প্রতীকী ছবি।
উত্তরপ্রদেশের বিশ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ জাঠ সম্প্রদায়ের। সংখ্যায় কম হলেও এই সম্প্রদায়ের প্রভাব রাজ্যের অন্তত ৭৫টি আসনে প্রবল। যে কোনও দলের হারজিত নির্ণয় করে দিতে যে সংখ্যা অতি গুরুত্বপূর্ণ। তেমনই ৫৮টি কেন্দ্রে ভোট হল আজ। সংখ্যায় নগণ্য জাঠদের প্রভাব অন্য পর্বগুলিতেও সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে বলে মনে করছেন রাজনীতির বিশ্লেষকেরা। আর সে কারণেই বিজেপি, এসপি এবং আরএলডি— তিনটি মুখ্য দলই প্রথম দফার মতো বাকি দফাগুলিতেও ঝাঁপাচ্ছে, জাঠ মন জয়ে।
পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে জাঠ সম্প্রদায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে বরাবর সফল জোট গড়তে সক্ষম হয়েছে বিজেপির উত্থানের আগে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত লোক দল (এখন আরএলডি) জাঠ-মুসলিম সমীকরণকে কাজে লাগিয়ে ভোটর ময়দানে লাভ কুড়িয়েছে। তার পরে মুজফ্ফরনগরের সাম্প্রদায়িক অশান্তির পর হিসাবটা বদলে গিয়ে এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সদ্ভাব নষ্ট হয়। তবে চলতি নির্বাচনে এসপি এবং আরএলডি উভয়ের দাবি, উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে পুরনো ঘনিষ্ঠতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
জাঠদের খুশি করার জন্য অক্লান্ত প্রয়াস করছে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের টিম-ও। ভোট শুরু হওয়ার আগে যোগী নিজে সপ্তদশ শতকের জাঠ যোদ্ধা গোকুল সিংহের স্মৃতিকে উস্কে প্রচার করেছেন। মোঘল সম্রাট অওরঙ্গজেবের সঙ্গে গোকুলের যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনেছেন। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে গোকুলকে আজও সম্মান করা হয়। এর ফলে যোগী এক দিকে জাঠ গৌরবের ভাষ্য তৈরি করলেন। অন্য দিকে হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণের পথও প্রশস্ত করতে চাইলেন। মুসলিমদের সঙ্গে জাঠদের গাঁটছড়ায় কিছুটা জল ঢালার চেষ্টা হিসাবেও দেখা হচ্ছে বিষয়টিকে।
ধর্মের ভিত্তিতে এই জাঠ তোষণের দিকটি নিয়ে অখিল ভারতীয় জাঠ মহাসভার একটি অংশ সতর্ক এই বছর। এক সদস্যের কথায়, “রাজনৈতিক দলগুলি ভোট ব্যাঙ্ক রাজনীতির জন্য এই সম্প্রদায়কে ব্যবহার করছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। জাঠদের হিন্দু সত্তাটাই শেষ কথা তো নয়। তা ছাড়া জাঠদের অধিকাংশই কৃষক। এমনিতেই তারা বিজেপি সরকারের উপর ক্ষুব্ধ।”
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিংহ কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে ষাটের দশকের শেষে যখন ভারতীয় ক্রান্তি দল গঠন করেন এবং জাঠ সম্প্রদায়কে নিজের চারপাশে প্রতিষ্ঠা করেন, সেই তখন থেকেই ভোট ব্যাঙ্ক হিসাবে তাদের গুরুত্ব বাড়ে। তাঁর মৃত্যুর পর ঐতিহ্য ধরে রেখে, এই সম্প্রদায়কে আরও বেশি করে কাজে লাগাতে সচেষ্ট ছিলেন তাঁর পুত্র অজিত সিংহ। তবে ২০১৪ সালে বিজেপির উত্থানের পর অজিত সিংহের ক্ষমতাও খর্ব হয়। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, তখন থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ ভোট ব্যাঙ্ককে নিজেদের দিকে টানতে শুরু করে গেরুয়া শিবির।
উত্তরপ্রদেশ চলতি নির্বাচনে হিসাব ফের বদলে যেতে পারে বলে আশা করছে এসপি-আরএলডি শিবির।