Gang Rape

হাথরস ধর্ষিতার দেহ মধ্যরাতে জোর করে পুড়িয়ে দিল পুলিশ

অভিযোগ, মেয়েটির বাবাকে শ্মশানে তুলে নিয়ে গিয়ে জোর করে দেহ সৎকার করতে বাধ্য করে পুলিশ।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লখনউ শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৯:০৪
Share:

দেহ সৎকার করছে পুলিশ। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।

গণধর্ষণের অভিযোগ নিতে গড়িমসি করলেও, হাথরসে গণধর্ষণের শিকার তরুণীর দেহ রাতারাতি দাহ করে ফেলল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। অভিযোগ, মাঝরাতে বাড়িতে ঢুকে মেয়েটির দেহ তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। আত্মীয়-স্বজন এবং গ্রামবাসীদরা বাধা দিতে গেলে তাঁদের ঘরে ঢুকিয়ে তালা মেরে দেয়। তার পর মেয়েটির বাবাকে গাড়িতে তুলে নেয় তারা। সেখান থেকে সটান শ্মশানে নিয়ে গিয়ে নির্যাতিতার দেহ দাহ করে ফেলা হয়।

Advertisement

টানা ১৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মঙ্গলবার দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে মৃত্যু হয় দলিত পরিবারের ওই ১৯ বছরের তরুণীর। তার পর হাসপাতাল থেকে দেহ হাতে পাওয়া নিয়েও পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা বাঁধে মেয়েটির পরিবারের। রাত ১০টা বেজে ১০ মিনিটে হাসপাতাল থেকে দেহটি ছেড়ে দেওয়া হলে, তাঁদের কিছু না জানিয়েই পুলিশ দেহটি নিয়ে চলে যায় বলে অভিযোগ করেন মেয়েটির বাবা ও দাদা। হাসপাতালের বাইরে ধর্নায়ও বসেন তাঁরা। পরে সেখান থেকে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে হাথরসের উদ্দেশে রওনা দেয় পুলিশ।

দেহটি হাথরসে বাইরে পৌঁছলে, মেয়েটির পরিবারের লোকজন, আত্মীয়-স্বজন এবং গ্রামবাসীরা পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। সুবিচার না পাওয়া পর্যন্ত মেয়েকে দাহ করবেন না বলে জানিয়ে দেন তাঁরা। কিন্তু অভিযোগ, শুরুতে পিছু হটলেও, মাঝরাতে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে পুলিশ। রাতেই দাহ করতে হবে বলে চাপ সৃষ্টি করে নির্যাতিতার পরিবারের উপর।

Advertisement

আরও পড়ুন: খবরে ফের হাথরস, এবার দলিত মহিলাকে অপহরণ টেম্পো চালকের​

তাতে নির্যাতিতার পরিবারের লোকজন তো বটেই, গ্রামবাসীরাও বেঁকে বসেন। পুলিশকে তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, হিন্দু রীতি মেনেই মেয়েকে দাহ করবেন, তবে রাতে নয়। এর পরেই পুলিশ তাঁদের উপর জোর খাটাতে শুরু করে বলে অভিযোগ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, নির্যাতিতার পরিবারকে এক পুলিশকর্মী বলছেন, ‘‘সময়ের সঙ্গে রীতি-নীতি বদলায়। তবে আপনারাও ভুল করেছেন। সেটা মেনে নিন।’’

