প্রতীকী ছবি।
এক কিশোর-কিশোরীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে হেনস্থার অভিযোগ উঠল উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, কিশোরীর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে কিশোরকে ‘লাভ জেহাদ’-এর মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দশ দিন ধরে জেলে বন্দি রয়েছে ওই কিশোর। ঘটনাটি বিজনৌরের।
ঘটনার সূত্রপাত ১৫ ডিসেম্বর। কিশোরীর অভিযোগ, এক মুসলিম বন্ধুর সঙ্গে জন্মদিনের পার্টি থেকে ফিরছিল সে। রাত তখন সাড়ে ১১টা। হঠাৎই বেশ কয়েক জন তাদের ঘিরে ধরে চুরির অভিযোগ তুলে মারধর করতে শুরু করে। তার পর তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এর পরই কিশোরের বিরুদ্ধে ধর্মান্তরণের অভিযোগ আনেন কিশোরীর বাবা। সেই অভিযোগে পুলিশ ওই কিশোরকে গ্রেফতার করে।
যদিও কিশোরীর দাবি, ওই যুবক তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে আসছিল। এর সঙ্গে কোনও ধর্মান্তরণের যোগ নেই। একই দাবি করেছেন কিশোরীর মা। তিনি বলেন, “ছেলেটি আমার মেয়েকে বাড়িতে ছাড়তে আসছিল। পথেই ওদের ধরে গ্রামবাসীরা মারধর করেন। মেয়ে ও তার সঙ্গী তাঁদের কাছে বলেছিল যে, ওরা জন্মদিনের পার্টি থেকে ফিরছে। কিন্তু গ্রামবাসীরা কোনও কথা শোনেননি।”
পুলিশ পাল্টা দাবি করেছে, মেয়েটি নিখোঁজ ছিল। ওই কিশোর তাকে অপহরণ করেছিল। কিন্তু মেয়েটি কোনও রকমে পালিয়ে এসেছে। বিজনৌরের শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক সঞ্জয় কুমার বলেন, “কয়েক দিন ধরে একটি মেয়ে নিখোঁজ ছিল। একটি মুসলিম যুবক হিন্দু পরিচয় দিয়ে তাকে নিয়ে পালায় এবং ধর্ম পরিবর্তন করায়। কিন্তু মেয়েটি পালিয়ে এসেছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
তবে পুলিশ এই দাবি করলেও কিশোরীর গ্রামপ্রধান বিনোদ সাইনি কিন্তু আবার অন্য দাবি করেছেন। তাঁর দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে ‘লাভ জেহাদ’-এর কোনও সম্পর্ক নেই। কিশোরীর পরিবার তাঁকে জানিয়েছেন, তাঁদের মেয়ের সঙ্গে ওই কিশোরের পরিচয় রয়েছে। তারা জন্মদিনের পার্টি থেকে ফিরছিল। তাদের চোর ভেবে গ্রামবাসীরা পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
সাইনি বলেন, “খবর পেয়ে থানায় যাই কিশোরীর বাবাকে নিয়ে। কোনও আইনি ব্যবস্থা যাতে না নেওয়া হয়, লিখিত ভাবে জানান কিশোরীর বাবা। কিশোরীকে থানা থেকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। এর পরই ফের থানা থেকে ফোন আসে যে, কিশোরীকে সেখানে নিয়ে যেতে হবে। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কেন নিয়ে যেতে হবে। তখন এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, এটা ‘লাভ জেহাদ’-এর মামলা।”
এর পরই বিজনৌর পুলিশ একটু টুইট করে এই ঘটনাটিকে ‘লাভ জেহাদ’-এর মামলা বলে দাবি করে। পুলিশের দাবি, কিশোরীর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কিশোরীর বাড়ি থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে কিশোরের বাড়ি। সংবাদ সংস্থার কাছে কিশোরের মা দাবি করেন, “আমার ছেলে জন্মদিনের পার্টিতে গিয়েছিল। পর দিন সকালে জানতে পারলাম, পুলিশ ওকে গ্রেফতার করেছে। খুব মেরেছে। আমার ছেলে নির্দোষ।”