বুলন্দশহর জেলার সিয়ানা সার্কেলের অফিসার শ্রেষ্ঠা ঠাকুর। ছবি: সংগৃহীত।
তাঁকে বদলি করা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। এ বার সেই বিতর্কে মুখ খুললেন উত্তরপ্রদেশের পুলিশ অফিসার শ্রেষ্ঠা ঠাকুর নিজেই। এই বদলিকে কাজের অঙ্গ হিসেবে মেনে নিয়েছেন। পাশাপাশি, তিনি যে অসন্তুষ্ট নন, তা-ও জানিয়েছেন শ্রেষ্ঠা। গত ২২ জুন উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে বিনা হেলেমেটে বাইকে চড়ে ঘুরে বেড়ানো এক বিজেপি নেতাকে আটক করে জরিমানা করেছিলেন পুলিশ অফিসার শ্রেষ্ঠা। সেই ‘অপরাধ’-এ গতকাল তাঁকে বদলি করে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। সিদ্ধান্তের পরই নতুন করে শুরু হয় বিতর্ক।
এ বার বদলি প্রসঙ্গে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন খবরের শিরোনামে উঠে আসা ওই মহিলা পুলিশ অফিসার। রবিবার রাতে ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘‘নেপাল সীমান্তের বাহরাইচে বদলি হয়ে গিয়েছি। কোনও চিন্তা নেই বন্ধুরা। আমি খুশি। এটাকে আমি ভাল কাজের পুরস্কার হিসেবে দেখছি। আপনাদের বাহারইচে আমন্ত্রণ।’’
ঘটনার সূত্রপাত গত ২২ জুন উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে। বিনা হেলমেটে মোটরবাইক চালানোয় স্থানীয় বিজেপি নেতা প্রমোদ লোধিকে ২০০ টাকা স্পট ফাইন করেন সিয়ানা সার্কলের মহিলা অফিসার শ্রেষ্ঠা। প্রমোদ তা দিতে অস্বীকার করে নিজের রাজনৈতিক পরিচয় দেন। জানান তিনি বিজেপি নেতা এবং তাঁর স্ত্রীও বুলন্দশহর জেলা পঞ্চায়েতের সদস্য। এতেও কাজ না হওয়ায় এলাকার কিছু বিজেপি কর্মীকে ফোন করে ডেকে পাঠান। দলবল মিলে চাপ দেওয়া শুরু হয়। শুরু হয় ধমকধামক, আঙুল তুলে শাসানি। কিন্তু পাল্টা আঙুল তুলে শ্রেষ্ঠা বুঝিয়ে দেন, তিনি সরকারি কাজ করছেন এবং দোষীরা যে দলেরই হোন তাঁদের ছেড়ে দেবেন না। ভিডিওয় তাঁকে দৃঢ় ভাবে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আপনি যান, মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে লিখিত নির্দেশ নিয়ে আসুন যে পুলিশের গাড়ি পরীক্ষা করার কোনও অধিকার নেই। পুলিশ নিজের কাজ করতে পারবে না। পরিবারের লোকজনকে ভুলে আমরা রাতে কাজ করি। মজা করার জন্য নয়।’’ শেষ পর্যন্ত ফাইন আদায়ের পাশাপাশি, পুলিশকে কর্তব্য পালনে বাধা দেওয়ায় পাঁচ বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতারও করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ‘কর্তব্য’ করায় মহিলা পুলিশ অফিসার বদলি
শ্রেষ্ঠা এবং অন্য পুলিশকর্মীদের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের তুমুল বচসার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ভাইরাল’ হয়ে যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবি ভাইরাল হতেই বিতর্ক শুরু। অনেকেই শ্রেষ্ঠার প্রশংসার পাশাপাশি যোগী-রাজ্যে বিজেপির দাদাগিরির বিরুদ্ধে সরব হন। আঁতে ঘা লাগে বিজেপি নেতা-কর্মীদের। ১১ জন বিধায়ক ও এক সাংসদ-সহ বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নালিশও করে। এর পরেই শ্রেষ্ঠাকে বাহরাইচে বদলি করা হয়। যদিও প্রশাসন জানায়, এটি রুটিন বদলি। এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক চাপ নেই। কিন্তু দলের নেতাদের ‘মর্যাদা রক্ষা’র জন্যই শ্রেষ্ঠাকে বদলি করা হয়েছে বলে দাবি করে বিতর্ক বাড়িয়েছেন সিয়ানায় বিজেপির শহর সভাপতি মুকেশ ভরদ্বাজ।
এ বার সেই বিতর্ক তা ধামাচাপা দিতে মুখ খুললেন স্বয়ং পুলিশ অফিসার শ্রেষ্ঠা ঠাকুর।