ফাইল চিত্র
সন্ত্রাসবাদই হল মানবধিকারের সবথেকে বড় শত্রু। তাই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে তুলনা করা ঠিক নয় বলে আজ মন্তব্য করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দিন কয়েক আগেই ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল আমেরিকা। আজ জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-এর ১৩তম প্রতিষ্ঠা দিবসে অমিত শাহ আমেরিকার সেই সমালোচনার জবাব দিলেন বলেই মনে করছেন স্বরাষ্ট্রকর্তারা।
বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাস দমন করতে গিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে। মানবাধিকার সংগঠনগুলির অভিযোগ, কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করার পরে উপত্যকার মানুষের উপরে বাহিনীর আচরণ মানবাধিকার লঙ্ঘন ছাড়া কিছু নয়। ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বাড়ছে বলে সম্প্রতি উদ্বেগ জানিয়েছিলেন আমেরিকার সেক্রেটারি অব স্টেটস অ্যান্টনি ব্লিনকেন। আজ এনআইএ-র প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে শাহ বলেন, ‘‘মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নে মানবাধিকার সংগঠনগুলি যে অবস্থান নিয়ে থাকে, তা থেকে আমার মত কিছুটা ভিন্ন। যখনই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযান হয়, তখনই মানবাধিকার সংগঠনগুলি (জঙ্গিদের) মানবাধিকারের দাবি তুলে সরব হয়। কিন্তু আমার মতে, মানবাধিকার সবথেকে বেশি লঙ্ঘিত হয় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপেই। তাই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই কখনওই মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নে পরস্পরবিরোধী হতে পারে না। বরং মানবাধিকারকে রক্ষা করার প্রয়োজনে সন্ত্রাসকে তার শিকড় থেকে উৎখাত করা প্রয়োজন।’’
নিজের বক্তব্যে জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে বলে দাবি করে শাহ জানান, সন্ত্রাসে আর্থিক মদত রুখে দেওয়া ওই সাফল্যের অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, ‘‘২০১৮-১৯ সালে প্রথম বার এনআইএ সন্ত্রাসে আর্থিক মদত দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে। এনআইএ হস্তক্ষেপের ফলে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির কাছে অর্থ পৌঁছনোর যে সহজ রাস্তাগুলি ছিল, তা অনেকাংশেই বন্ধ করা সম্ভব হয়। সন্ত্রাসে আর্থিক মদতের রোখার প্রশ্নে সম্পূর্ণ সাফল্য না এলেও সন্ত্রাসে টাকা জোগানো আগের তুলনায় কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।’’ এনআইএ সূত্রে বলা হয়েছে, তাদের সংস্থার ধরপাকড়ের ফলে একাধিক সংস্থা ও স্লিপার সেল, যারা সন্ত্রাসে অর্থ জোগাত, তাদের চিহ্নিত করে আর্থিক স্রোতকে অনেকাংশেই বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অপরাধীদের একটি জাতীয় তথ্যভাণ্ডার (ডেটাবেস) তৈরির কাজে হাতে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অমিত শাহ। স্বরাষ্ট্র সূত্রে বলা হয়েছে, মূলত যে অপরাধীরা দেশে সন্ত্রাসের কাজে, যেমন বোমা বিস্ফোরণ, জঙ্গিদের আর্থিক সাহায্য, জাল টাকার ব্যবসা, ড্রাগ পাচার, হাওয়ালা, বেআইনি অস্ত্রের লেনদেন, চোরাচালানের মতো কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, তাদের বিস্তারিত বিবরণ ওই তথ্যভাণ্ডারে রাখা থাকবে। যা তদন্তের স্বার্থে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও রাজ্য পুলিশ ব্যবহার করতে পারবে। দেশে কোন অপরাধ কখন কাদের মাধ্যমে সক্রিয় হচ্ছে, তা বুঝতেও ওই তথ্যভাণ্ডার সাহায্য করবে বলেই জানিয়েছে অমিত শাহ।