প্রতীকী ছবি।
সত্যিই সদিচ্ছা, না, দ্বিচারিতা? এ বারের কেন্দ্রীয় বাজেটে পরিবেশ নিয়ে ঘোষণাকে ঘিরে অর্থনীতিবিদ-সহ বিভিন্ন শিবিরে এই প্রশ্ন ও সন্দেহ প্রবল হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে আগের বছরের তুলনায় পরিবেশ খাতে বাজেট-বরাদ্দ বাড়িয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন মঙ্গলবার বাজেট-ঘোষণায় জানান, বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের জন্য এ বছরে ৩০৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় বরাদ্দ বৃদ্ধি প্রায় ৫.৬%। ২০৩০-এর মধ্যে দেশীয় সৌরশক্তির পরিকাঠামো তৈরিতে আলাদা করে ১৯,৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
কিন্তু সামগ্রিক ভাবে দেশে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টির কী প্রতিফলন বাজেটে ঘটেছে, তা নিয়ে জোর বিতর্ক আছে। কারণ, বায়ুদূষণ, উপকূল প্রকল্পে বরাদ্দ কমেছে। নদী সংযুক্তি প্রকল্পে জোর দিয়ে পরিবেশের বিপদ ডেকে আনা হচ্ছে বলেও পরিবেশবিদদের অভিযোগ।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হলেও তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। উল্টে অনেকের অভিযোগ, সামগ্রিক ভাবে বাজেটে পরিবেশের প্রতি মনোভাবে সরকারের দ্বিচারী মনোভাব ফুটে উঠেছে। ইনস্টিটিউট অব এনার্জি ইকনমিক্স অ্যন্ড ফিনান্সিয়াল অ্যানালিসিসের শক্তি-অর্থনীতিবিদ বিভূতি গর্গের মতে, বাজেট-বক্তৃতায় পরিবেশ সংক্রান্ত নানা শব্দের ফুলঝুরি থাকলেও পরিবেশ-বান্ধব শক্তির উন্নয়নে তেমন আশাব্যঞ্জক কিছু নেই।
বাজেটে জানানো হয়েছে, সৌর বিদ্যুতের পাশাপাশি কার্বন নির্গমন রুখতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে মোট জ্বালানির ৫-৬% বায়োমাস ব্যবহার করা হবে। জোর দেওয়া হয়েছে স্বচ্ছ জ্বালানির উপরেও। পরিবেশবিদদের অনেকেই যেটাকে বলছেন বায়ুদূষণ ও জলবায়ু বদলের বিরোধী পদক্ষেপ। প্রশ্ন উঠছে, সে-ক্ষেত্রে কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্টের বরাদ্দ কমানো হল কেন? কেনই বা জাতীয় জলবায়ু সংক্রান্ত প্রকল্পে বরাদ্দ অপরিবর্তিত রাখা হল?
অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গ্লাসগোর জলবায়ু সম্মেলনের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কার্বন নির্গমন হ্রাস ও জলবায়ু বদলের বিরুদ্ধে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই বক্তব্যের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই এই বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। অনেক পরিবেশবিদের বক্তব্য, পরিবেশ-বান্ধব অর্থনীতির কথা বলা হলেও উপকূল প্রকল্পে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। বড় অঙ্কের বরাদ্দ কমেছে পরিবেশ সংক্রান্ত শিক্ষা, গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ খাতে।
নদী-বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র মনে করেন, নদী সংযুক্তির মাধ্যমে পরিবেশের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। নদী সংযুক্তির ফলে সেচের খরচ বাড়বে এবং একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হবে নদীর জীববৈচিত্র। ভারতের প্রাকৃতিক বৈচিত্রের ফলেই এক-একটি নদীর চরিত্র এক-এক রকম। সংযুক্তির ফলে তা নষ্ট হবে।