প্রতীকী ছবি।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সংসদে বাজেট পেশ করার পরই ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে উদ্বিগ্ন মুখের যুবকযুবতীদের ছবি পোস্ট করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। সেই ছবির উপরে প্রশ্ন, ‘চাকরি কোথায়?’
আজ কেন্দ্রীয় বাজেটের সমালোচনায় সরব হয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, শিবসেনা-সহ বিভিন্ন বিরোধী দল। বিরোধীদের সম্মিলিত বক্তব্য, এই বাজেটে দিশা নেই। মধ্যবিত্ত এবং গরিব মানুষের জন্য কোনও আশার আলো নেই এবং মানুষের দুর্দশার সমাধান না দিয়ে তাঁদের ঠকানো হয়েছে।
আজ বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে রাহুলকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন খোদ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের নেতা তথা কেন্দ্রীয় আর্থিক প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরীও এক হাত নিয়েছেন রাহুলকে। রাহুল প্রসঙ্গে নির্মলার আজকের মন্তব্য “ওঁর জন্য আমার করুণা হয়!”
বাজেট পেশের পর রাহুলের টুইট, “এটি মোদী সরকারের ‘জিরো সাম’ বাজেট। বেতনভুক শ্রেণি, মধ্যবিত্ত, বঞ্চিত এবং গরিব, যুবক, কৃষক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য কিছু নেই।” পাশাপাশি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে রাহুল লিখেছেন, “দেশ জুড়ে হতাশা। আমাদের যুবাশক্তির সামনে কোনও ভবিষ্যৎ নেই। অথচ মোদী সরকারের বাজেট আবারও এই বেদনাদায়ক বাস্তবকে পুরোপুরি অবজ্ঞা করল।”
বিরোধীদের সমালোচনার মুখে নির্মলা বলেছেন, “ভাল করে বাজেট না পড়েই ওঁরা যা মনে হয় বলে দিয়েছেন।” তাঁরই পাশে বসা কেন্দ্রীয় আর্থিক প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী বলেন, “রাহুল গান্ধী বুঝতেই পারেননি, বাজেটে কী রয়েছে! তাই তাঁর এমন মনে হচ্ছে।” এরপরই নির্মলা বলে ওঠেন, “এই উত্তরটা অবশ্য একেবারেই উত্তরপ্রদেশের ঢংয়ের! অবশ্য উত্তরপ্রদেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাংসদের জন্য এই উত্তরটাই ঠিক আছে!” অর্থমন্ত্রীর কথায়, “দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দলের এক জন নেতা হিসাবে রাহুল গান্ধীকে আমি বলব, ওঁর আরও ভাল করে হোমওয়ার্ক করা উচিত। শুধু টুইট করলেই চলবে না!”
কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেছেন, “মোদী সরকার এমন ভাব করছে যেন তারা সাধারণ মানুষের সমস্যার সুরাহা করছে। আদতে সরকার একগুঁয়ে ষাঁড়ের মতো একবগ্গা ভাবে চলছে। এই বাজেটে মানুষের দুর্দশার প্রতি সরকারের অবজ্ঞাই ফুটে উঠেছে।” তাঁর কথায়, “আমি স্তম্ভিত যে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী আগামী ২৫ বছরের পরিকল্পনা ঘোষণা করছেন। তিনি বিষয়টিকে অমৃত কাল বলছেন! ব্যাপারটা এরকমই দাঁড়াচ্ছে যে বর্তমানের দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে সরকার মনে করছে না। আজকের মানুষ তা হলে শান্ত ভাবে ২৫ বছর অপেক্ষা করবেন, কবে অমৃত কালের ভোর হয়! ভারতের গরিব মানুষের সঙ্গে এ এক ঠাট্টা ছাড়া কিছু নয়।” বাজেটকে ‘হাওয়া বাজি’ বলে কটাক্ষ করলেন লোকসভার কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী।
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, “কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আগামী পঁচিশ বছর অমৃতকাল। আমরা বলছি, গত সাত বছরে এই সরকার হলাহলকাল তৈরি করেছে!” তাঁর কথায়, “আগে ছিল, ‘সব কা সাথ সব কা প্রয়াস’। পরে হল, ‘বিশ্বাস’। আমরা এর সঙ্গে জুড়তে চাই, সব কা সর্বনাশ! স্বাধীনতার পর এই বাজেট সবচেয়ে বস্তাপচা বাজেট। গত ১ বছরে ৬ কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন। এই বিপুল সংখ্যক বেকারের কাজের কোনও দিশা নেই। যে ৬০ লাখ নতুন চাকরির কথা বলা হয়েছে, তা আসলে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকারের আগামী পাঁচ বছরের উৎসাহভাতার সঙ্গে যুক্ত।” রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়ানের বক্তব্য, “এই সরকারের প্রিয় বন্ধু হল হিরে। কৃষক, মধ্যবিত্ত, বেকার, দিনমজুরের জন্য বাজেটে কিছুই নেই।” সৌগত রায় বলেন, “রাজকোষের ঘাটতি গত বছরের মতোই রয়ে গিয়েছে। ফলে মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়বে। তা নিয়ে বাজেটে কিছু বলা হয়নি। তেলের দাম আরও বাড়লে সরকার কী ভাবে সামাল দেবে, তা নিয়েও তারা নীরব। এই বাজেট বর্ণহীন, গন্ধহীন এবং স্বাদহীন!”
সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি প্রশ্ন তুলেছেন, “এই বাজেট কাদের জন্য? দেশের ৭৫ শতাংশ সম্পদের মালিক ১০ শতাংশ ধনী ভারতীয়। নীচের ৬০ শতাংশের বরাতে জোটে ৫ শতাংশেরও কম। অতিমারির সময় যাঁরা বিপুল লাভ করেছেন, তাঁদের উপর কেন কর চাপানো হল না?”