বিজেপি সূত্রের অবশ্য বক্তব্য, সব রাজ্যের পড়ুয়ারাই ইউক্রেনে রয়েছেন। এর মাধ্যমে সরাসরি তাঁদের ও তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরির রাস্তা তৈরি হচ্ছে। বিজেপি সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’ বলে প্রচারও শুরু করেছে। মোদী থাকলে মঙ্গলগ্রহ থেকেও ভারতীয়দের উদ্ধার করে আনা হবে বলেও বিজেপি প্রচার শুরু করেছে।
ফাইল চিত্র।
‘অপারেশন গঙ্গা’ নরেন্দ্র মোদীর ‘অপারেশন উত্তরপ্রদেশ’-এর অস্ত্রের সম্ভারে ঢুকে পড়ল।
রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করার পরে সে দেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধারে যে অভিযান চালু হয়েছে, মোদী সরকারের তরফে তার নাম ‘অপারেশন গঙ্গা’ রাখা হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেনের সঙ্গে গঙ্গা জুড়ে দেওয়ার পরেই বিরোধী শিবির টের পেয়েছিল, ভোটের উত্তরপ্রদেশে ভাবাবেগকেও ছোঁয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এই অভিযান শুরুর পরে আজ প্রথম বার উত্তরপ্রদেশে প্রচারে গিয়েই নরেন্দ্র মোদী ‘অপারেশন গঙ্গা’-র ঢাক পেটালেন। আর ইউক্রেন থেকে ভারতীয় পড়ুয়াদের বিমান মুম্বই, দিল্লিতে পৌঁছনো মাত্রই মোদী সরকারের মন্ত্রীরা তাঁদের সামনে হাজির হয়ে জানিয়ে দিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগেই তাঁদের ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পড়ুয়াদের তাঁদের ‘মাতৃভূমি’-তে স্বাগত জানিয়ে, তাঁদের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিয়ে পীযূষ গয়াল, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ও বিজেপির নেতানেত্রীরা জানিয়েছেন, বাকিদেরও ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পড়ুয়ারা যেন ইউক্রেনে আটকে থাকা বন্ধুবান্ধবদের সে কথা জানিয়ে দেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ উত্তরপ্রদেশে বস্তি, দেওরিয়া, বারাণসীতে প্রচার করেছেন। ইউক্রেনে যখন ভারতীয়েরা আটকে রয়েছেন, তখন প্রধানমন্ত্রী কেন সে দিকে অগ্রাধিকার না দিয়ে দিনভর উত্তরপ্রদেশে বিজেপির হয়ে প্রচারে সময় দিচ্ছেন, তা নিয়ে রবিবার সকালেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন। মোদী উল্টে ‘অপারেশন গঙ্গা’-কেই নির্বাচনী হাতিয়ার করে বস্তির জনসভাতে বলেন,
“অপারেশন গঙ্গা-য় আমরা ইউক্রেন থেকে হাজার হাজার ভারতীয়কে ফিরিয়ে আনছি। আমাদের যে সব ছেলেমেয়ে এখনও ওখানে রয়েছে, তাদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে নিজেদের বাড়ি পৌঁছে দিতে সরকার দিন রাত কাজ করছে।”
কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে বলেছিলেন, “ক্ষেপণাস্ত্র-বোমার মাঝে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে বাঙ্কারে খিদে-তেষ্টার মধ্যে কোনও মতে শ্বাস নিচ্ছেন। কিন্তু এখানে প্রচারজীবী আত্মমুগ্ধতার শয্যায় শুয়ে নির্বাচনী অক্সিজেন শুঁকছেন। ক্ষমতার মোহে সমবেদনা হারিয়ে গিয়েছে। দেশকে আর কত বার এ সব দেখতে হবে?” প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশের প্রচার সেরে সন্ধ্যাবেলা দিল্লি পৌঁছেই নরেন্দ্র মোদী ইউক্রেন নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন।
শনিবার রাতে রোমানিয়া থেকে ইউক্রেনে আটকে থাকা ২১৯ জন পড়ুয়াকে নিয়ে ‘অপারেশন গঙ্গা’-র প্রথম বিমান মুম্বইয়ে পৌঁছয়। তার পরে রবিবার ভোর রাতে আরও একটি বিমান দিল্লিতে পৌঁছয়। মুম্বইয়ে পীযূষ গয়াল, দিল্লিতে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া-সহ বিজেপির নেতানেত্রীরা পড়ুয়াদের স্বাগত জানান। মন্ত্রীরা সরাসরি বিমানে উঠে গিয়ে পড়ুয়াদের জানান, নরেন্দ্র মোদী নিজে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেছেন। উদ্ধার অভিযান নিয়ে এ ভাবে রাজনীতি করার সমালোচনা করে শিবসেনার নেত্রী প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী বলেন, “উদ্ধার করে আনার পরে ক্লান্ত পড়ুয়াদের সামনে এ ভাবে রাজনৈতিক বক্তৃতা করা হচ্ছে, এটা কল্পনাও করা যায় না। তাঁদের বোঝানো হচ্ছে, কী ভাবে উদ্ধার করা হল। কতটা নিরাপত্তার অভাব হলে উদ্ধারের কাজকেও কৃতজ্ঞতা হিসেবে
দেখানো যায়।”
বিজেপি সূত্রের অবশ্য বক্তব্য, সব রাজ্যের পড়ুয়ারাই ইউক্রেনে রয়েছেন। এর মাধ্যমে সরাসরি তাঁদের ও তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরির রাস্তা তৈরি হচ্ছে। বিজেপি সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’ বলে প্রচারও শুরু করেছে। মোদী থাকলে মঙ্গলগ্রহ থেকেও ভারতীয়দের উদ্ধার করে আনা হবে বলেও বিজেপি প্রচার শুরু করেছে। অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রী উত্তরপ্রদেশে নাম না
করে কংগ্রেস, এসপি-কে নিশানা করেছেন। বলেছেন, ‘পরিবারবাদী’-রা দেশের সেনার প্রয়োজনের দিকে নজর দেননি। সমরাস্ত্র কেনায় বেআইনি ‘কমিশন’ নিয়েছে। এখন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বলে দিচ্ছে, সেনাকে আরও মজবুত করতে হবে। আত্মনির্ভর করতে হবে। শনিবার বালাকোটে বায়ুসেনার হানার তৃতীয় বর্ষপূর্তি ছিল। তা মনে করিয়ে মোদী বলেছেন, ‘‘দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশে বসে থাকা পরিবারবাদীদের এই পরাক্রম পছন্দ হয় না। তাঁরা সেনার বীরত্বের প্রমাণ চান, সন্দেহ প্রকাশ করেন।’’