্ভব। বর্তমান সময়ে যে ভাবে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে, তাতে ওই এলাকায় স্থিরতা বজায় রাখতে ভারতের আরও বৃহত্তর ভূমিকা পালনের উপরে জোর দিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব। আজ চিনের নাম না করে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমান ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জের কথা মাথায় রেখে ভারত ও আমেরিকা তাদের সামরিক সহযোগিতা আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ নিজের বক্তব্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ পরিবর্তিত বিশ্বে দু’দেশের এক সঙ্গে কাজ করার উপরে জোর দেন।
আজ দুই দেশের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সামরিক বিষয় ছাড়াও অন্যান্য বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সামরিক ক্ষেত্রে আমেরিকার বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সে দেশের প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংস্থাগুলিকে এ দেশে শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন রাজনাথ। এ ছাড়া সেনা সহযোগিতা ও সামরিক পণ্য আদানপ্রদানে পরস্পরকে সাহায্য করার প্রশ্নে রাজি হয়েছে দু’দেশ। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র ছাড়াও তথ্য আদানপ্রদান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত প্রযুক্তি, মহাকাশ ও সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করবে ভারত ও আমেরিকা।