প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল ছবি।
লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস হরিয়ানার দশটির মধ্যে পাঁচটি আসন জিতে ফেলার পরেই বিজেপি টের পেয়েছিল যে বিধানসভা ভোটে রাজ্যের বেকারত্বের সমস্যা ভোগাবে। বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী নায়ব সিংহ সাইনি তড়িঘড়ি ঘোষণা করেছিলেন, বিধানসভা ভোটের আগেই ৫০ হাজার সরকারি শূন্যপদ পূরণ করা হবে।
তাতে ফল হয়েছে উল্টো। মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতনের ঝাডুদারের চাকরির জন্য প্রায় ৪০ হাজার স্নাতক এবং ৬ হাজারের বেশি স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী আবেদন করেছেন। হরিয়ানার বেকারত্বের সমস্যা আরও প্রকট হয়ে গিয়েছে।
দেশের রাজধানীর লাগোয়া হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচন ৫ অক্টোবর। বিজেপি সরকার দশ বছর ক্ষমতায় থাকার পরে এখন বেকারত্বের সমস্যাই ভোটের প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে। কংগ্রেস নেতারা ক্ষমতাসীন বিজেপিকে নিশানা করতে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রক, শ্রম মন্ত্রক ও বেসরকারি সংস্থা সিএমআইই-র বেকারত্ব নিয়ে তথ্যকে হাতিয়ার করছেন। বিজেপিও সেই তথ্য তুলে ধরে দাবি করছিল, হরিয়ানার বেকারত্বের হার আগের থেকে কমেছে। তবে ঝাড়ুদারের চাকরির জন্য ডিগ্রিধারীরা আবেদন করায় তারা প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের সমীক্ষা বলছে, হরিয়ানায় বেকারত্বের হার বরাবরই জাতীয় গড়ের থেকে বেশি। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে তা কিছুটা কমলেও এপ্রিল-জুনে বেড়েছে। মহিলাদের মধ্যে বেকারত্বের হার আরও বেশি। কংগ্রেস নেতা ও বিধানসভার বিরোধী দলনেতা ভূপেন্দ্র সিংহ হুডার অভিযোগ, ‘‘আজ হরিয়ানায় বেকারত্বের হার ৩৪ শতাংশ। রাজ্য সরকারে ২ লক্ষের বেশি শূন্যপদ পড়ে রয়েছে। সরকার ঠিকা কর্মী নিয়োগ করছে। তাঁরা ন্যূনতম বেতনও পাচ্ছেন না। উল্টে হরিয়ানার সরকার রাজ্যের ১০ হাজার ছেলেকে ইজরায়েলে শ্রমিক হিসেবে পাঠানোর বন্দোবস্ত করেছে।’’
হরিয়ানার বিজেপি নেতৃত্বের পাল্টা যুক্তি, রাজ্য সরকার ১ লক্ষ ২০ হাজার ঠিকা কর্মী নিয়োগ করেছে ঠিকই। তার সঙ্গে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার পাকা চাকরিও দিয়েছে। বেসরকারি ক্ষেত্রে, স্বনির্ভরতার জন্য ৩ লক্ষ ৭০ হাজার তরুণ নিয়োগ করা হয়েছে।
রাহুল গান্ধীর আবার প্রশ্ন, হরিয়ানার তরুণরা শাহরুখ খানের সিনেমা ‘ডানকি’-র মতো কেন চোরাপথে আমেরিকায় কাজ করতে চলে যাচ্ছেন? সম্প্রতি আমেরিকা সফরে গিয়ে রাহুল হরিয়ানায় কয়েক জন যুবকের সঙ্গে দেখা করেছেন, যাঁরা চোরাপথে আমেরিকায় গিয়ে ট্রাক চালাচ্ছেন। চোরাপথে গিয়েছেন বলে দুর্ঘটনায় আহত হলেও বাড়ি ফিরতে পারছেন না। রাহুলের বক্তব্য, ২০১৪-র তুলনায় ২০২৩-এ হরিয়ানা থেকে আমেরিকায় ছোটখাটো কাজের সন্ধানে চলে যাওয়া তরুণের সংখ্যা ৬০ গুণ বেড়েছে। কারণ, হরিয়ানার ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সিদের প্রতি তিন জনের মধ্যে এক জন বেকার।
আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হরিয়ানায় প্রচারে গিয়ে বলেছেন, তিনি আমেরিকা সফরে হরিয়ানার বহু প্রবাসীর দেখা পেয়েছেন। দাবি করেছেন, বিজেপি ফের ক্ষমতায় এলে হরিয়ানায় লগ্নি আসবে। চাকরির সুযোগ তৈরি হবে। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের পাল্টা প্রশ্ন, বেসরকারি সংস্থা সিএমআইই-এর হিসাবে হরিয়ানায় বেকারত্বের হার ৩৭.৪ শতাংশ। ‘অজৈবিক’ প্রধানমন্ত্রী কি হরিয়ানার তরুণদের জন্য আদৌ কিছু ভেবেছেন?