প্রিয়ঙ্কা যখন ওই প্রশ্ন তুলছেন তখন আর একটি জনসভায় এসপি ও কংগ্রস নেতাদের বিঁধে প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, ‘‘যাঁরা জঙ্গিদের নির্দোষ মনে করেন, তাদের শাস্তি থেকে মুক্ত করে দেন— তাঁদের দলকে কি ভোট দেওয়া উচিত?’’
ফাইল চিত্র।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখে, বসন্তের কোকিল। আর নরেন্দ্র মোদীর মতে, মরসুমি নেতা। উভয় ক্ষেত্রেই আক্রমণের লক্ষ্য এক— কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।
উত্তরপ্রদেশের ভোটে বিজেপির মূল লড়াই সমাজবাদী পার্টি (এসপি)-র সঙ্গে হলেও, আজ পঞ্চম দফার ভোটের প্রচারে কপিলাবস্তুতে কিছুটা ছকের বাইরে গিয়ে রাহুলকে আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। নাম না করে মোদী বলেন, “ভোট এলেই মরসুমি নেতাদের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। তেমনি ভোট শেষ হলেই সেই নেতারা বিদেশে চলে যান ছুটি কাটাতে।” সাধারণত কোনও বড় মাপের নির্বাচন শেষ হতে না হতেই বিদেশে যেতে দেখা গিয়েছে রাহুলকে। দু’সপ্তাহ আগে একই ভাবে নাম না করে রাহলকে বসন্তের কোকিলের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা। উত্তরপ্রদেশে ভোট শুরুর ঠিক আগে এসপি নেতা অখিলেশ সিংহের সমর্থনে প্রচারে লখনউয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ভার্চুয়াল সভায় এসপি সমর্থকদের বার্তা দিতে বলেছিলেন, ভোট এলেই কিছু মানুষ বসন্তের কোকিলের মতো এসে পড়েন। আবার ভোট শেষ হলে চলে যান। এসপি সূত্রের বক্তব্য, বসন্তের কোকিল বলে মূলত রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরাকে কটাক্ষ করতে চেয়েছিলেন মমতা।
কপিলাবস্তুর জনসভায় মোদীও আজ বলেন, ‘‘কিছু মরসুমি নেতাকে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণ চরম থাকলে গায়েব হয়ে যান। আবার করোনা কমলে মাঠে নামেন। নির্বাচন এলেই এঁরা রাস্তায় নামেন। নির্বাচন হতেই বিদেশ পাড়ি দেন। উত্তরপ্রদেশবাসী ভালই
বুঝতে পারছেন, ওই মরসুমি নেতা ১০ মার্চ পরাজয়ের পরে ফের
বিদেশ ঘুরতে যাবেন।’’ বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা মূলত পরিবারবাদের
কুফল বোঝাতেই রাহুল প্রসঙ্গ টেনেছেন প্রধানমন্ত্রী।
ভোটের প্রচারে মণিপুরে গিয়ে প্রিয়ঙ্কা সম্প্রতি দাদা রাহুলের মতোই অভিযোগ এনেছেন, মোদী সরকার অল্প কয়েক জন পুঁজিপতির স্বার্থে কাজ করে। গরিবের কথা ভাবে না। কার্যত এই অভিযোগ খণ্ডনেই মোদী আজ সকালে দাবি করেন, তাঁর সরকার গরিব বিশেষ করে কৃষকদের কথা ভেবে চলতি বাজেটে একাধিক পদক্ষেপ করেছে। পরে বরাবাঁকির সভায় অখিলেশের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘পরিবারবাদী এই নেতারা ইচ্ছে করে বাড়ি, জল, সড়কের মতো মানুষের ন্যূনতম চাহিদাগুলি মেটায়নি। কারণ পরিবারবাদী নেতারা জানে এক বার রাজ্যের মানুষের চাহিদাপূরণ হয়ে গেলে তাঁরা আর ওই নেতাদের বাড়ির চক্কর কাটবেন না।”
গত কয়েক দিন ধরেই উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের প্রচারে প্রাধান্য পেতে শুরু করেছে সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গ। বিশেষ করে গুজরাতের স্বামী নারায়ণ মন্দিরে হামলার ঘটনায় ৩৮ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়ার পর থেকে জাতীয়তাবাদের হাওয়াকে উস্কে ভোট চাওয়ার কৌশল নিয়েছে বিজেপি। যে ফাঁদে জেনেশুনে এসপি নেতৃত্ব পা দিচ্ছেন বলেই মনে করছেন কংগ্রেস নেতারা। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁন্ধী বঢরার কথায়, ‘‘এসপি এবং বিজেপি পরিকল্পিত ভাবে প্রচারের প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ, নির্বাচনের প্রচারে আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত মূল্যবৃদ্ধি কমানো, চাকরির ব্যবস্থা করা,
মহিলাদের ক্ষমতায়ন, কৃষিজীবী ও ছোট ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সাহায্য করা। এ সবে পরিবর্তে সন্ত্রাস নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’’
প্রিয়ঙ্কা যখন ওই প্রশ্ন তুলছেন তখন আর একটি জনসভায় এসপি ও কংগ্রস নেতাদের বিঁধে প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, ‘‘যাঁরা জঙ্গিদের নির্দোষ মনে করেন, তাদের শাস্তি থেকে মুক্ত করে দেন— তাঁদের দলকে কি ভোট দেওয়া উচিত?’’