স্থানীয় সূত্রে খবর, এর পরই নির্যাতিতার পরিবারের লোকজন, আত্মীয়-স্বজন এবং গ্রামবাসীদের তালাবন্ধ করে রেখে, দেহটি নিয়ে শ্মশানের উদ্দেশে বেরিয়ে পডে় পুলিশ। মেয়েটির বাবাকেও গাড়িতে তুলে নেয়। রাত পৌনে তিনটে নাগাদ নির্যাতিতার সৎকার করে ফেলে তারা। সৎকারের সময় শ্মশানের আলো নিভিয়ে রাখা হয়েছিল বলেও অভিযোগ।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেয়েটির দাদা বলেন, ‘‘জোর করে বোনের দেহ তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। শ্মশানে তুলে নিয়ে যায় আমার বাবারকেও। বোনের দেহ এক বার বাড়ির ভিতরে নিয়ে আসতে চাই বলে অনুরোধ করেছিলাম পুলিশকে। কিন্তু তা-ও করতে দেওয়া হয়নি।’’ পুলিশ যদিও এই অভিযোগ খারিজ করেছে। পরিবারের সম্মতিতেই নির্যাতিতাকে দাহ করা হয়েছে বলে পাল্টা দাবি করেছে তারা। কিন্তু মেয়েটিকে দাহ করা নিয়ে এত তাড়াহুড়ো কেন করল তারা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘ভারতের এক কন্যাকে ধর্ষণ করে খুন করা হল। সমস্ত তথ্য চেপে দেওয়া হল, এমনকি মেয়ের সৎকারের অধিকারও কেড়ে নেওয়া হল পরিবারের কাছ থেকে, যা অত্যন্ত অপমানজনক এবং অন্যায়পূর্ণ। ’’

কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী টুইটারে লেখেন, ‘‘হাথরস নির্যাতিতা যখন মারা যান, তখন ওঁর বাবার সঙ্গে ফোনে কথা হচ্ছিল আমার। ফোনে ওঁর কান্না শুনেছিলাম। আমাকে বলছিলেন, উনি শুধু মেয়ের জন্য সুবিচার চান। গতকাল রাতে শেষ বারের জন্য মেয়েকে বাড়িও নিয়ে যেতে পারনিনি তিনি। নিজেহাতে শেষকৃত্যও সম্পন্ন করতে পারেননি।’’

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ইস্তফাও দাবি করেন প্রিয়ঙ্কা। তিনি লেখেন, ‘‘যোগী আদিত্যনাথ পদত্যাগ করুন। নির্যাতিতা এবং তাঁর পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়ার বদলে, মৃত্যুর পরেও তাঁর মানবাধিকার কেড়ে নিতেও মদত দিয়েছে আপনার সরকার। মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকার কোনও নৈতিক অধিকারই নেই আপনার।’’

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ওই তরুণীকে গণধর্ষণ করে গ্রামেরই চার যুবক। অকথ্য শারীরিক অত্যাচারও চালানো হয় তাঁর উপর। প্রচণ্ড মারধরের পাশাপাশি, শ্বাসরোধ করে তাঁকে খুনের চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। মুখের একাধিক জায়গা এবং জিভ কামড়ের গভীর ক্ষতও করে দেয় তারা। নির্যাতিতাকে উদ্ধার করে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়, তাঁর দুই পা এবং একটি হাত অসাড় ছিল। মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল শিরদাঁড়া এবং ঘাড়। প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালেই চিকিৎসা চলছিল তাঁর। পরে দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই গতকাল মৃত্যু হয় তাঁর।

আরও পড়ুন: বাবরি মসজিদ নির্মাণ থেকে ধ্বংস, পাঁচ শতকের সালতামামি​

প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে। শ্বাসরোধ করে খুনের চেষ্টাও করে দুষ্কৃতীরা। মুখমণ্ডলে একাধিক জায়গা, জিভে কামড়ের গভীর ক্ষত। শিরদাঁড়া ও ঘাড় মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। অসাড় ছিল দুই পা এবং একটি হাত। আইসিইউ-তে রেখে সব রকম চেষ্টা চালানো হচ্ছিল। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সিদ্ধান্ত হয় দিল্লির হাসপাতালে পাঠানোর।

তবে অবস্থা আশঙ্কাজনক জেনেও নির্যাতিতাকে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এমস)-এ ভর্তি করা হল না কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভীম আর্মির নেতা চন্দ্রশেখর আজাদ। দিল্লির সফদরজং হাসপাতালের বাইরে বিক্ষোভও দেখান ভীম আর্মির সদস্যরা। তবে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের অভিযোগ, এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে কিছু লোক রাজনৈতিক সুবিধা নিতে নেমে পড়েছেন।

তবে গোটা ঘটনায় শুরু থেকেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছেন নির্যাতিতার পরিবারের লোকজনও। তাঁদের অভিযোগ, অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ প্রথমে কোনও কথাই শুনতে চায়নি। দ্রুত পদক্ষেপ করেনি। ঘটনার চার-পাঁচ দিন পর তদন্ত শুরু করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement