ফাইল চিত্র।
উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে বিজেপি-র প্রধান কৌশল ধর্মীয় মেরুকরণকে ফের দ্বিতীয় দফা ভোটের দিনে কাজে লাগালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। আজ সকালেই তাঁর ঘোষণা, ‘কয়ামত’-এর দিন পর্যন্ত যাঁরা চাইছেন তাঁদের ‘গজ়ওয়া-ই-হিন্দ’–এর স্বপ্ন পূরণ হবে না। তাঁর কথায়, ‘‘দেশ চলবে সংবিধান দিয়ে, শরিয়ত আইন দিয়ে নয়।’’
সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যোগীর বক্তব্য, “এই ভারত, নতুন ভারত। বিশ্বের জনপ্রিয়তম নেতা নরেন্দ্র মোদীর পরিচালিত ভারত। এই নতুন ভারত সব কা সাথ সব কা বিকাশের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। এখানে কোনও রকম স্বজনপোষণের জায়গা নেই।’’ বিজেপি-র শীর্ষ নেতা আরও বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্য সবার উন্নয়ন, সবার বিশ্বাস অর্জন করা। নয়া ভারত চলবে সংবিধান দিয়ে, শরিয়ত দিয়ে নয়।’’
আজ উত্তরপ্রদেশে ৫৫টি গুরুত্বপূর্ণ আসনে ভোটপর্ব ছিল। তাঁর এই ‘গজ়ওয়া-ই-হিন্দের’ বিরুদ্ধে তোপ দাগার বিষয়টি যাতে রাজ্যবাসীর কানে পৌঁছায়, তা নিশ্চিত করতে এই একই কথা নিজের টুইটার হ্যান্ডল থেকেও পোস্ট করেছেন যোগী আদিত্যনাথ। গজ়ওয়া-ই-হিন্দের অর্থ, ভারতীয় উপমহাদেশে অ-মুসলমানদের সঙ্গে মুসলমানদের জেহাদ, যেখানে পরিণামে মুসলমানদেরই জয় হবে।
সোমবার কর্নাটকে চলতি হিজাব বিতর্ককেও ভোটের দিন কাজে লাগাতে চেয়ে সামনে নিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘স্কুল কলেজে একই পোশাক
সকলের পরা উচিত। আর গেরুয়া চাদর ব্যবহারেও কাউকে জোরাজুরি করা উচিত নয়। করাও হয় না।’’ তিনি বলেন, “আমি কি উত্তরপ্রদেশের লোকজন ও শ্রমিকদের গেরুয়া কাপড় পরতে বলছি? তাঁরা কী পরবেন সেটা তাঁদের ইচ্ছে। কিন্তু স্কুলে ড্রেস কোড থাকা উচিত। এটি স্কুলের শৃঙ্খলার বিষয়।” এমআইএম প্রেসিডেন্ট আসাদুদ্দিন ওয়েইসি সম্প্রতি মন্তব্য করেন, ‘হিজাব পরা মেয়েই এক দিন দেশের প্রধানমন্ত্রী হবে।’ যোগী আদিত্যনাথ জবাবে কেন্দ্রের তিন তালাক সংক্রান্ত আইনের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দেশের প্রত্যেক মহিলার স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষা বিজেপি সরকারের উদ্দেশ্য। এই লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রী মোদী তিন তালাক বন্ধ করেছেন। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, শরিয়তি আইন দিয়ে দেশ চলবে না।’’
উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, রাজ্যে ২০১৭-এর বিধানসভা ভোটের মতো মোদী-হাওয়া এ বার অনুপস্থিত। বরং গত পাঁচ বছর সরকারে থাকা যোগী সরকারের বিরুদ্ধে গভীর অসন্তোষ তৈরি হয়েছে হিন্দু ভোটারদের মধ্যেও। কৃষক আন্দোলনের জেরে বিগড়ে রয়েছে জাঠ সম্প্রদায়। এমনকি, বঞ্চনার অভিযোগ রয়েছে ব্রাহ্মণ ভোটব্যাঙ্কের। একই সঙ্গে, দলিত, তফসিলি জাতি ও অন্য অনগ্রসর শ্রেণির দীর্ঘ বিক্ষোভ প্রকাশ্যেই । করোনার মারাত্মক ঢেউয়ে জলে ভেসে যাওয়া শবের দুঃস্বপ্ন, শোকগ্রস্ত পরিবারগুলিতে এখনও টাটকা। তাই কোনও রাখঢাক না করেই বারবার কিছুটা মরিয়া হয়েই যোগীকে ধর্মীয় মেরুকরণের চিত্রনাট্য তৈরি করতে দেখা যাচ্ছে। কখনও তিনি বিরোধীদের ‘তালিবান’ বলছেন, আবার কখনও উত্তরপ্রদেশের ভোটকে ‘৮০ বনাম ২০ শতাংশের লড়াই’ বলে মন্তব্য করেছেন। তারই নবতম সংস্করণ এই ‘গজ়ওয়া-ই-হিন্দ।’