মহাপরাক্রমশালী বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রকাশ্যে আনার সাহস দেখিয়েছিলেন তিনি। সেই অভিযোগের পরে উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকারের নিশ্চেষ্টতায় রোষের আগুন জ্বলেছিল গোটা দেশে। শেষ পর্যন্ত উন্নাওয়ের বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারকে গ্রেফতারে বাধ্য হন যোগী। অভিযোগকারী সেই তরুণীর গাড়িকে রবিবার পিষে দিল একটি ট্রাক। ওই ঘটনায় দু’জন মারা গেলেও মারাত্মক জখম হয়ে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তিনি। বিরোধী নেতা অখিলেশ যাদবের অভিযোগ, বিধায়কের দলবলই মহিলাকে হত্যার চক্রান্ত করেছিলেন। সিবিআই তদন্ত দাবি করেছেন তিনি।
মা, কাকিমা এবং আইনজীবী মহেন্দ্র সিংহকে নিয়ে ওই তরুণী একটি মোটরগাড়ি চড়ে রায়বরেলীর জেলে যাচ্ছিলেন সেখানে অন্য একটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়ে বন্দি থাকা কাকার সঙ্গে দেখা করতে। পুলিশ জানিয়েছে, রায়বরেলীর রাস্তায় উল্টো দিক থেকে আসা একটি ট্রাক মোটরগাড়িটিকে ধাক্কা মারে। গুরুবক্সগঞ্জ থানার অফিসার রাকেশ সিংহ বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে, ধাক্কা মারা ট্রাকটি খালি ছিল। ধাক্কা মারার পরে চালক ট্রাক ফেলে পালিয়ে যায়। ট্রাকটিকে বাজেয়াপ্ত করে তার মালিকের খোঁজ করা হচ্ছে।’’ একটি সূত্রের খবর, ট্রাকটির নম্বর প্লেটে কালো রং করা ছিল। তবে পুলিশ তা মানেনি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাক্ষীশেখর সিংহ জানিয়েছেন, ঘটনার সময়ে বেশ জোরে বৃষ্টি পড়ছিল। হতে পারে ভিজে রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি নিগৃহীতার গাড়িটিকে ধাক্কা মেরেছে। মহিলা ও তাঁর আইনজীবীকে মারাত্মক আহত অবস্থায় লখনউয়ের কিং জর্জ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রমা কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের অবস্থা খুবই সঙ্কটজনক।
তবে তরুণীর পরিবারের লোকেরা এ দিনের ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা বলে মেনে নিতে নারাজ। নিগৃহীতাকে প্রাণে মারার জন্য বিধায়কের দলবল এই কাজ করিয়েছে বলে দাবি করেছেন তাঁরা। যদিও পুলিশ বলছে, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনাটি পথদুর্ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে। তবে বিস্তারিত তদন্তে সব বিষয়ই খতিয়ে দেখা হবে। এএসপি জানান, নিগৃহীতার আবেদনের পরে তাঁর ও পরিবারের সুরক্ষার জন্য নিরাপত্তারক্ষীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। উন্নাওয়ে তাঁদের বাড়িতে সব সময়েই রক্ষী মোতায়েন থাকে। তবে কোনও কারণে তাঁরা এ দিন রায়বরেলী আসার সময়ে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে নেননি। রক্ষীরা কেন তাঁদের সঙ্গে ছিলেন না, তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওই পুলিশ অফিসার।
আরও পডু়ন: কিশোর মন জয়ে চাঁদের হাতছানি, কুইজে সফল হলেই শ্রীহরিকোটার টিকিট, ঘোষণা মোদীর
২০১৭-য় বিধায়কের কাছে চাকরি চাইতে গিয়ে ধর্ষিতা হতে হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন তরুণী। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৬। বিধায়ক সেঙ্গারের বিচার চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির পাশাপাশি উন্নাওয়ের ধর্ষণ জাতীয় রাজনীতিতে আলোড়ন তোলে। বিধায়ককে গ্রেফতার করে ধর্ষণের অভিযোগের সিবিআই তদন্ত করাতে বাধ্য হয় সরকার। সিবিআই আদালতকে জানায়, ২০১৭-এর ৪ জুন রাতে বিধায়ক সেঙ্গার সত্যিই ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেছিলেন। বিধায়ক ও তাঁর ছেলে এখনও জেলে রয়েছেন।