এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ। ফাইল চিত্র।
রাশিয়া থেকে এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা কেনায় ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করতে উদ্যোগী হয়েছিল পূর্বতন আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জমানায় কার্যত জল ঢেলে দেওয়া হল সেই উদ্যোগে। আমেরিকার কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভসে পাশ হওয়া একটি আইন সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চিনের মতো আগ্রাসী শক্তিকে ঠেকাতে ভারত যদি রাশিয়া থেকে এস-৪০০ কেনে, তা হলে কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা যাবে না।
ট্রাম্পের সময়ই এস-৪০০ কেনা নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে ‘কাউন্টারিং আমেরিকাজ অ্যাডভারসারিজ থ্রু স্যাঙ্কশনস্ অ্যাক্ট’ (কাটসা) আইন অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা জারির প্রক্রিয়া প্রত্যাহারের দাবি তুলেছিলেন আমেরিকার কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভস এবং উচ্চকক্ষ সেনেটের একাধিক সদস্য। শুক্রবার তা মেনে নেওয়ার পদক্ষেপ শুরু করল বাইডেন সরকার।
২০১৭ সালে চালু করা ‘কাটসা’ আইন অনুযায়ী রাশিয়া, ইরান এবং উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনলে যে কোনও দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপাতে পারে ওয়াশিংটন। কিন্তু নয়াদিল্লির পক্ষের সেনেটর ও কংগ্রেসম্যানদের মতে, বর্তমানে আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা সহযোগী ভারত। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে মস্কো থেকে সমরাস্ত্র কিনছে নয়াদিল্লি। এ ক্ষেত্রে তাই শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা যায় না।
ভারতের সামনে ‘চিনা আগ্রাসনের বিপদের’ যুক্তিও দিয়েছিলেন তাঁরা। পাশাপাশি বাইডেনকে চিঠি পাঠিয়ে দাবি করেছিলেন, কাটসা আইন রূপায়ণের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাশিয়ার অন্যায় আচরণগুলির বিরোধিতা করা। আমেরিকার কোনও সহযোগী রাষ্ট্রকে বিব্রত করা নয়। শুক্রবার হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভসে ভারতকে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাবটি ধ্বনিভোটে গৃহীত হওয়ার পরে কংগ্রেসম্যান আর খন্না বলেন, ‘‘এটি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। চিনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনের মোকাবিলায় অবশ্যই ভারতের পাশে দাঁড়াতে হবে আমেরিকাকে।’’
প্রসঙ্গত, ২০১৯-এর গোড়ায় রাশিয়া থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা কেনা নিয়ে নয়াদিল্লির তৎপরতা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প। জানিয়েছিলেন, মস্কোর সঙ্গে এস-৪০০ কেনার চুক্তি বাতিল করলে ভারতকে ‘টার্মিনাল হাই অলটিটিউড এরিয়া ডিফেন্স’ (থাড) এবং পেট্রিয়ট-৩ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী বিক্রি করবে ওয়াশিংটন। কিন্তু পত্রপাঠ সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। এর পরেই কাটসা আইন প্রয়োগ করার তৎপরতা শুরু করে ট্রাম্প সরকার।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে প্রথম রুশ বাহিনীতে এস-৪০০ অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০১৪-য় এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা কেনার বিষয়ে মস্কোর সঙ্গে যোগাযোগ করে নয়াদিল্লি। এর পর আমেরিকার হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে এস-৪০০ কেনার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। ২০১৮ সালের অক্টোবরে পুতিনের দিল্লি সফরের সময় এ বিষয়ে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার চুক্তি সই হয়েছিল। ইতিমধ্যেই রাশিয়া থেকে পাঁচটি এস-৪০০ ট্রায়াম্প ভারতে এসে পৌঁছেছে।