ফাইল চিত্র।
বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজের মহিলা অধ্যক্ষকে জোর করে এক ছাত্রীর পা ছুঁতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠল আরএসএস-এর ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র নেতার বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের রাজ্য গুজরাতের।
গত বৃহস্পতিবারের এই ঘটনার ভিডিয়ো সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই তোলপাড় গুজরাতের শিক্ষাজগতে। জানা গিয়েছে, আমদাবাদের এসএএল পলিটেকনিক কলেজের দ্বিতীয় সিমেস্টারের এক ছাত্রীর কলেজে উপস্থিতির হার কম হওয়ায় তাঁকে পরীক্ষায় বসতে দিতে আপত্তি জানিয়েছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে সরাসরি অধ্যক্ষের ঘরে হামলা চালায় এবিভিপি সদস্যরা। ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, অধ্যক্ষের ঘরে কোনও একটি বিষয় নিয়ে উত্তপ্ত তর্কাতর্কির মধ্যেই তাঁকে রীতিমতো হুমকি দিচ্ছেন গেরুয়া সংগঠনের ছাত্র নেতা অক্ষত জয়সওয়াল। এক পর্যায়ে অধ্যক্ষকে চেয়ার থেকে তুলে ওই ছাত্রীর পা ধরতে বাধ্য করে অক্ষত।
ভিডিয়োটি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষকসমাজ। বিজেপি-শাসিত গুজরাতেও একাধিক শিক্ষক বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যেই সরব হন। কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন এনএসইউআই নেতৃত্ব এবিভিপি তথা বিজেপিকে তুলোধনা করেন। এবিভিপি-র এই কাজ ‘চরম লজ্জাজনক’ বলে মন্তব্য করে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের তরফে গেরুয়াপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতারা শিক্ষাক্ষেত্রে ‘গুন্ডামি’ করছে বলেও অভিযোগ তোলা হয়। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও এবিভিপি-র বিরুদ্ধে ‘গুন্ডামি’র অভিযোগ এনে সরব হয়। চাপের মুখে সঙ্ঘের ছাত্র সংগঠন ক্ষমা চায় এবং তারা দাবি করে, ওই ছাত্র নেতা অক্ষত জয়সওয়ালকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এমনিতেই বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে গেরুয়াপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতাদের আচরণ নিয়ে বহু বার প্রশ্ন উঠেছে। দিন কয়েক আগেই তাজমহল নিয়ে ‘অপছন্দের’ মন্তব্য করায় উত্তরপ্রদেশের একটি কলেজের ইতিহাসের শিক্ষককে প্রকাশ্যে হেনস্থা করেছিল এবিভিপি। বিভিন্ন মহল থেকে এর নিন্দা করা হলেও রাজ্যের বিজেপি সরকার ওই ছাত্রদের পাশেই দাঁড়িয়েছিল। রাজ্য সরকারের তরফে ছাত্রদের দাবি মেনে ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়। তারও আগে একাধিক ঘটনায় শিক্ষকদের সঙ্গে ‘অভব্যতা’ করার অভিযোগ উঠেছে এবিভিপি-র বিরুদ্ধে। কিন্তু প্রশাসন পাশে থাকায় বহু ক্ষেত্রেই তারা ছাড় পেয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। আমদাবাদের ঘটনায় ক্ষুব্ধ অ-বিজেপি ছাত্র সংগঠনগুলির অভিযোগ, বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব এই গুন্ডামিকে সমর্থন করেন বলেই এবিভিপি নেতারা ছাড় পেয়ে যান।
এ প্রসঙ্গে বাম ছাত্র সংগঠনের নেতারা ২০২০-র জানুয়ারিতে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, সে দিন পডুয়াদের পাশাপাশি শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মচারীদেরও মারধর করেছিল এবিভিপি। সেই ঘটনায় বেশ কয়েক জনের ছবি এবং নাম দিল্লি পুলিশকে দেওয়া হলেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমমন্ত্রী অমিত শাহের নিয়ন্ত্রণে থাকা দিল্লি পুলিশ এক জনকেও গ্রেফতার করেনি। এ বছরও রামনবমীতে জেএনইউ-এর হস্টেলে আমিষ খাওয়াকে উপলক্ষ করে ফের হামলা চালিয়ে একাধিক ছাত্রকে জখম করেছে এবিভিপি। সেই ঘটনাতেও কোনও গ্রেফতার হয়নি। বামপন্থী পড়ুয়াদের অভিযোগ, এ থেকেই বোঝা যায়, বিজেপি এই ধরনের গুন্ডামিকে সমর্থন করে।