নির্মলা সীতারামন।
বাজেট পেশের পরে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বণিকসভার শিল্পপতিদের সামনে বলতে গিয়েছিলেন, সরকারের সঙ্গে তাঁরাও এ বার বিনিয়োগ করতে শুরু করুন। যাতে অর্থনীতির চাকা ফের ঘুরতে শুরু করে।
শিল্পমহল থেকে উল্টে দাবি উঠল, গ্রামীণ অর্থনীতিতে সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে অর্থমন্ত্রী ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে আরও টাকা বরাদ্দ করুন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এসে ইউপিএ সরকারের একশো দিনের কাজের প্রকল্পকে ‘গর্ত খোঁড়ার প্রকল্প’ বলেছিলেন। মোদী সরকারের কাছে সেই প্রকল্পেই বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানানোর পিছনে শিল্পমহলের যুক্তি স্পষ্ট। বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কায় গ্রামীণ অর্থনীতির হাল মোটেই ভাল নয়। গ্রামের বাজারে চাহিদা তৈরি না হলে বিক্রিবাটা বাড়বে না। নতুন কারখানা তৈরির জন্য বিনিয়োগ করেও লাভ হবে না।
বাজেটের পরে আজ প্রথামাফিক বণিকসভা সিআইআই-এর কর্তাদের মুখোমুখি হন নির্মলা। শুরুতেই ‘আসল কথা’-য় চলে গিয়ে বলেন, আসল জায়গায়, আসল ব্যক্তিদের সামনে আসল কথা হল, এ বার শিল্পমহল লগ্নির কথা ভাবতে শুরু করুক। নির্মলা যুক্তি দেন, কোভিডের ধাক্কা কাটিয়ে, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে, বাজারে চাহিদা তৈরি করতে কেন্দ্রীয় সরকার পরিকাঠামোয় বিপুল পরিমাণে খরচ করছে। এ বার বেসরকারি লগ্নির যথেষ্ট কারণ রয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘চিরাচরিত শিল্পের সঙ্গে নতুন যুগের, উদীয়মান ক্ষেত্রেও লগ্নির বিরাট সুযোগ তৈরি হয়েছে। শিল্পমহলকে আহ্বান করছি, সরকারের শরিক হোন। দেশকে আরও বেশি আর্থিক বৃদ্ধির পথে নিয়ে যান।’’
২০২০-তে কোভিডের আগে থেকেই অর্থনীতিতে শ্লথ গতি চলছে বলে বেসরকারি লগ্নিতে ভাটার টান চলছে। আজ অর্থমন্ত্রী মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘২০১৯-এর অক্টোবরে শিল্পমহলের জন্য কর্পোরেট কর কমিয়ে ২২% করা হয়েছে। নতুন কারখানার জন্য মাত্র ১৫% হারে কর দিতে হবে। তার সুবিধাও ২০২৪-এর মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী এর আগেও শিল্পমহলের ‘অ্যানিম্যাল স্পিরিট’ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছিলেন। লাভ হয়নি। আজ নির্মলা বলেছেন, ঠান্ডা মাথায় বসে লগ্নির সিদ্ধান্ত নিন।
অর্থমন্ত্রী এই আহ্বান জানালেও শিল্পপতি মল্লিকা শ্রীনিবাসন, সুনীল মুঞ্জল গ্রামীণ অর্থনীতিতে সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। মল্লিকা বলেন, গ্রামের অর্থনীতিতে এখন বেহাল দশা। মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বের সমস্যা রয়েছে। গত কয়েক বছরে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বাজেট বরাদ্দের তুলনায় চাহিদা অনেক বেশি ছিল। মুঞ্জলও একশো দিনের কাজের বরাদ্দের কথা বলেন।
জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, লকডাউনের ফলে শহর থেকে গ্রামে ফেরা মানুষকে সাহায্য করতে একশো দিনের কাজে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে প্রথমে ৭৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও পরে বাড়িয়ে ৯৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। আগামী অর্থ বছরের জন্য ৭৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হচ্ছে। প্রয়োজন হলে বাড়ানো হবে। কিন্তু সরকার খয়রাতি না করে কর্মসংস্থান তৈরি করতে চায়। রাজস্ব সচিব তরুণ বজাজ বলেন, ‘‘আমাদের আশা, এ বার একশো দিনের কাজের চাহিদা কমবে। কারণ, শিল্পমহল অনেককেই কাজে নিয়োগ করবে।’’ গ্রামীণ অর্থনীতির বেহাল দশা কাটাতেও চাষি, গ্রামের মানুষকে নানা ভাবে সাহায্য করা হচ্ছে বলে নির্মলা যুক্তি দেন।
সিআইআই সভাপতি টি ভি নরেন্দ্রন আজ মূল্যবৃদ্ধির সমস্যার কথা বলে ভবিষ্যতে সুদ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা বলেছেন। মনে করিয়েছেন, শিল্পমহলকে কাঁচামালের জন্যও বেশি দাম চোকাতে হচ্ছে। লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন, হোটেল, রেস্তরাঁ শিল্পে সুরাহার দাবি তুলেছেন তিনি। শিল্পপতি হরি ভারতীয়া বলেছেন, রেস্তরাঁ ক্ষেত্রে ৮০ লক্ষ মানুষ কাজ করেন। কিন্তু ঋণ গ্যারান্টি ছাড়া আর কোনও সুবিধা মেলেনি। শিল্পপতি উদয় কোটাক আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার, অশোধিত তেল ও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার দিকে নজর রাখার কথা বলেছেন।
অর্থমন্ত্রী সকলকেই আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আশ্বাসবাণীর বিনিময়ে শিল্পমহলের দিক থেকে সুনির্দিষ্ট লগ্নির আশ্বাস মেলেনি। নরেন্দ্রন অবশ্য বলেছেন, ‘‘আমাদের অনেকেই আগামী বছরে লগ্নির পরিকল্পনা নিয়ে এগোবেন।’’