উপেন্দ্র কুশওয়াহা। —ফাইল চিত্র।
নিজের ‘ক্ষীর’ মন্তব্য নিয়ে জল্পনা শুরু হতেই রক্ষণাত্মক ভঙ্গিমা নিলেন কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ প্রতিমন্ত্রী উপেন্দ্র কুশওয়াহা। জানালেন, বিহারে কোনও নয়া রাজনৈতিক সমীকরণের জন্য ওই মন্তব্য করেননি তিনি। বরং ওই রাজ্যের প্রতিটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সৌহার্দ্য বাড়াতেই ‘ক্ষীর’ মন্তব্যের উপমা টেনেছেন।
সোমবার এ বিষয়ে নিজের অবস্থান নিয়েও মুখ খুলেছেন কুশওয়াহা। তাঁর দাবি, “যদুবংশী বলতে আরজেডি বা ব্রহ্মর্শী অথবা অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের কথা বলতে চাইনি। আসলে সমস্ত সম্প্রদায়ের মধ্যেই বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে চেয়েছি, যা আমরা ইতিমধ্যেই করছি।” এর কারণটাও জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “আমাদের দলের সামাজিক ভিত্তি বাড়ানোটা জরুরি।”
২৫ অগস্ট মণ্ডল কমিশনের প্রধান তথা বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বি পি মণ্ডলের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষেএক অনুষ্ঠানে উপেন্দ্র কুশওয়াহার এক মন্তব্যের পরই রাজনৈতিক শিবিরে জল্পনা শুরু হয়। বিহারে ‘ক্ষীর রাজনীতি’ শুরু করতে চাইছেন বলেও মনে করতে শুরু করেন রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ। রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টির সভাপতি কুশওয়াহা ওই অনুষ্ঠানে বলেন, “যদুবংশের দুধ এবং কুশবংশের চাল মিলে গেলে ক্ষীর তৈরি হতে বেশি সময় লাগবে না।”
আরও পড়ুন
রণক্ষেত্র পুরুলিয়া, ব্যাপক বোমাবাজি, পুলিশের গুলিতে ২কর্মীর মৃত্যু, দাবি বিজেপির
কুশওয়াহার ওই মন্তব্য ঘিরে অস্বস্তিতে পড়ে বিজেপি।বিষয়টি নিয়ে বিজেপি-র তরফে কোনও বক্তব্য পেশ না করা হলেও সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে আসরে নেমে পড়ে কংগ্রেস এবং আরজেডি-র মতো বিহারের বিরোধী দলগুলি। দিল্লিতে কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিংভি বলেন, “ভোট কাছে এলে ক্ষীর আরও মিষ্টি হবে। কত বড় থালা হবে সেটাও বোঝা যাবে। এখনও তা বলার সময় আসেনি।”পটনায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব টুইট করেন, “সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ক্ষীর শ্রমজীবী মানুষের আজ বড় প্রয়োজন। ‘পঞ্চমেওয়া’-র স্বাস্থ্যবর্ধক গুণ শুধু শরীর নয় সুস্থ সমাজ তৈরিতেও শক্তি দেবে।”
বিহারে যাদব জনজাতির মানুষজন মূলত গো-পালন এবং কুশওয়াহারা কৃষিকাজ করেই নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করেন। কুশওয়াহার ওই মন্তব্যের পরই জল্পনা শুরু হয়, রাজ্যে কি এনডিএ শরিক রাষ্ট্রীয় লোক সমতা দলের সঙ্গে বিরোধী আরজেডি-র কোনও নয়া সমীকরণ শুরু হতে যাচ্ছে? এনডিএ-তে কি বিদ্রোহ শুরু হচ্ছে? তবে এ দিন সমস্ত জল্পনাই উড়িয়ে দিয়েছেন স্বয়ং কুশওয়াহা। তাঁর বক্তব্য, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে অধিক সংখ্যক আসন ভাগাভাগি নিয়ে তাঁর দীর্ঘ দিনের লড়াইয়ের সঙ্গে ওই মন্তব্যকে জুড়ে দেওয়া যেতে পারে। তবে ঠিক কত সংখ্যক আসন চান তিনি, তা নিয়েও মুখ খোলেননি কুশওয়াহা।
আরও পড়ুন
এ বার কি রাহুল-ইয়েচুরিকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে আরএসএস?
গত ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে তিনটি আসনে জয়লাভ করেছিল রাষ্ট্রীয় লোক সমতা দল। তবে জেহানাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের জয়ী সাংসদ অরুণ কুমারের ‘বিদ্রোহে’র ফলে কার্যত তা দু’টি আসনে নেমে আসে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বকেও কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কুশওয়াহা। তিনি বলেন, “অটলজির মৃত্যুর পর রাজনৈতিক কার্যক্রম পিছনের সারিতে চলে গিয়েছে। বিজেপি নেতৃত্বের উচিত আসন ভাগাভাগি নিয়ে এখনই কথাবার্তা শুরু করে দেওয়া। তবে এ বিষয়ে এখনও কেউ আমার পরামর্শ চাননি।” আসন ভাগাভাগি নিয়ে বেশি দেরি করলে লোকসভা নির্বাচনে তার ফল ভুগতে হতে পারে বলে মনে করেন কুশওয়াহা।
আরও পড়ুন
৫০০ পরিবারের তৈরি জৈব জ্বালানিতে সফল ভাবে আকাশে উড়ল বিমান
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গে কুশওয়াহার সম্পর্ক যে একেবারেই মধুর নয়, তা কারও অজানা নয়। প্রাক্তন জেডিইউ নেতা কুশওয়াহা প্রকাশ্যেই বিহারের মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিদার বলে জানিয়েছেন। সেই লক্ষ্যেই রাজ্যে ‘ক্ষীর রাজনীতি’র অবতারণা বলে মনে করছেন অনেকে। তবে কি নীতীশ কুমারের এনডিএ-তে আসার পর রাজ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে তাঁর দলের সুযোগকমে আসছে? এ প্রশ্নের উত্তরে কুশওয়াহা সাফ মন্তব্য, “আমি শুধু আমার দলের অবস্থান নিয়েই চিন্তা করছি। দলীয় কর্মী এবং দলের স্বার্থের কথা নিয়ে ভাবতে চাই।”এনডিএ-তে ভাঙনের জল্পনাকেও উড়িয়ে তাঁর রক্ষণাত্মক মন্তব্য, “যদি রাষ্ট্রীয় লোক সমতা দলের শক্তি বাড়ে তাতে আখেরে এনডিএ-র শক্তিই বাড়বে। এবং নরেন্দ্র মোদী ফের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন।”
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)