ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় বাজেটে রেলে ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষী’ ঘোষণা ঘিরে সংশয় তৈরি হয়েছে রেল-সহ বিভিন্ন শিবিরে। কারণ, বেসরকারি ট্রেন চালানোর উদ্যোগে তেমন সাড়া মেলেনি। চার বছরে দু’টির বেশি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস তৈরিও করা যায়নি। তবু মঙ্গলবারের বাজেটে রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভোলবদলের বার্তা দিতে তিন বছরে ৪০০টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন সেট নির্মাণের কথা জানালেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ওই লক্ষ্যমাত্রা আদৌ কতটা অর্জন করা সম্ভব, সংশয় প্রকাশ করেছেন রেলের প্রাক্তন আধিকারিকদের একাংশ।
নতুন ট্রেন সেট তৈরি করে সেগুলিকে রাজধানী-শতাব্দী-দুরন্তের মতো প্রথম শ্রেণির ট্রেনের বিকল্প হিসেবে না-চালিয়ে বেশি ভাড়ায় উন্নত ট্রেন হিসেবে চালানো হতে পারে বলে সাংবাদিক বৈঠকে ইঙ্গিত দেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণৌ। তিনি জানান, প্রিমিয়াম শ্রেণির ট্রেনের চেয়ে ভাড়া বেশি হওয়া সত্ত্বেও চালু দু’টি বন্দে ভারতের প্রায় ৯৫% আসন ভর্তি থাকছে। তাই ওই শ্রেণির ট্রেনে সফরের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এখন যত যাত্রী দূরপাল্লার ট্রেনে সংরক্ষিত আসনে সফর করেন, তার অন্তত আড়াই গুণ যাত্রী বঞ্চিত হন স্রেফ আসন নিশ্চিত না-হওয়ার কারণে।
মোট ট্রেনযাত্রীর ৮৫ শতাংশই ব্যস্ততম রুটগুলিতে যাতায়াত করেন বলে রেলের খবর। আয় বাড়াতে এই ধরনের ১৫০টি রুটে দ্রুত গতির উন্নত বেসরকারি ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা করেছিল রেল। কিন্তু গত দু’বছরে সেই পরিকল্পনা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। উন্নত বন্দে ভারতে অ্যালুমিনিয়ামের কোচ থাকবে। নকশা চূড়ান্ত হওয়ার পরে তার প্রোটোটাইপ তৈরি হয়েছে বলে জানান রেলমন্ত্রী। বছরের মাঝামাঝি চেন্নাইয়ের আইসিএফ, কপূরথালার আরসিএফ এবং রায়বরেলীর মডার্ন কোচ ফ্যাক্টরিতে ওই ট্রেনের উৎপাদন শুরু হবে।
রেলের লক্ষ্যমাত্রা ‘অতি উচ্চকাঙ্ক্ষী’ বলে মন্তব্য করেছেন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের উদ্ভাবক টিমের প্রধান তথা ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরির প্রাক্তন প্রধান সুধাংশু মণি। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘তিন বছরে ১৫০টি ট্রেন নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা রাখলে যথাযথ হত।’’ রেলকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ৫৮টি ট্রেনের টেন্ডার বা দরপত্র ডাকা হয়েছে। ফলে ‘অতি উচ্চাকাঙ্ক্ষী’ লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনো নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। চলতি অর্থবর্ষে যাত্রী পরিবহণে রেলের ঘাটতি ২৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। রেলমন্ত্রী জানান, করোনার ধাক্কা থেকে বেরিয়ে আসতে পণ্য পরিবহণে বিশেষ জোর দিচ্ছে রেল। চলতি বছরে পণ্য বহনের লক্ষ্যমাত্রা ১৪৭৫ মিলিয়ন টন। বিভিন্ন খাত মিলিয়ে রেলের ২.৪ লক্ষ কোটি টাকা আয় হতে পারে। কর্মীদের পেনশন, বেতন, রেল পরিষেবার খরচ ধরা হয়েছে ২.১০ লক্ষ কোটি। ‘অপারেটিং রেশিয়ো বা রেল পরিচালনার অনুপাত ৯৮ টাকার (অর্থাৎ ১০০ টাকা আয় করতে রেলের খরচ ৯৮ টাকা) কাছাকাছি থাকবে।