বিবিসি নিয়ে কঠোর অবস্থান নিতে চলেছে ইংল্যান্ড। — ফাইল ছবি।
৫৯ ঘণ্টা ধরে একটানা আয়কর ‘সমীক্ষা’র পর কেটে গিয়েছে এক সপ্তাহ। এ বিষয়ে স্পষ্ট বিবৃতি এল ব্রিটেনের তরফে। ব্রিটেনের পার্লামেন্টে এ বিষয়ে আলোচনার সময় স্পষ্ট করে ঋষি সুনকের সরকার জানিয়ে দিল, সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকীয় স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তা খর্ব হয় এমন কোনও কাজ করা উচিত না।
মঙ্গলবার ব্রিটেনের পার্লামেন্টে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সেখানেই সুনকের সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, বিবিসিতে ভারতের আয়কর দফতরের হানার বিষয়টি নিয়ে সে দেশের সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। কারণ ব্রিটেনের সরকার মনে করে, সংবাদমাধ্যমের ক্ষেত্রে সম্পাদকীয় স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এবং ইংল্যান্ড তার সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে গর্বিত।
অধিবেশনে টোরি এমপি ডেভিড রুটলি বলেন, ‘‘আমরা বিবিসির পক্ষে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের অর্থেই বিবিসি চলে। আমরা মনে করি, বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। আমরা চাই, বিবিসির সম্পাদকীয় স্বাধীনতা যেন খর্ব না হয়।’’ তার পরেই ডেভিডের সংযোজন, ‘‘স্বাধীনতা কথাটি এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবং এই কথাটি আমরা আমাদের বন্ধু ভারতকেও জানাতে চাই।’’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, সেই সময় গুজরাতে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছিল। সম্প্রতি তা নিয়ে দু’টি পর্বের একটি তথ্যচিত্র তৈরি করে বিবিসি। যার প্রথম পর্বটি দেশে সম্প্রচার নিষিদ্ধ করে মোদী সরকার। তা নিয়ে ব্যাপক চাপান-উতোর শুরু হয় দেশে। আঁচ পড়ে বহির্বিশ্বেও। ঘটনার এক সপ্তাহ পর তা নিয়েই আলোচনায় সরগরম হয়ে উঠল ব্রিটেনের পার্লামেন্ট ভবন। ইংল্যান্ডের প্রথম পাগড়ি পরিহিত শিখ এমপি তনমনজিৎ সিংহ ঢেসির বক্তব্যেও উঠে আসে বিবিসির দিল্লি ও মুম্বইয়ের অফিসে ৫৯ ঘণ্টা তল্লাশির প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ‘‘ইংল্যান্ডে আমরা অত্যন্ত গর্বিত অনুভব করি আমাদের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে। যে ভাবে বিবিসি বা অন্যান্য নামী সংবাদমাধ্যম ইংল্যান্ডের সরকার, তার প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদের সমালোচনা করে তার পরেও আমরা এই পথ থেকে সরে আসার কথা ভাবিনি।’’ তিনি বলেন, ‘‘এই কারণেই আমরা আরও বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েছি। কারণ, একটি তথ্যচিত্র তৈরির পরই এই আয়কর হানা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।’’
গত সপ্তাহে বিবিসির দিল্লি ও মুম্বইয়ের অফিসে এক টানা ৫৯ ঘণ্টা তল্লাশি অভিযান চালায় ভারতের আয়কর দফতর। ভারতীয় কর কর্তৃপক্ষের দাবি, করছাড় বিষয়ক নানা বেনিয়ম করেছে বিবিসি। সেই সূত্রেই একটানা অভিযান। যদিও আয়কর দফতর একে এক বারও অভিযান বলে চিহ্নিত করেনি। তারা শুরু থেকেই একে আয়কর ‘সমীক্ষা’ হিসাবেই অভিহিত করে গিয়েছে। যদিও ব্রিটেনের পার্লামেন্টে সমীক্ষা নয়, পুরোদস্তুর তল্লাশি অভিযানের কথা নিয়েই আলোচনা হয়েছে।