Budget 2020

দীর্ঘ বক্তৃতা, ঝিমোলেন সাংসদেরাও

গত কাল রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তৃতায় নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বলার সময়ে টেবিল চাপড়ে বিরোধীদের দুরমুশ করতে চেয়েছিলেন বিজেপি সাংসদেরা।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:০১
Share:

নির্মলা সীতারামন।—ছবি পিটিআই।

অর্থমন্ত্রীকে বাদ রেখে বাজেট নিয়ে একের পর এক বৈঠক করছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সে সব বৈঠকে বার্তা দেওয়া হচ্ছিল, এ বারে হবে ‘মোদীর বাজেট’। এমনকি বাজেটের পরে অর্থ মন্ত্রক থেকে নির্মলা সীতারামনের ‘বিদায়’ নিয়েও জল্পনা কম হয়নি। ফলে মোদী তো বটেই, নির্মলার জন্যও এ বারের বাজেট কম চ্যালেঞ্জের ছিল না।

Advertisement

গত কাল রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তৃতায় নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বলার সময়ে টেবিল চাপড়ে বিরোধীদের দুরমুশ করতে চেয়েছিলেন বিজেপি সাংসদেরা। আজ কিন্তু গোড়া থেকেই তাঁরা ঝিমিয়ে। হয়তো ‘ঝিমুনিতে ভোগা অর্থনীতি’তে নিজেদের প্রধানমন্ত্রীর উপরেও কোনও প্রত্যাশা ছিল না তাঁদের। অর্থমন্ত্রী কোনও মন্ত্রক নিয়ে ঘোষণা করছেন, আর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে মাথা ঝুঁকিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে দেখা গেল বারবার। ডিজিটাল নিয়ে ঘোষণা, শুধু রবিশঙ্কর প্রসাদই টেবিল চাপড়ালেন। অপ্রচলিত শক্তি, শুধু আর কে সিংহ। বস্ত্র, কেবল স্মৃতি ইরানি।

শাসক শিবির এমন নিরুৎসাহ দেখে তৃণমূলের সৌগত রায় খোঁচা দিলেন: ‘‘যাঁর মন্ত্রকের ঘোষণা, শুধু সেই মন্ত্রীই তালি দিচ্ছেন। বাকিদের উৎসাহ নেই!’’ শুনলেন প্রধানমন্ত্রী। এলআইসির শেয়ার বিক্রির ঘোষণা হল, প্রধানমন্ত্রী টেবিল চাপড়াতে যাচ্ছিলেন। একাই। তেড়েফুঁড়ে উঠল কংগ্রেস। এলআইসি বিক্রি হয়ে যাবে শুনে তখন হতভম্ব বিজেপি শিবিরও স্তব্ধ। হাত গুটিয়ে নিলেন প্রধানমন্ত্রী।

Advertisement

আধ ঘণ্টা, এক ঘণ্টা, দেড় ঘণ্টা... সকলেই ভাবছিলেন এই বুঝি ‘ভাল’ কিছু ঘোষণা হবে। রাহুল গাঁধী নোটপ্যাড আর কলম বার করে সামনে রেখেছিলেন। এক লাইনও লিখলেন না। মাঝেমধ্যে কিছু আকিবুঁকি কাটলেন। মোবাইলে জমে থাকা মেসেজ মুছলেন। অর্থমন্ত্রী বলেই যাচ্ছেন। আর কে সিংহের মন্ত্রকের জন্য ঘোষণা শেষ। আর কাজ নেই। ঘুম তাড়াতে চোখের ব্যায়াম শুরু করলেন। ক্যামেরাতেও বন্দি হল তা!

মুখে আঁচল চেপে হাই লুকোলেন স্মৃতিও। পিছনে বসে ক্লান্ত জয়ন্ত সিন্‌হা। লাদাখের বিজেপি সাংসদ শেরিং নামগিয়াল গত অধিবেশনে বক্তৃতা দিয়ে নজর কেড়েছিলেন। আজ বাজেটের সময়ে ঘুমে ঢুলে পড়লেন। ঘুম এসেছে হেমা মালিনীরও। শেষ সারিতে বিজেপির সানি দেওল জেগে না ঘুমিয়ে, বোঝা অসম্ভব। লোকসভার ভিতরেও চোখে রোদচশমা। নির্মলা বাজেট পড়া শুরুর প্রায় এক ঘণ্টা পরে পৌঁছলেন প্রজ্ঞা ঠাকুর। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ঘুমে তাঁরও চোখ জড়িয়ে এল। রীতা বহুগুণাদের সঙ্গে একটু গল্প করে বাইরে চলে গেলেন কিরণ খেরও।

সামনের সারিতে বসে মোদী, অমিত শাহ। সংসদ চললে প্রতি সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী দলের সাংসদদের হুঁশিয়ারি দেন, উপস্থিত না থাকলে শাস্তি হবে। গরহাজিরদের নামও দিতে বলেন। কিন্তু আজ নির্মলার বাজেট বক্তৃতার সময়ে ভিড় পাতলা হতে শুরু করল শাসক শিবিরেই। শেষ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী পুরো বাজেট পড়ে উঠতে পারেননি। মোদীও আর গা করেননি।

একটু চেঁচামেচি অবশ্য হল ‘বেটি বাঁচাও’-এর সাফল্য, ‘সরস্বতী-সিন্ধু’ সভ্যতা, ‘আমরা সবাই খুশি’ বলার সময়ে। আগ্রহ তৈরি হয়েছিল আয়কর ছাড় নিয়ে ঘোষণার সময়েও। সেটিও মিলিয়ে যায় অচিরে। লোকসভায় বসেই হাতজোড় করে বলা শুরু করেন বিরোধী নেতারা— ‘‘এ বার রেহাই দিন’’, ‘‘আর পড়ে শাস্তি দেবেন না’’, ‘‘একটু লাঞ্চ-ব্রেক হোক?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement