প্রতীকী ছবি।
কেন্দ্রীয় বাজেটে শিক্ষার জন্য মূল কিছু প্রস্তাব নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে এ বার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পথ খুলে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। এতে শিক্ষার বাণিজ্যায়নের জেরে শিক্ষার সুযোগ আমজনতার সাধ্যের বাইরে চলে যাবে বলে শিক্ষা শিবিরের একাংশের আশঙ্কা।
একই ভাবে শনিবার কেন্দ্রীয় বাজেটে সামগ্রিক ভাবে শিক্ষা ক্ষেত্রে কিছুটা বরাদ্দ বাড়ানো হলেও রাষ্ট্রীয় উচ্চতর শিক্ষা অভিযান (রুসা)-এর মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ কমে যাওয়ায় প্রশ্ন ও বিতর্ক জোরদার হয়েছে। বরাদ্দ কমেছে অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন (এআইসিটিই), ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম), ডিজিটাল ই-লার্নিং, গবেষণা এবং ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক সাহায্য খাতে। শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়লেও বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ ছাঁটাইয়ের তীব্র বিরোধিতা করছেন অনেকে।
দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য ২০১৩ সালে ‘রুসা’ চালু হয়েছিল। এ বার শিক্ষা সংক্রান্ত বাজেট নিয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটার সাধারণ সম্পাদক কেশব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার সামাজিক ক্ষেত্রে দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে চাইছে। রুসার বাজেট কমানোও তারই অঙ্গ। একই ভাবে বাণিজ্যকরণ ও বেসরকারিকরণের বন্দোবস্ত করে শিক্ষাকে সাধারণের নাগালের বাইরে নিয়ে যেতে চাইছে কেন্দ্র।’’ গবেষণা খাতে বরাদ্দ কমানো নিয়েও প্রশ্ন উঠছে শিক্ষক ও গবেষক মহলে।
গত বারের বাজেটে শিক্ষায় ৯৩,৮৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে শিক্ষা ক্ষেত্রে ৯৯,৩১১ কোটি টাকা দিচ্ছে কেন্দ্র। এর মধ্যে স্কুলশিক্ষায় দেওয়া হচ্ছে ৫৯,৮৪৫ কোটি এবং উচ্চশিক্ষায় প্রায় ৩৯,৪৬৬ কোটি দেওয়ার কথা। এ বছর প্রথাগত শিক্ষার বাইরে কারিগরি শিক্ষা সংক্রান্ত ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট’ খাতে বরাদ্দ হয়েছে ৩০০০ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেট-বক্তৃতায় জানান, প্রতিভাবান শিক্ষক নিয়োগ, উন্নত গবেষণাগার তৈরি এবং নতুন বিকাশের জন্য টাকা বিনিয়োগ প্রয়োজন। সেই জন্যই এই সিদ্ধান্ত। এশীয় ও আফ্রিকান পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে ‘ইন্ডিয়ান স্কলাস্টিক অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট’ (ইন্ড-স্যাট)-এর মাধ্যমে বৃত্তিদানের কথাও জানিয়েছেন তিনি। বিদেশি পড়ুয়াদের কাছে ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে আকর্ষক করে তুলতে চাইছে কেন্দ্র।
শীঘ্রই দেশের নতুন শিক্ষানীতি ঘোষণা করা হবে বলেও এ দিন জানান সীতারামন। তিনি বলেন, ‘‘এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ও সাংসদদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। শিক্ষানীতি নিয়ে দু’লক্ষ পরামর্শ জমা পড়েছে কেন্দ্রে।’’
ডিজিটাল শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমলেও অনলাইনে ডিগ্রি স্তরের পাঠ্যক্রম চালু করার কথা বলা হয়েছে বাজেটে। দেশের মধ্যে সেরা ১০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই ধরনের পাঠ্যক্রম চালু করবে। তবে প্রাথমিক ভাবে হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে এটা চালু হবে বলে জানান সীতারামন। কর্মসংস্থান বাড়াতে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে ১৫০টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষানবিশ পাঠ্যক্রম চালু করবে। তাতে উত্তীর্ণ পড়ুয়ারা ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা পাবেন। কেন্দ্রের তরফে পুরসভা ও পঞ্চায়েতে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ পড়ুয়াদের জন্য ‘ইন্টার্নশিপ’ প্রকল্প চালু করা হবে বলে বাজেটে জানানো হয়েছে। জাতীয় পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় ফরেন্সিক বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথাও এ দিন জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।