উত্তরপ্রদেশে প্রথম দফা। শনিবার মুজফ্ফরনগরে। — পিটিআই
সাদা চোখে উত্তরপ্রদেশের আর পাঁচটা গ্রামের সঙ্গে বিসারার কোনও ফারাক নেই। দিল্লি লাগোয়া উত্তরপ্রদেশের গৌতমবুদ্ধ নগর জেলার দাদরি এলাকার এই গ্রামেও আজ ছিল ভোটযজ্ঞের আয়োজন। আর পাঁচটা গ্রামের মতোই।
আজ উত্তরপ্রদেশে প্রথম দফার বিধানসভা ভোটে ১৫টি জেলার ৭৩টি আসনে ৬৪.২ শতাংশ ভোট পড়েছে। পাঁচ বছর আগে এখানে ভোটের হার ছিল ৬১.২ শতাংশ। অর্থাৎ ভোট বেড়েছে। কিন্তু যে পরিবারের একটি বিপর্যয়ের জন্য জাতীয় রাজনীতির পটে দাদরির পরিচিতি, সেই মহম্মদ আখলাকের পরিবারই আজ ছিল ভোটযজ্ঞে অনুপস্থিত।
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫। সেই রাতে বিসারার গ্রামবাসী, ৫০ বছরের মহম্মদ আখলাককে গোমাংস খাওয়ার অভিযোগে পিটিয়ে খুন করেছিল জনতা। মূলত ওই ঘটনার পরেই অভিযোগ উঠতে থাকে, নরেন্দ্র মোদী জমানায় বেড়ে চলেছে অসহিষ্ণুতা।
দেড় বছর কেটে গিয়েছে। গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছে আখলাকের পরিবার। ছেলে মহম্মদ দানিশ, মেয়ে শইস্তা সইফি— দু’জনেরই বয়স কুড়ি-পাঁচিশের মধ্যে। গ্রামে না থাকায় ভোটার তালিকা থেকে তাঁদের নাম কাটা গিয়েছে। মারধরের সময় বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে মাথায় চোট পেয়েছিলেন দানিশও। একাধিক বার তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচার হয়েছে। নতুন ঠিকানায় গিয়েও কিন্তু ভোটার কার্ডের আবেদন করেননি দানিশরা। আবার দাদরির ভোটার তালিকায় ফের নাম তুলতেও তেমন উদ্যোগী হননি। ভোট এড়িয়ে গিয়েছে আখলাকের ভাই জান মহম্মদের পরিবারও।
বিসারার হিন্দুরা দাবি করছেন, কারও ভয় নেই। সবাই ভোট দিতে পারেন। গ্রামের অন্য সংখ্যালঘুরাও তো ভোট দিয়েছেন। কিন্তু আখলাকের পরিবারের যুক্তি হল, গ্রামে ফিরলেই ভয়াবহ স্মৃতি ফিরে আসে। সেটা আর তাঁরা চান না।
চান না ঠিকই। কিন্তু ঘটনা হল, গৌতমবুদ্ধ নগরের রাজনীতিতেই এখন কার্যত পাকাপাকি একটা দাগ টেনে দিয়েছে আখলাক হত্যাকাণ্ড। এক এক সময়ে যা মনে পড়াচ্ছে ২০১৪-য় উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরে জাঠ-মুসলমান সংঘর্ষকে। লোকসভা ভোটের আগে তা থেকে মেরুকরণের ফায়দা তুলেছিল বিজেপি। কিন্তু সংরক্ষণের দাবি পূরণ না হওয়ায় এ বার জাঠেরাই বিজেপির পাশে থাকবেন কি না, সন্দেহ। গোপন বৈঠকে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ জাঠ নেতাদের বলেছেন, তাঁদের সমর্থন ছাড়া জেতা অসম্ভব। এবং বিজেপি জানে, মুজফ্ফরনগরের সংখ্যালঘুরা সপা-কংগ্রেস জোটকেই ভোট দেবেন।
তাই বিসারার ওই ঘটনার ‘ছায়াতেই’ গৌতমবুদ্ধ নগরের তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র— নয়ডা, দাদরি ও জেওয়ারে তিন রকমের কৌশল নিচ্ছে বিজেপি। নয়ডায় গিয়ে মহেশ শর্মার মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা সরাসরি হিন্দুত্বের রাজনীতি করছেন। গোহত্যার প্রসঙ্গ উস্কে দিয়ে বলছেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে সমস্ত বেআইনি কসাইখানা বন্ধ হবে। দাদরিতে সামান্য বদলাচ্ছে কৌশল। সেখানে মোগলদের বিরুদ্ধে রাজপুতদের সাহসিকতার কথা বলে জাঠ-মুসলমান মেরুকরণের রাজনীতি করছে বিজেপি। জেওয়ারে কংগ্রেস নেতা বিজেপিতে যোগ দিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছে সংখ্যালঘু ভোটও। তাই সেখানে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির কথা মনে করাতে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসও টানছেন।
কিন্তু ভোটে কী হবে? বেশি ভোট পড়ার অর্থ, প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা। কিন্তু সেই বিরোধিতার ভোট কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে যাবে, নাকি রাজ্যের অখিলেশ সরকারকে বিঁধবে— সেটাই বড় প্রশ্ন।