—ফাইল চিত্র।
বর্ষব্যাপী প্রস্তুতি এবং দেশভর প্রচার শেষ। ভারতমণ্ডপমের আড়ম্বরপূর্ণ মঞ্চে জি২০ শীর্ষ বৈঠক শুরুর ষোলো ঘণ্টা আগে ভারতের দাবি, মোদীর ‘বসুধৈব কুটুম্বকমের’ নীতি ব্যর্থ হবে না। আন্তর্জাতিক কল্যাণের জন্য বিভিন্ন বিষয়ে কুড়িটি দেশের সিলমোহর অপেক্ষামাত্র।
নয়াদিল্লির দাবি, গোটা বিশ্ব যখন নতুন করে ঠান্ডা যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে চলেছে, তখন যাবতীয় ফাটল বুজিয়ে জি২০-র ‘দিল্লি ঘোষণাপত্র’ বিশ্বকে নতুন পথ দেখাবে। নয়াদিল্লির সেই ঘোষণাপত্র ‘প্রায় তৈরি’। যদিও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে বলেই সূত্রের খবর। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ভারতের ভারসাম্যের কূটনীতি দ্বিপাক্ষিক ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত ভারতকে সুবিধাজনক জায়গায় রেখেছে ঠিকই। কিন্তু বহুপাক্ষিক মঞ্চে এই নিয়ে যখন ঝগড়া প্রকাশ্যে চলে আসছে, মোদী তথা ভারত সরকার কী ভাবে তাতে ঐকমত্যের ছাপ লাগাতে পারে আগামী দু’দিনের বৈঠকে, সেটাই মুখ্য বিষয় হয়ে উঠতে চলেছে বলে ধারণা কূটনৈতিক মহলের। তবে সকলের সম্মতিতে দিল্লি ঘোষণাপত্র নিয়ে এখনও কিছুটা সংশয় থাকলেও আফ্রিকান ইউনিয়নকে জি২০-র স্থায়ী সদস্য হিসেবে মনোনয়ন নিয়ে সবাই একমত বলেই জানা গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট শিবিরের মতে, এ ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা ও সক্রিয়তা উল্লেখযোগ্য। আসন্ন সম্মেলনে গ্লোবাল সাউথ (অনুন্নত গরিব রাষ্ট্র)-এর হিতাহিতকে জি২০-র আলোচনার টেবিলে অগ্রাধিকার দেওয়ার পিছনেও রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সক্রিয়তা।
আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘এই প্রথম ভারত জি২০-র আয়োজন করল। আগামী দু’দিন বিশ্বের নেতাদের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার দিকে তাকিয়ে আছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, নয়াদিল্লির জি২০ শীর্ষ সম্মেলন সর্বাঙ্গীণ উন্নয়ন এবং মানবকেন্দ্রিক উন্নয়নের নতুন পথ নির্দেশ করবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘জি২০ সম্মেলনে একটি বিশ্ব, একটি পরিবার এবং একটি ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত অধিবেশনগুলির সভাপতিত্ব করব। বিশ্ব সম্প্রদায়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তার মধ্যে রয়েছে আরও শক্তিশালী, দীর্ঘমেয়াদী, সর্বাঙ্গীণ এবং ভারসাম্য যুক্ত আর্থিক বৃদ্ধির রাস্তা তৈরি করা।’’
তাঁর এই আহ্বানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আজ প্রগতি ময়দানে বিশেষ ভাবে তৈরি করা অত্যাধুনিক মিডিয়া সেন্টারে ভারতের জি২০-র শেরপা অমিতাভ কান্থ বলেন, ‘‘নয়াদিল্লি ঘোষণাপত্র প্রায় তৈরি হয়ে গিয়েছে। আমি এখনই এই নিয়ে কোনও মতামত দিতে চাই না। ঘোষণাপত্র নেতাদের (বিভিন্ন রাষ্ট্রের) কাছে দেওয়া হবে, নেতারা তার পরে তাতে সিলমোহর দেবেন। আর তার পরেই আমরা বলতে পারব এই সম্মেলনে কী কী অর্জন করা গিয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বসুধৈব কুটুম্বকমের নামে ভারত তার সভাপতিত্ব শুরু করেছিল। গোটা বিশ্বকেই একটি পরিবার ধরে। প্রধানমন্ত্রী মোদী জানিয়েছিলেন, ভারতের সভাপতিত্ব যেন সর্বাঙ্গীণ, উচ্চাকাঙ্ক্ষাসম্পন্ন, ফলাফল-কেন্দ্রিক এবং পদক্ষেপনির্ভর হয়। আমরা সেটাই করেছি।’’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহ কি জি২০-র যৌথ বিবৃতি এবং আলোচনায় ছায়াপাত করবে না? আজ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সামনে এই প্রশ্নের উত্তরে কান্থকে বলতে শোনা যায়, ‘‘জি২০ একটি অর্থনৈতিক মঞ্চ। অর্থনৈতিক উন্নতি এবং বৃদ্ধি এর লক্ষ্য।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘গত বছর জি২০-তে অবশ্য যুদ্ধের (ইউক্রেন) ফলে খাদ্য, জ্বালানি এবং সারের সঙ্কটের বিষয়টি সামনে এসেছিল এবং তাই আলোচনাও হয়েছিল। এ বারের বৈঠকের সময়েও সংঘাতের (ইউক্রেন) ফলে আর্থিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে আমরা এই নিয়ে নেতাদের কাছে আমাদের মতামত জানিয়েছি।’’
চিন ও রাশিয়া যৌথ বিবৃতিতে বাধা দিতে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে। বাইডেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকের মতো নেতারাও প্রকাশ্যেই এই আশঙ্কা জানিয়েছেন। চিন অবশ্য আজ নিজেদের উপর থেকে দায় ঝেড়ে ফেলার ঢংয়ে বলেছে, তারা সক্রিয় এবং গঠনমূলক ভাবেই জি২০-তে অংশ নিচ্ছে। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং আজ বলেন, ‘‘জি২০ সম্মেলনকে চিন অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখে। সেখানকার সমস্ত আলোচনায় আমরা সক্রিয় ভাবে অংশ নেব। নয়াদিল্লি ঘোষণাপত্র নিয়ে আলোচনাতে আমাদের ভূমিকা গঠনমূলকই থাকবে।’’ তবে চিন আগে থেকে ‘অতি উৎসাহ’ দেখালেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সূত্রের খবর, তারা ভারতকে যথেষ্ট পরিসর দিয়েছে যৌথ বিবৃতিতে ইউক্রেন প্রসঙ্গে কী ভাবে রাখা যায় তা স্থির করতে। কিন্তু এখনও এই প্রসঙ্গে কোনও সমাধানসূত্র পাওয়া যায়নি বলেই ঘরোয় ভাবে জানিয়েছে তারা।