ফাইল চিত্র।
অতিমারির ধাক্কায় পিছোতে পিছোতে উচ্চ মাধ্যমিক চলে গিয়েছে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে এবং মাধ্যমিক গিয়েছে অগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা অনুযায়ী, দু’টি পরীক্ষাতেই প্রতিটি বিষয়ের পূর্ণমান থেকে শুরু করে সময়সীমা, সবই গিয়েছে কমে। এতে পুরোপুরি বাতিল না-হয়ে পরীক্ষা একটা হচ্ছে এবং ছাত্রছাত্রীদের চাপ কমছে ঠিকই। কিন্তু এই আধা-পরীক্ষা নিয়ে যে-বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে, অবিলম্বে তার সুরাহা দরকার বলে মনে করছে শিক্ষা শিবির।
পূর্ণমান কমে যাওয়ায় কম প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে পরীক্ষার্থীদের। কিন্তু সে-ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্রের কাঠামো কী হবে, বহু পরীক্ষার্থী ও শিক্ষক-শিক্ষিকা তা নিয়ে বিভ্রান্ত। তাঁদের দাবি, উচ্চ মাধ্যমিকের আবশ্যিক বিষয় বলতে কোন কোন বিষয় বোঝানো হচ্ছে, সেগুলির নাম প্রকাশ করুক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। সেই সঙ্গে পরীক্ষার পূর্ণমান কমে যাওয়ায় প্রশ্নপত্রের কাঠামোর ব্যাপারে সংসদ একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করুক।
প্রশ্নপত্রের কাঠামো নিয়ে বিভ্রান্তি কেন? শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, উচ্চ মাধ্যমিকে বাংলার তিন ঘণ্টার পরীক্ষায় মোট নম্বর থাকে ৮০। এখন দেড় ঘণ্টার পরীক্ষায় নম্বর যদি হয় ৪০, তা হলে বাংলা প্রশ্নের নম্বর বিভাজন হবে কী ভাবে? হাওড়ার দুইল্যা পাঁচপাড়া স্কুলের বাংলার শিক্ষিকা সুমনা সেনগুপ্ত জানান, বাংলার পার্ট ওয়ানে থাকে ৫০ নম্বর। আর পার্ট টু-তে থাকে ৩০। সেখানে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর লিখতে হয়। নতুন ব্যবস্থায় ৪০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় পার্ট ওয়ান ও পার্ট টু-তে নম্বর ভাগ করা হবে কী ভাবে? পার্ট ওয়ানে বাংলা গদ্য, পদ্য, নাটক-সহ বেশ কয়েকটি বিভাগ থেকে উত্তর লিখতে হয়। কোন প্রশ্ন কত নম্বরের হবে, কতগুলো প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে— সেই বিষয়ে সংসদ যদি দেরী না-করে একটি গাইডলাইন বা নির্দেশিকা প্রকাশ করে, তা হলে পরীক্ষার্থীদের খুব উপকার হবে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসুর মতে, এত দিন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় যে-ধরনের প্রশ্ন হয়ে আসছে, তার উপরে ভিত্তি করে দেড় ঘণ্টার পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করা খুবই কষ্টসাধ্য। এবং সেই প্রশ্নপত্রও পরীক্ষার্থীদের কাছে খুবই বিভ্রান্তিকর হয়ে উঠবে বলে তাঁর আশঙ্কা। কারণ, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পার্ট টু-তে অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর প্রশ্নপত্রেই লিখতে হয়। পার্ট ওয়ানে সংক্ষিপ্ত ও বড় প্রশ্নের উত্তর লিখতে হয় খাতায়। দু’টি বিভাগ মিলিয়ে মোট ক’টি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে, যথেষ্ট আগে থেকে সেটা পরীক্ষার্থীদের না-জানালে বিভ্রান্তি বাড়তে পারে।
সৌগতবাবু বলেন, “সংসদ এই ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশিকা প্রকাশ করুক। আমাদের প্রস্তাব, এ বার নতুন করে প্রশ্ন তৈরি হোক। আর খাতায় নয়, পরীক্ষার্থীরা পুরো প্রশ্নেরই উত্তর লিখুক প্রশ্নপত্রে। তা হলে মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যে এক বার প্রশ্নপত্রের উপরে উত্তর লেখার পরে খাতায় উত্তর লেখার ঝক্কি পোহাতে হবে না।”
এবার পরীক্ষা দেরিতে হওয়ায় এক মাসের মধ্যে ফল প্রকাশ হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে কী ভাবে খাতা দেখা হবে সেই নিয়েও শিক্ষা দফতরে প্রস্তাব দিচ্ছে শিক্ষক সংগঠনগুলো। সূত্রের খবর, এবার খাতা দেখার ক্ষেত্রে স্পট মূল্যায়নেরও ভবানাচিন্তা হচ্ছে। স্পট মূল্যায়ন অর্থাৎ একটি ব্লকে যত স্কুল আছে সেই সব স্কুলগুলোর মাধ্যমিকের খাতা ওই ব্লকেরই কোনও একটি স্কুলে রাখা হবে। ওই ব্লকের স্কুলের শিক্ষকরা কোনও একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে স্কুলে ওই ব্লকের স্কুলগুলোর খাতা জমা পড়েছে সেখানে এসে খাতার মূল্যায়ন করে পর্ষদে পাঠিয়ে দেবেন। আবার কোনও কোনও শিক্ষকের মতে, এ বার যদি বাড়িতে বসেই নিজের স্কুলের পরীক্ষার্থীদের খাতার মূল্যায়ন করা হয়, তা হলেও দ্রুত খাতা দেখা সম্ভব।