চরকা কাটছেন প্রাক্তন পাক বিদেশমন্ত্রী খুরশিদ মাহমুদ কাসুরি। রয়েছেন সুধীন্দ্র কুলকার্নিও। মঙ্গলবার মুম্বইয়ের মণি ভবনে। ছবি: পিটিআই।
যারা সুধীন্দ্র কুলকার্নিকে কালি লেপে দিয়েছিলেন, আজ সেই ছয় শিবসৈনিককে নিজের বাড়ি মাতশ্রী-তে ডেকে পিঠ চাপড়ে দিলেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। দলের মুখপত্র ‘সামনা’ এদের দেশপ্রেমিক আখ্যা দিয়েছে। আর কুলকার্নিকে বলেছে পাকিস্তানের দালাল। আজমল কসাবের সঙ্গে তুলনা টানা হয়েছে তাঁর। জবাব দিয়েছেন কুলকার্নিও। বলেছেন, পাকিস্তানের নয়, আমি শান্তির দালাল।
চড়া সুরের মধ্যে সুযোগ বুঝে মাঠে নেমে পড়েছে পাকিস্তান। গুলাম আলির ঘটনার পরে আবার একটি সুযোগ এসে গিয়েছে তাদের সামনে। কুলকার্নি কালি কাণ্ডে ইসলামাবাদের মন্তব্য, ‘‘পাকিস্তানের বিখ্যাত মানুষেরা ভারতে গিয়ে কোনও অনুষ্ঠান করতে চাইলে, তা ভেস্তে দেওয়ার যে চেষ্টা হচ্ছে, সেটা উদ্বেগের।’’ তবে ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলতে পাকিস্তানের এই চেষ্টা সত্ত্বেও সরকারি ভাবে নয়াদিল্লির তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। যদিও বিদেশ মন্ত্রকের এক জন শীর্ষস্থানীয় অফিসারের মন্তব্য, পাকিস্তান এমন ভাবে কথা বলছে, যেন তারা নিজেরা সহনশীলতা আর বহুত্ববাদের প্রতীক! এ সব ব্যাপারে পাকিস্তানের থেকে পরামর্শ প্রয়োজন নেই ভারতের। যদি ভারতের মধ্যে কোনও কিছুর অভাব থেকে
যায়, আমরা নিজেরাই তা মিটিয়ে নিতে পারব।’’
কূটনীতির টেবিলে ভারত-পাক টানাপড়েন নতুন কোনও ঘটনাই নয়। বরং নতুন ঘটনা ঘটেছে রাজনীতির ময়দানে। শিবসেনা-বিজেপির সম্পর্কের টানাপড়েন এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে মহারাষ্ট্রের কল্যানে পুরসভার আসন্ন ভোটে আলাদা ভাবে লড়তে চলেছে বিজেপি ও শিবসেনা। মহারাষ্ট্র সরকারের শরিক শিবসেনা। দু’পক্ষের সম্পর্কের জটিলতা আরও বাড়িয়েছে কালি লেপার ঘটনা। রাজ্যের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবীস কালি কাণ্ডে রাজ্যের সম্মান নষ্ট হয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। এর পরেই কাল রাতে ছয় শিবসৈনিককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আজ তারা জামিন পাওয়ার পরেই উদ্ধব তাদের সঙ্গে দেখা করে বলেন, ‘‘তোমরা দারুণ কাজ করেছো।’’ সেনা মুখপত্রে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও লেখা হয়েছে। মন্তব্য করা হয়েছে, ফডনবীস মহারাষ্ট্রকে বুঝতে পারেননি বলেই তিনি রাজ্যের সম্মানহানির কথা বলেছেন। মহারাষ্ট্রে বিজেপি এখন শরদ পওয়ারের সঙ্গে নতুন করে বন্ধুত্ব পাতাবেন কিনা, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
কালি লেপার ঘটনার পরে আজ প্রাক্তন পাক বিদেশমন্ত্রী খুরশিদ মাহমুদ কাসুরিকে নিয়ে কুলকার্নি মুম্বইয়ে মহাত্মা গাঁধীর স্মৃতি বিজড়িত মণি ভবনে গিয়ে চরকা কেটেছেন। আর সামনায় শিবসেনা বলেছে, ভারতের সার্বভৌমত্বে আসল চ্যালেঞ্জ কুলকার্নির মতো মানুষদের থেকেই। যদি তার মতো মানুষ এ দেশে থাকেন, তা হলে জঙ্গি আজমল কসাবের মতো কাউকে পাঠানোর দরকার নেই।