আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্যের অঙ্গীকার করলেও সরাসরি সেনা পাঠানোর বার্তা দেয়নি। এই পরিস্থিতিতে প্রবল চাপের মুখে প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির সরকার ভারতের মতো ‘রাশিয়ার পুরনো বন্ধুরাষ্ট্রের’ সাহায্য চেয়েছেন বলে কূটনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রুশ সেনার হামলা ঠেকাতে এ বার ভারতের দ্বারস্থ হল ইউক্রেন। নয়াদিল্লিতে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ইগর পোলিখা বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে শান্তি ফেরাতে মধ্যস্থতা করার আবেদন জানিয়েছেন। অবিলম্বে শান্তি আলোচনা চালাতে যুযুধান দুই দেশের সঙ্গে মোদীকে যোগাযোগ করার অনুরোধও করেন তিনি।
ইগর বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা ভারতের সাহায্য চাইছি। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্কট নিয়ন্ত্রণে নয়াদিল্লি আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারে। আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অবিলম্বে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং আমাদের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করছি। মোদিজি বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী নেতা।’’
বৃহস্পতিবার ভোরে পুতিনের যুদ্ধ ঘোষণার পরেই ইউক্রেন সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় স্থল এবং আকাশপথে আঘাত হেনেছে রুশ বাহিনী। রাজধানী কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। খারকীভ শহরের অদূরে অবতরণ করেছে রুশ ছত্রীসেনা। উপকূলবর্তী মারিউপোল এবং ওডেসা শহরে রুশ নৌবাহিনীর ‘অ্যাম্ফিবিয়ান ল্যান্ডিং ভেহিকল’ থেকেও সেনা অবতরণ শুরু হয়েছে। আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্যের অঙ্গীকার করলেও সরাসরি সেনা পাঠানোর বার্তা দেয়নি। এই পরিস্থিতিতে প্রবল চাপের মুখে জেলেনস্কি সরকার ভারতের মতো ‘রাশিয়ার পুরনো বন্ধুরাষ্ট্রের’ সাহায্য চেয়েছেন বলে কূটনৈতিক মহলের ধারণা।
সোমবার রাতে ইউক্রেনের ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে (যাদের একত্রে ডনবাস বলা হয়) স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। তার পরেই রাষ্ট্রপুঞ্জ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে অস্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র ভারতের তরফে ‘গঠনমূলক কূটনীতি’র পথে উত্তেজনা প্রশমনের আবেদন জানানো হয়। বুধবার ভারতের ওই অবস্থানকে স্বাগত জানান, নয়াদিল্লিতে পুতিন সরকারের দূত (চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স) রোমান বাবুশকিন।
এই আবহে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার ফের রাষ্ট্রপুঞ্জে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। পুতিনের সামরিক অভিযানের ঘোষণার পরেই নিরাপত্তা পরিষদের ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টি এস তিরুমূর্তি বলেন, ‘‘দু’দিন আগে নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠক করেছিল এবং পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছিল। আমরা দ্রুত উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছিলাম এবং পরিস্থিতি সম্পর্কিত সমস্ত সমস্যা মোকাবিলায় কার্যকরী এবং যুক্তিগ্রাহ্য কূটনীতির উপর জোর দিয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের সাম্প্রতিক উদ্যোগে সাড়া মেলেনি।’’