ফাইল চিত্র।
সোনা-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের ইস্তফার দাবিতে বিমানের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছিল কয়েক দিন আগে। তার পাল্টা আবার কংগ্রেসের রাজ্য দফতর ইন্দিরা ভবনে ভাঙচুর, বিরোধী দলনেতার বাড়িতে ঢুকে পড়ার ঘটনা ঘিরে উত্তপ্ত ছিল কেরলের রাজনীতি। কিন্ত সিপিএম-কংগ্রেসের এই বিরোধের আবহের মধ্যেই স্বয়ং রাহুল গান্ধীর সাংসদ কার্যালয়ে বাম ছাত্র সংগঠনের হামলা প্রবল গোলমাল ও বিড়ম্বনা তৈরি করেছে সিপিএমের অন্দরে।
ওয়েনাড়ের সাংসদ রাহুলের কার্যালয়ে এসএফআইয়ের মিছিল থেকে হামলা হওয়ায় কেরলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। সূত্রের খবর, সাধারণ সম্পাদকের মতে, পরপর যখন রাজ্যে বেশ কিছু ঘটনা ঘটছে, সেই প্রেক্ষিতে দলের রাজ্য নেতৃত্বেরই উচিত ছিল যুব ও ছাত্র সংগঠনকে সংযত থাকার বার্তা দেওয়া। একে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী ঐক্যের বাতাবরণের মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে। তার উপরে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে রাহুল যাতে কেরলে গিয়ে আর বামেদের বিরুদ্ধে না দাঁড়ান, তার জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করার ভাবনা ছিল সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্বের। রাহুলের কার্যালয়ে বাম হামলা সব কিছুর উপরেই আপাতত জল ঢেলে দিয়েছে! বিপাকে পড়ে কেরল সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব আবার ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন জেলা নেতৃত্বের উপরে!
সিপিএম সূত্রের খবর, তিরুঅনন্তপুরমে কেরল সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে ওয়েনাড়ের ঘটনা নিয়ে তুলকালাম হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মনোভাব বুঝে ওয়েনাড়ের জেলা নেতৃত্বকে তিরস্কার করেছেন রাজ্য নেতারা। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি মুখ খুলেছিলেন আগেই। কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন এ বার আরও কড়া বার্তা দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রতিবাদের বিষয় যা-ই হোক, এমন ঘটনা ঘটার কোনও কারণ ছিল না। এই ধরনের ঘটনা একটা দলকে মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। দলের সদস্যদের কেউ এতে জড়িত থেকে থাকলে সাংগঠনিক স্তরে কড়া ব্যবস্থা হবে।’’ প্রশাসনিক স্তরে এখনও পর্যন্ত ওই ঘটনায় ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, পর্যাপ্ত সতর্কতা না নেওয়ায় পুলিশের এক অফিসারকে সাসপেন্ডও করা হয়েছে।
রাজ্য কমিটির বৈঠকে সিপিএমের ওয়েনাড় জেলা সম্পাদক পি গ্যাগারিন বলেন, জেলা সদর কালপেট্টায় ওই মিছিলের কর্মসূচি এসএফআই তাঁদের জানিয়েছিল। কিন্তু মিছিল থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে, এটা তাঁদের ধারণা ছিল না। রাজ্য কমিটিতে একাধিক নেতা পাল্টা বলেন, রাহুলের কার্যালয়ের দিকে ওই রকম মিছিল করতে দেওয়াই উচিত হয়নি দলের জেলা নেতৃত্বের।
কংগ্রেস প্রত্যাশিত ভাবেই এই ঘটনার ফায়দা তুলতে আসরে নেমেছে। সোনা-কাণ্ড এবং রাহুলের কার্যালয়ে হামলার প্রতিবাদে আগামী ২ জুলাই তিরুঅনন্তপুরমে রাজ্য সচিবালয় অভিযানের ডাক দিয়েছে তারা। ওয়েনাড়ে সিপিএমের কিছু কার্যালয়ে পাল্টা হামলা হয়েছে। এমনকি, দিল্লিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর এ কে জি ভবনের সামনেও মিছিল করে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়েছিল যুব কংগ্রেস। দলের অন্দরে প্রবল অস্বস্তি থাকলেও প্রকাশ্যে কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও মুখ খুলতে হচ্ছে সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বকে। ইয়েচুরি যেমন বলেছেন, ‘‘হামলার ঘটনাকে আমরা কোনও ভাবেই লঘু করে দেখিনি। সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক স্তরে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তার পরেও এই বিক্ষোভের মানে কী? বিমানে বিজয়নের বিরদ্ধে বিক্ষোভের পরে সিপিএম কিন্তু এআইসিসি-র দফতরে বিক্ষোভ দেখাতে যায়নি!’’
রাজ্য রাজনীতির বাধ্যবাধকতা বহু ক্ষেত্রেই জাতীয় সমীকরণের বিপরীতে থাকে। কিন্তু কেরলের বিরোধ কেন্দ্রীয় স্তরেও প্রভাব ফেলছে, তাঁদেরও জড়িয়ে যেতে হচ্ছে বলে আরও অস্বস্তি বাড়ছে ইয়েচুরিদের!